Friday, January 15

শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে


মাওলানা আবদুর রহমান, পাকিস্তান: আল্লাহ তায়ালা মানুষকে যত নেয়ামত দান করেছেন তার মধ্যে এটিও একটি যে, আল্লাহ মানুষকে মেহনত ও পরিশ্রম করার সামর্থ্য দান করেছেন। কিন্তু মানুষ যদি তার এ পরিশ্রমকে সঠিকভাবে ব্যবহার না করে, তাহলে সে তার পরিশ্রমের ফল পেতে পারে আবার না-ও পেতে পারে। দুনিয়ার কোনো প্রয়োজনে মেহনত ও পরিশ্রম করলে প্রতিদান পাওয়ার ক্ষেত্রে সন্দেহ থেকে যায়। কিন্তু মানুষ যদি আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মেহনত করে, আল্লাহর দ্বীনের জন্য পরিশ্রম করে, আল্লাহর কাছ থেকে উপকার পাওয়ার জন্য আল্লাহর রাস্তায় মেহনত করে; সে যেখানেই যায় আল্লাহর সাহায্য পায়। যেখানেই থাকুক না কেন আল্লাহ তাকে সাহায্য করেন এবং তার প্রতি অনুগ্রহ করেন। আল্লাহর সাহায্যপ্রাপ্ত হওয়ার কারণে পৃথিবীর যেখানেই যায়, সেখানেই সফলতা লাভ করে। দুনিয়ার যেখানেই যাবে আল্লাহকে সাহায্যকারী হিসেবে পাবে। কবরে গেলেও সে আল্লাহকে পাবে। কাল কেয়ামতের কঠিন ময়দানেও সে আল্লাহকে পাবে। পুলসিরাত পার হওয়ার সময়ও সে আল্লাহকে পাবে। ফলে সে কামিয়াব ও সফল হয়ে যাবে। আমাদের অন্তরে আল্লাহর বড়ত্ব ও মহত্ত্ব আনতে হলে প্রথমে ঈমানের জন্য মেহনত করতে হবে। দাওয়াত ও তাবলিগের উদ্দেশ্য এটিই। দাওয়াত ও তাবলিগের উদ্দেশ্য হলো- আমরা যেন সেই রশিটিকে ধরতে পারি, আমরা সেই পথে উঠতে পারি, যে পথের ঠিকানা হলো 'আল্লাহ'। যে পথের শেষে গেলে আল্লাহকে পাওয়া যায়। পথের শেষে নিঃসন্দেহে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। হাদিসে আছে, আল্লাহ বলেন, 'হে আদম সন্তান! আমাকে সন্ধান করো, আমাকে পেয়ে যাবে। যদি আমাকে পেয়ে যাও, তবে তুমি সবকিছুই পেয়ে যাবে। আর আমাকে যদি না পাও, তাহলে তুমি কোনো কিছুই পাবে না। সবকিছুই তুমি হারিয়ে ফেলবে। আর আমি তোমার জন্য সবকিছুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ।' হ্যাঁ, বান্দা! তুমি আমার সন্ধানে বেরিয়ে পড়। তুমি যদি আমার সন্ধানে বেরিয়ে পড়তে পারো, তাহলে আমার ওয়াদা যে, আমি তোমার সঙ্গে মিলিত হবো। যদি আমাকে পেয়ে যাও, তাহলে তুমি দুনিয়ার সবকিছুই পেয়ে যাবে। আর যদি আমাকে না পাও তাহলে মনে রেখো! এ দুনিয়ার কোনো কিছুই তুমি পাওনি। আর এ দুনিয়ার কোনো কিছুই তোমার ব্যথা দূর করতে পারবে না। তোমার হৃদয়ের ক্ষত ভালো করতে পারবে না। তোমার অন্তরের ভূমিকে আবাদ করতে পারবে না। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর এটাই দাবি। এ কালেমার অর্থ এত ব্যাপাক যে, এর অর্থ আমরা খুব কমই বুঝতে পারি। