কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
নৃত্যশিল্পী সুবর্ণা সাহার মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন সর্বত্র। সুবর্ণার কেন এই পরিণতি তা নিয়ে জল্পনার অন্ত নেই সিলেটে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। আড়ালে কোনো ঘটনা আছে কিনা সেটিও অজানা। পরিবারের সবাই শোকাহত। সুবর্ণা সাহার বয়স ত্রিশের কাছাকাছি। ব্যক্তিগত জীবনে অনেকখানি সফল তিনি। সংস্কৃতি অঙ্গনের পরিচিত মুখ। সিলেটের নৃত্যশৈলী সংগঠনের একজন সংগঠক। এই সংগঠনকে অনেকটা এগিয়ে নিয়েছেন নিজের দক্ষতার গুণে। পাশাপাশি সুবর্ণা ছিলেন সিলেটের খাজাঞ্চিবাড়ি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষিকা। এর আগে সুবর্ণা সাহা সিলেটের পুলিশ লাইন উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন।
মা মমতা সাহাও পেশায় শিক্ষক। তিনি সিলেটের দাড়িপাড়াস্থ রসময় উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। এখন অবসরে আছেন। বাবা সুধাকর সাহা কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। এরপর থেকে মাকে নিয়েই ছিল সুবর্ণার সংসার। তাদের বাড়ি সিলেট নগরীর কাজলশাহর ৫২-৩ নম্বর বাসা।
দুই বোনের মধ্যে সুবর্ণা সাহা ছোট। বড় বোন সুবনা সাহার বিয়ে হয়ে গেছে। গত বুধবার সন্ধ্যায় মা মমতা হঠাৎ দেখেন ঘরের ভেতরে সিলিং ফ্যানের সঙ্গে সুবর্ণার লাশ ঝুলছে। চিৎকার করে ওঠেন। এ সময় ছুটে আসেন আশপাশের লোকজন। পুলিশ এসে তার ঝুলন্ত অবস্থায় লাশ উদ্ধার করে।
খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান সিলেটের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের লোকজন। তারাও কান্নায় ভেঙে পড়েন। সুবর্ণা আত্মহত্যা করবেন সেটি তারা স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, সুবর্ণার সঙ্গে পারিবারিকভাবে কোনো বিরোধ ছিল না। তবে সম্প্রতি তারা বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিলেন। এমনকি তারা বলেছিলেন নিজের পছন্দ থাকলে বিয়ে করে নিতে। কখনো তার মতের বাইরে কেউ যায়নি।
এছাড়া তার সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে কেউ কখনো বাধা হয়ে দাঁড়াননি। মা মমতা সাহা বলেন, বুধবার বিকালে তিনি বড় মেয়েকে দেখতে তার বাসায় যান। ঘটনার সময় ওই বাসাতেই ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন সুবর্ণা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলে আছেন।
বড় বোন সুমনা জানান, বুধবার সকালে সে মাকে নিয়ে নগরীর ক্লিনিকে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি মা’কে ডাক্তার দেখানোর পর নিজেও ডাক্তার দেখান।
সহপাঠীরা জানিয়েছেন, কয়েক দিন ধরে সুবর্ণা নিজের জীবন নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন। বন্ধুদের জানিয়েছিলেন এ জীবন তার ভালো লাগে না। এ নিয়ে কিছুটা হতাশায় ভুগছিলেন তিনি। তবে এটি যে মৃত্যুর পর্যায়ে চলে যাবে সেটি তারা কল্পনা করতে পারেননি।
সহপাঠীরা জানিয়েছেন, সুবর্ণার প্রেম ছিল তার কলেজ জীবনের এক সহপাঠীর সঙ্গে। ওই সহপাঠীও সিলেটের একটি বিদ্যাপীঠের শিক্ষক। সম্প্রতি ওই যুবক সরকারি চাকরি পেয়েছেন। এরপর থেকে তিনি সুবর্ণাকে এড়িয়ে চলছিলেন। এসব বিষয় নিয়ে সুবর্ণা কিছুটা বিপর্যস্ত ছিলেন। তবে পরিবারের কাছে এসব বিষয় জানাননি।
এদিকে, লাশের ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল দুপুর ২টায় সিলেটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয় সুবর্ণার মরদেহ। এ সময় তার লাশে শেষ শ্রদ্ধা জানান সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সহপাঠীরা। তারা বলেন, সুবর্ণার মৃত্যু সবাইকে কাঁদিয়ে গেছে।
বিকাল ৪টায় লাশ নিয়ে যাওয়া হয় সিলেটের শ্মশানঘাটে। সিলেটের কোতোয়ালি থানার ওসি সোহেল আহমদ জানিয়েছেন, সুবর্ণার মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্ত করেছে।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়