Thursday, March 3

‘ঠান্ডা মাথায় দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন মাহফুজা’

‘ঠান্ডা মাথায় দুই সন্তানকে হত্যা করেছেন মাহফুজা’

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:: রামপুরা বনশ্রী এলাকায় চাঞ্চল্যকর দুই শিশু ভাই-বোন হত্যা ঘটনায় হত্যাকারী মা মাহফুজা গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে সন্তানদের হত্যা করেছেন। বৃহস্পতিবার দুপুরে র‌্যাবের সদর দপ্তরে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সাড়ে পাঁচটার সময় বনশ্রী এলাকায় নুসরাত আমান অরনী এবং আলভী আমানের রহস্যজনক মৃত্যু হয়। তাদের বাবা আমানউল্লাহ গার্মেন্টস এক্সেসরিজ ব্যবসায়ী এবং মা বেগম মাহফুজা মালেক গৃহিনী। তারা গত বছরের অক্টোবর মাস থেকে বনশ্রী, রামপুরা, ব্লক-বি, রোড নম্বর-৪, বাসা নম্বর- ৯ এ অবস্থান করে আসছেন। নুসরাত আমান অরনী ভিকারুন্নেসানুন স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীতে এবং ছোট ভাই আলভি আমান হলি ক্রিসেন্ট ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজের নার্সারীতে পড়তো।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, প্রাথমিকভাবে মা বেগম মাহফুজা মালেকের ভাষ্যমতে, গত ২৮ ফেব্রুয়ারি তাদের বিবাহ বাষির্কী ছিল। এ উপলক্ষে পরিবারের সকলে বনশ্রীর ক্যান্ট চাইনিজ রেষ্টুরেন্টে রাতের খাবার খেতে যায় এবং খাওয়ার পর অবশিষ্ট খাবার সাথে করে নিয়ে বাসায় আসেন। এরপর ২৯ ফেব্রুয়ারি অরনী ও আলভী দুপুরে স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পর রাতে রেষ্টুরেন্ট হতে আনা অবশিষ্ট খাবার খেয়ে ঘুমাতে যায়। ওই দিন বিকালে তাদের মা ডাকাডাকির পর শিশু দুটি ঘুম থেকে না উঠায় পরিবারের সদস্যদের মোবাইলে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি দাবী করেন যে, রেষ্টুরেন্টের খাবার খেয়ে বিষক্রিয়া জনিত কারণে তার সন্তানদের মৃত্যু হয়েছে।

শিশু দুটিকে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানের জন্য আল রাজী হাসপাতাল, বনশ্রীতে নিয়ে যান নিহতদের বাবার বন্ধুরা। আল রাজী হাসপাতাল হতে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।

অপমৃত্যুর কারণে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত দেহ দুইটি ময়না তদন্ত করার জন্য পাঠায়।

র‌্যাবের পরিচালক আরো বলেন, গত পহেলা মার্চ শিশু দুইটি’র লাশসহ পিতা-মাতা তাদের গ্রামের বাড়ী জামালপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন। পরে ময়না তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী শিশু দুইটিকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রমাণিত হয়।

ময়না তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ রাজধানীর বিভিন্ন জায়গা থেকে ঘটনার সঠিক রহস্য উদঘাটনের জন্য শিশু দুইটির গৃহ শিক্ষিকা শিউলি আক্তার, খালু নজরুল ইসলামের ভাগনে শাহিন, মেয়ের মার মামাতো ভাই মো. ওবায়দুর ইসলাম, বাসার দারোয়ান পিন্টু মন্ডল ও অপর দারোয়ান ফেরদৌসকে (২৮) জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়।

কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান আরো বলেন, জামালপুর থেকে মৃত শিশুদের পিতা-মাতা ও খালাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে জানা যায় যে, মৃত শিশু দুইটির মা বেগম মাহফুজা মালেক সর্বদা তার সন্তানদের স্কুলের পরীক্ষার ফলাফল এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তাযুক্ত থাকতেন। বেগম মাহফুজার ধারণা ছিল, তার সন্তানেরা বড় হয়ে কিছুই করতে পারবে না।

র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন,  জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায় মা বেগম মাহফুজা গত ২৯ ফেব্রুয়ারি মেয়ে অরনীর গৃহ শিক্ষিকা চলে যাবার পর অরনী তার বাবা-মায়ের বেড রুমে বিকাল পাঁচটার সময় ঘুমাতে যায়। তখন বাসায় বৃদ্ধা দাদী, দুই ভাই-বোন ও মা মাহফুজা উপস্থিত ছিলেন। একই সময়ে আলভি আমান বেড রুমের বিছানাতেই ঘুমাচ্ছিল। মা মাহফুজাও ছেলের সাথে একই বিছানায় শুয়ে ছিল। অরনী মায়ের সাথে ঘুমানোর জন্য বিছানায় শোয়ার কিছু সময় পর মা মাহফুজা তার মেয়ে অরনীকে ওড়না দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে উভয়েই বিছানা থেকে মেঝেতে পড়ে যায়। কিছু সময় পর মেয়ের শরীর নিস্তেজ হয়ে গেলে তিনি তার ছোট ছেলে আলভিকে খাটের উপর ঘুমন্ত অবস্থায় একইভাবে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন।

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, হত্যাকাণ্ডের পরপরই নিজেকে বাঁচানোর জন্য প্রথমে ফোন করে তার স্বামীকে ছেলে মেয়ে কেমন জানি করছে বলে অবহিত করেন। পরে স্বামীর বাসায় ফিরতে দেরী হবে জেনে তার মা ও নিজ বোন মিলাকে ফোন করে বিষয়টি জানান। তিনি তাদের বলেন যে, দুপুরে খাবার খেয়ে ঘুমানোর পর তার সন্তানরা আর ঘুম থেকে উঠেনি এবং তিনি পূর্বের দিন রাতে আনা খাবারের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে সকলকে জানান।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়