ওয়ালি উল্লাহ সিরাজ
:আল্লাহপাক মানুষকে সৃষ্টি করেছেন এবং তাদেরকে সমগ্র মাখলুকের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। সাথে সাথে আল্লাহপাক নারী ও পুরুষ হিসেবে মানবজাতির শ্রেণী বিন্যাস করেছেন। মানুষকে একই আত্মা থেকে সৃষ্টি করলেও তিনি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আল্লাহপাক ইরশাদ করেছেন,‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের রবকে ভয় কর, যিনি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এক নফস থেকে। আর তা থেকে সৃষ্টি করেছেন তার স্ত্রীকে এবং তাদের থেকে ছড়িয়ে দিয়েছেন বহু পুরুষ ও নারী। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যার মাধ্যমে তোমরা একে অপরের কাছে চেয়ে থাক। আর ভয় কর রক্ত-সম্পর্কিত আত্মীয়ের ব্যাপারে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর পর্যবেক্ষক’।
আল্লাহপাক মানব জাতিকে সৃষ্টি করার পর নারী ও পুরুষ উভয়কে কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। নারী যেমন কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, অনুরূপ পুরুষের ও রয়েছে কিছু স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য। নারী ও পুরুষের বৈশিষ্টগত পার্থক্যটা অনেকটাই সৃষ্টিগত; যা আমরা কেউ অস্বীকার করতে পারি না। আর কিছু পার্থক্য আছে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে। নারীদের দায়িত্ব ও পুরুষের দায়িত্ব কখনো এক নয়। একজন পুরুষ যে দায়িত্ব পালন করতে পারে, নারীরা তা পারে না। আবার একজন নারী যে কাজ করতে পারে, একজন পরুষ তা করতে পারে না। নারীর জন্য সন্তান লালন-পালন, স্বামীর খেদমত, বাড়ির ঘরের রান্না-বান্না ইত্যাদি কর্মই হল শোভনীয়। আর পুরুষের জন্য খেত-খামার, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি শোভনীয়। তাই নারীর উচিৎ ঘরে থাকা। ঘরের কাজ করা। প্রয়োজন হলে অবশ্যই বের হবে। তবে পর্দার করে বের হবে।
ইসলাম ধর্মে শুধু নারী উপর পর্দা ফরজ করেনি। বরং নারী ও পুরুষ উভয়ের উপর বিধানাবলী সমানভাবে ফরজ করেছে। আল্লাহপাক পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেছেন,‘হে বনী আদম! তোমাদের শরীরের লজ্জাস্থানগুলো ঢাকার এবং তোমাদের দেহের সংরক্ষণ ও সৌন্দর্য বিধানের উদ্দেশ্যে আমি তোমাদের জন্য পোশাক নাযিল করেছি। আর তাকওয়ার পোশাকই সর্বোত্তম। এটি আল্লাহর নিদর্শনগুলোর অন্যতম, সম্ভবত লোকেরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।’-(আরাফ:২৬) এই আয়াতে আল্লাহ শুধু পুরুষদেরকে তাদের লজ্জাস্থান ডেকে রাখার কথা বলেননি। রবং নারী পুরুষ উভয়কে তাদের লাজ্জাস্থান ডেকে রাখতে বলেছেন। সুতরাং পর্দা শুধু নারীর উপর ফরজ নায়। আল্লাহপাকের এই বিধান নারী পুরুষ সকলের উপর ফরজ। আমাদের সমাজে ধর্মীয় গোঁড়ামি, অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের কারণে নারীদের পুরুষের চাপিয়ে দেওয়া অনেক বিধানের যাঁতাকলে পৃষ্ঠ হতে হয়। যদিও শরিয়তের ওই বিধানাবরী পুরুষের জন্যও প্রযোজ্য। ইসলামের এমনই একটি অবশ্যপালনীয় বিধান হলো পর্দা, যা নারী-পুরুষ উভয়ের ওপর আরোপিত হয়েছে। কিন্তু যুগে যুগে এই পর্দাপ্রথা নারীর ওপর কঠোরভাবে পালনের নামে নারীকে বস্তুত কারাগারের ন্যায় অন্ধকার জীবনযাপনে বাধ্য করা হয়েছে।
সুতরাং যদি এই পর্দার বিধানাবলী নারীর পাশাপাশি পুরুষও যথাযথভাবে পালন করে, তবে সর্বত্র নারী নিরাপদে চলাফেরা করতে পারবে। বলে রাখা ভালো, পর্দার বিধান কিছু ক্ষেত্রে শিথিল করা হয়েছে। যেমন- ডাক্তার রোগীকে দেখার স্বার্থে তার মুখমণ্ডল শুধু নয়, প্রয়োজন হলে সতরও দেখতে পারবে। পরিশেষে, পুরুষের ওপর অর্পিত শরিয়তের পর্দার বিধানাবলী যদি পুরুষ যথাযথভাবে মেনে চলে; তাহলে নারীকে পর্দাপ্রথার নামে ঘরে বন্দি করে রাখার প্রয়োজন হবে না। আর যদি এমনটি সম্ভব হয়, তবে সমাজে অনাচার- বিশেষ করে বর্তমান সময়ে আলোচিত যৌন হয়রানির জন্য আলাদা কোনো আইন প্রণয়নের আবশ্যকতা থাকবে না। কারণ ধর্মের বিধান অনুসারে পুরুষরা পথ-ঘাট এবং কর্মক্ষেত্রে দৃষ্টি সংযত রেখে চলাফেরা করবে। আর এর মাধ্যমে নারী নিরাপদ থাকবে। বস্তুত, পুরুষ যদি শরিয়ত মেনে পর্দা পালন করে; তবে সর্বদা নারী থাকবে নিরাপদ।
লেখক: আলেম ও গণমাধ্যমকর্মী
খবর বিভাগঃ
ইসলাম
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়