Thursday, March 3

অ্যাসপারাগাসের পুষ্টিমান বা উপকারিতা

অ্যাসপারাগাসের পুষ্টিমান বা উপকারিতা
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: অ্যাসপারাগাস লিলি গোত্রের বহু বর্ষজীবী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। আমাদের দেশে এর ব্যবহার নতুন হলেও ইউরোপ আমেরিকাসহ জাপান, চীন ও কোরিয়ায় বহুল ব্যবহৃত একটি জনপ্রিয় সবজি।

খাবারের আগে অ্যাপিটাইজার হিসেবে, কখনো বা স্যুপে ব্যবহৃত হয় আ্যাসপ্যারাগাস। পশ্চিমা বিশ্বের হোটেল রেস্তোরাঁগুলোতে হালকা চিকেন বা টুনাফিস স্লাইসসহ অ্যাসপারাগাস সালাদ খুবই প্রচলিত। জাপানে মেয়োনেজমিশ্রিত আলুভর্তায় অ্যাসপারাগাস ব্যবহার খুবই কমন। তবে ফ্রাইপ্যানে হালকা তেলে ভেজে বা ভাঁপে সিদ্ধ করে অ্যাসপারাগাস সহজেই খাওয়া যায়। উন্নত বিশ্বে প্রতি বেলার খাবার মেনুতে অ্যাসপারাগাস খুবই কমন তবে পরিবেশন পদ্ধতিতে ভিন্নতা রয়েছে।

এর স্বাদ চমৎকার। মিষ্টি ও তেতোর মিশেল। দেখতেও আদি অকৃত্রিম ও তাজা। আর অ্যাসপারাগাস এমনই একটি খাবার যে, কেউ চাইলে এটাকে কাঁচা কিংবা রান্না করে খেতে পারবে। এছাড়া ডায়াবেটিসের বিরুদ্ধে লড়তে এটাকে একটি শক্তিশালী রন্ধন অস্ত্র বলা হয়। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ক্রমশ জনপ্রিয় সবজিটাকে নিয়মিত খেলে রক্তে চিনির মাত্রা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং এটি একই সঙ্গে শরীরে ইনসুলিন তৈরির গতিও ত্বরান্তিত করে, যে হরমোনটি কিনা শরীরের গ্লুকোজকে শুষে নিতে পারে।

ওষুধি গুণের জন্য পশ্চিমা দেশগুলোতে অ্যাসপারাগাস বহুল সমাদৃত। অ্যাসপারাগাস মূলত, প্রোটিনসহ ভিটামিন B6, A, C, E, I, K, থায়ামিন, রিভোফ্লাভিন, রুটিন, নায়াসিন, ফলিক এসিড, আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, কপার ও ম্যাঙ্গানিজসমৃদ্ধ। অ্যাসপারাগাসে প্রচুর পরিমাণে প্লান্টপ্রোটিন হিস্টোন এবং গ্লটাথিয়ন থাকে, যা এন্টিঅক্সিডেণ্ট হিসেবে দেহের ক্ষতিকারক ফ্রিরেডিক্যালের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত কাজ করে। যা ক্যান্সার প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা রাখে এবং দেহের টনিক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া ফলিক এসিড থাকার কারণে অ্যাসপারাগাস হার্টে ব্লক সৃষ্টিতে সরাসরি বাঁধা দেয়। এজন্য হৃদরোগীদের জন্য আ্যাসপ্যারাগাস বেশ উপকারী। উচ্চতর গবেষণায় দেখা গেছে যে, মানবদেহের ত্বক ও ফুসফুসের ক্যান্সারসহ কিডনি ইনফেকশান ও পিত্তথলিতে পাথর প্রতিরোধেও অ্যাসপারাগাস উল্লেখযোগ্য কাজ করে। প্রতিদিন দুইবার ২-৩টি অ্যাসপারাগাস স্টিক খেলে ৩-৪ সপ্তাহের মাধ্যেই এসব রোগের উপশম হয়।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে অ্যাসপারাগাস তার শ্বাসপ্রক্রিয়ায় বেশ ভাল ফল দিয়েছে। কেননা, এটা উত্তোলন করার পর সঙ্গে সঙ্গে মারা যায় না। বস্তুত এটি এরপরও নিজস্ব প্রক্রিয়ায় শ্বাস-প্রশ্বাস তথা শ্বসন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে পারে, অর্থাৎ এটি অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এরপর শর্করা ও সুগারে পরিণত হয়ে পরে কার্বন ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে।

অন্যান্য সবজির সঙ্গে তুলনা করেও দেখা গেছে অ্যাসপারাগাসের শ্বাসক্রিয়া বেশ দ্রুত (যে প্রক্রিয়ায় এর ভেতর অক্সিজেন গ্রহণের ঘটনা ঘটে)। এর প্রতি ১০০ গ্রামে ৬০ মিলিগ্রাম করে কার্বন ডাই অক্সাইড নিঃসৃত হয় (৪১ ডিগ্রি ফারেনহাইট রেফ্রিজারেটর তাপমাত্রায়)। যা কিনা পেঁয়াজ ও আলুর চেয়ে পাঁচ গুণ বেশি, টমেটোর চেয়ে তিন গুণ ও ফুলকপি ও আভোকাদোর চেয়ে দ্বিগুণ বেশি। আর এর খারাপ দিকটা হলো, এই কারণেই অন্যান্য সবজির চেয়ে অ্যাসপারাগাস দ্রুত পঁচে যায়। এ জন্য পাচকদের দেখা যায় অ্যাসপারাগাসের গোড়ার দিকটা ভেজা কাপড় দিয়ে পেঁচিয়ে রাখতে। এতে করে এর স্থায়িত্ব বাড়ে। সুতরাং পরবর্তীতে আপনি যখন এই জাদুকরি লতাটি কিনবেন, খেয়াল রাখবেন যাতে কেনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই তা সাবাড় করতে পারেন।

অ্যাসপারাগাস আমাদের দেশে খুবই অপ্রচলিত হলেও এর পুষ্টিগুনের জন্যে এর প্রসার খুবই জরুরি। অ্যাসপারাগাস এখন উত্তরাঞ্চলেই চাষ হচ্ছে। বিশেষ করে বগুড়া অঞ্চলে। সেই এলাকার গৃহস্থ ও কৃষক বাড়িতে তা দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। রাজধানী ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলগুলোতে এই সবজি আসছে বগুড়া থেকে। চাহিদা অনুযায়ী অ্যাসপারাগাস সরবরাহ করা এখনও সম্ভব হচ্ছে না। তবে আশার কথা, এক জনের দেখাদেখি অন্যরা এই সবজি আবাদ করায় শিগগিরই চাহিদা পূরণ করে অ্যাসপ্যারাগাস বিদেশেও যাবে।  অ্যাসপারাগাস যেমন খাবারের পুষ্টিমান বাড়ায় তেমনি ডিস সাজানোতে আনে শৈল্পিক সৌন্দর্য কারুময়তা। নিত্যদিনের খাবার মেন্যুতে অ্যাসপারাগাস রেখে আমরা কিন্ত আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারি অনায়াসে। সংসারের প্রতিদিনের অ্যাসপারাগাস নিজেই বাড়ির আঙ্গিনায়, ব্যালকনিতে বা ছাদে বড় বড় টবেই উৎপাদন করে নেয়া যায়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়