Friday, May 6

বিখ্যাত চার বিজ্ঞানীর মজার কাণ্ড


নাসরুল্লাহ্ মাসুদ, অতিথি লেখক: বিজ্ঞানের অগ্রগতির জন্যই আজ আমরা সভ্য ও উন্নত জীবনযাপন করছি। বিজ্ঞানের এই অগ্রগতির মূল কারিগর হচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন খ্যাতনামা বিজ্ঞানীর আবির্ভাব ঘটে এই পৃথিবীতে। তাদের হাজার বছরের পরিশ্রম, চিন্তা, গবেষণা, পরীক্ষণের ফলে আমরা পেয়েছি আধুনিক, আরামপ্রদ ও বাসযোগ্য এই পৃথিবী। তাই তাদের প্রতি আমরা চিরকৃতজ্ঞ। তবে বিজ্ঞানীরাও রক্ত মাংসে গড়া সাধারণ মানুষ ছিলেন। তাদের মনেও ছিল বিভিন্ন ধরনের বিশ্বাস, ধারণা ও কুসংস্কার। যেগুলো ছিল বিচিত্র, অদ্ভুত, এমনকি হাস্যকর। বিশ্বখ্যাত তিনজন বিজ্ঞানীদের তেমনই কিছু মজার গল্প আজ আমরা জানব। অলিভার হেভিসাইড অলিভার হেভিসাইড ছিলেন বৃটিশ গণিতবিদ ও তড়িৎ প্রকৌশলী। তিনি গণিতের ডিফারেন্সিয়াল সমীকরণ ও জটিল তড়িৎ বর্তনী সমাধানের কৌশল আবিষ্কার করেন। কিন্তু এই স্বশিক্ষিত মেধাবী মানুষটিকে তার এক বন্ধু ‘পাগল’ বলে আখ্যায়িত করেন। অবশ্য এর যথেষ্ট কারণও ছিল। তিনি বড় বড় গ্রানাইট খন্ড তার বাড়ির আসবাবপত্র হিসেবে ব্যবহার করতেন। তিনি নখে গাঢ় গোলাপী রঙ করতেন। এছাড়াও শুধুমাত্র দুধ খেয়ে পুরো দিন অতিবাহিত করতেন। অনেকের ধারণা, তিনি সম্ভবত হাইপারগ্রাফিয়াতেও (মস্তিষ্কের এমন এক ধরনের অসুখ যা মানুষের মাঝে লেখার জন্য অপ্রতিরোধ্য আবেগ তৈরি করে) ভুগতেন । বাকমিনস্টার ফুলার বাকমিনস্টার ফুলার ছিলেন একজন স্থাপত্যবিদ ও বিজ্ঞানী। তিনি জিওডেস্টিক (একটি গোলক বা অন্য কোন বাঁকা পৃষ্ঠের উপর বিদ্যমান দুটো বিন্দুর মধ্যে সম্ভাব্য সবচেয়ে কম দুরত্বের লাইন) গম্বুজের স্রষ্টা। তিনিই সর্বপ্রথম ভবিষ্যৎ আধুনিক উন্নত শহর নিয়ে মতবাদ দেন। এছাড়াও ১৯৩০ সালে ডাইম্যাক্সিওন নামে এক ধরনের গাড়ি তৈরি করেন। কিন্তু ফুলার একটু অদ্ভুত স্বভাবের ছিলেন। তিনি সবসময় তিনটি ঘড়ি পরতেন এবং ঘড়িগুলো বিভিন্ন অঞ্চলের সময় প্রদর্শন করত। ফুলার ভ্রমণকালে বিভিন্ন অঞ্চলের সময় জানতে এই পদ্ধতি ব্যবহার করতেন। এছাড়াও তিনি দিনে মাত্র ২ ঘণ্টা করে ঘুমাতেন। পরে অবশ্য তার সহযোগীরা এতে অস্বস্তি বোধ করায় তিনি এই অভ্যাস ত্যাগ করেন। এছাড়াও তিনি তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত লিপিবদ্ধ রাখার চেষ্টা করতেন। ১৯১৫ থেকে ১৯৮৩ সালে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত সংরক্ষিত একটি দীর্ঘ ডায়রি তার সঙ্গে রাখতেন। ডায়রিতে কমপক্ষে ১৫ মিনিট অন্তর তার জীবন সম্পর্কে নতুন কোন অভিজ্ঞতার কথা লিখে রাখতেন। এই ডায়রির উচ্চতা ছিল ২৭০ ফুট বা ৮২ মিটার। বর্তমানে এটি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুরক্ষিত আছে। পল এর্ডোস হাঙ্গেরিয়ার অধিবাসী পল এর্ডোস একজন বিখ্যাত সংখ্যাতত্ত্ববিদ ছিলেন। তিনি গণিত বিষয়ে প্রায় ১৫০০টি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। তিনি দিনে ১৯-২০ ঘণ্টা গণিত নিয়ে গবেষণা করতেন। তার কাজে এতটাই মনোনিবেশ করেন যে তিনি কখনও বিয়েই করেননি। এমনকি তার নিজস্ব কোন বাড়িও ছিল না। তার চলার পথের সঙ্গী ছিল শুধুমাত্র একটি স্যুটকেস, যেখানে তার সমস্ত গবেষণাপত্র, পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ সংরক্ষিত থাকত। তিনি মাঝে মাঝে কোন কিছু না বলেই তার সহকর্মীদের বাসায় চলে যেতেন। গিয়ে বলতেন,‘আমি কোন কিছু মনে রাখতে পারি না’। সেখানে তিনি ২-৩ দিন অবস্থান করতেন এবং অনেক সময না বলেই চলে যেতেন। নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে কাজ করার জন্য তিনি অধিক হারে কফি পান করতেন। এছাড়াও রাতে জেগে থাকার জন্য তিনি নিদ্রানাশক ঔষধ (ক্যাফেইন, অ্যাম্ফেটামিন)ব্যবহার করতেন। রিচার্ড ফেইনম্যান রিচার্ড ফেইনম্যান বিংশ শতাব্দীর একজন অন্যতম খ্যাতনামা পদার্থবিদ ছিলেন। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক বোমা তৈরির গোপন প্রকল্পের (ম্যানহাটান প্রজেক্ট) সাথে জড়িত ছিলেন। কিন্তু তিনি অবসর সময়ে হাসি ঠাট্টা ও বিভিন্ন ধরনের দুষ্টুমি এবং অপকর্ম করতে পছন্দ করতেন। লস অ্যালমাসে ম্যানহাটান প্রজেক্টে কাজ করতে গিয়ে তিনি একবার বিরক্ত হয়ে যান। যখন অবসর পেলেন, তখন তিনি হাতে তালা নিলেন ও কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে সেটি দিয়ে একটি লোহার সিন্দুক ভেঙ্গে ফেললেন। তিনি মূলত বোঝাতে চেয়েছিলেন, মানুষের সৃষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা কতটা ঠুনকো হতে পারে। এছাড়াও তার জীবনের আরও অনেক বৈচিত্র্যময় ঘটনা আছে। কোয়ান্টাম তড়িৎগতিবিজ্ঞানে তার নোবেলজয়ী তত্ত্ব নিয়ে গবেষণা চলাকালীন তিনি লাস ভেগাসে সার্কাস দলের নর্তকীদের নিয়ে ঘুরতে যেতেন। সেখানে তিনি মায়ান ভাষায় (মায়া অধিবাসীদের ভাষা) দক্ষতা অর্জন করেন। এছাড়াও মঙ্গোলিয়ার এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী গান (টুভান থ্রোট সিঙ্গিং) শেখেন। এছাড়াও ১৯৮৬ সালে তিনি ‘একটি রাবারের তৈরি ‘O’ আকৃতির রিংয়ের দ্বারা কিভাবে চ্যালেঞ্জার নামক মহাশূন্যযান্যে বিস্ফোরণ ঘটেছিল’, এর সঠিক ব্যাখ্যা প্রদান করেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়