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-এর 'লা' দুধারী তলোয়ারের মতো। এ তলোয়ার দুনিয়ার সবকিছুকে খণ্ড-বিখণ্ড করে দেয়। এ বিশ্ব কিছুই নয়। সবকিছুই আল্লাহর। এ পৃথিবীতে সৃষ্টিজগতের সবকিছুর মধ্যে দুনিয়ার কারও কোনো নির্দেশ চলে না। দুনিয়ার কোনো রাজা-বাদশাহ, মন্ত্রী-এমপির হুকুম আরোপিত হয় না। সবকিছু চলে শুধু আল্লাহরই হুকুমে। কালোমার এ 'লা'-এর অর্থ হলো না। এটা শুধু পাথর কিংবা বালুকণার ওপর 'না' এর হুকুম চালায়নি। বরং সোনা-রুপার ওপর আরোপিত করেছেন। পাহাড়-পর্বতের ওপর আরোপিত করেছেন। নদী-সাগরের ওপর আরোপিত করেছেন। দুনিয়া ও আসমানের সবকিছুর ওপর এ 'না' এর হুকুম চালিয়েছেন। সব রাজা-বাদশাহের ওপর, সব শক্তির ওপর, সব সিংহাসনের ওপর চালিয়েছেন এ 'লা'-এর হুকুম। জিবরাঈল (আ.) থেকে নিয়ে গর্তের পিপীলিকা সবার ওপর এ হুকুম চালিয়েছেন। সুতরাং পৃথিবীর কোনোকিছুই মানুষের মাবুদ নয়। কোনোকিছুর উপাসনা করা যাবে না। শুধু এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে। মানুষ আল্লাহর পক্ষ থেকে খুব সামান্য এখতিয়ার বা ক্ষমতা লাভ করেছে। এ সামান্য ক্ষমতার মাধ্যমে মানুষ কারও মৃত্যু ঠেকাতে পারে না। মানুষ তো কারও জীবন-মৃত্যুর মালিক নয়। কারও ইজ্জত-সম্মানের মালিক নয়। কারও মান-অপমানের মালিক নয়। মানুষ ইচ্ছা করলেই মরতে পারে না। মানুষের মনে চাইলেই সে কাউকে জীবনদান করতে পারে না। মানুষ এতটাই অসহায় যে, সামান্য বিষপিঁপড়ার কামড়ে সে অস্থির হয়ে যায়। সেটা সে সহ্য করতে পারে না। মানুষ মুখে বলে আল্লাহ এক, তার কোনো অংশীদার নেই। তিনি সর্বশক্তিমান। সব বাদশাহের বাদশাহ। কিন্তু বাস্তবে প্রকাশ করে ভিন্নটা। ক্ষমতার অধিকারী মনে করে রাজা-বাদশাহ, মন্ত্রী-এমপিকে। নিজের অজান্তেই আল্লাহর সঙ্গে স্বীকার করে অন্যান্য বস্তুকে। মনে করে, দোকান রিজিকদাতা, দোকানের মাধ্যমে রিজিকের ব্যবস্থা হয়। মনে করে, চাকরির কারণে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। এসবই ভুল। আল্লাহ একমাত্র রিজিকদাতা। তিনি সবাইকে রিজিক দান করেন। সব ক্ষমতার অধিকারী এবং একমাত্র মালিক আল্লাহ। মানুষ মনে করে, পার্টি কিংবা দল করলে বড় হওয়া যায়। নেতা হওয়া যায়। ক্ষমতা লাভ করা যায় এবং মানুষের ওপর কর্তৃত্ব খাটানো যায়। আসলে এসব কিছুই নয়। এসবই ক্ষণস্থায়ী। একমাত্র আল্লাহ চিরস্থায়ী, অনন্ত-অসীম। সুতরাং শুধু মুখেই 'আল্লাহু আকবার' বললেই হবে না। মুখে বলার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জীবনে বাস্তবে পরিণত করতে হবে। আল্লাহকে ভয় করতে হবে। আল্লাহর হুকুম মেনে চলতে হবে। সুতরাং আল্লাহকে মানা এবং আল্লাহর হুকুম অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করার মধ্যেই আমাদের সফলতা নিহিত। আল্লাহকে মানা এবং আল্লাহর ইবাদত করা সবই আল্লাহর দাবি। আমরা যদি আল্লাহর এ হুকুম পূরণ করতে পারি, তাহলেই আমরা সফল হবো। আল্লাহর হুকুম পূরণের ক্ষেত্রে বাড়ি পেলাম কী পেলাম না, সুনাম হলো কী বদনাম হলো, আমার উপকার হবে নাকি অপকার হবে, ধনী হতে পারবো নাকি গরিব হয়ে যাব_ কোনোটাই দেখা যাবে না। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী এসব কিছুকে তুচ্ছ মনে করে যদি আমরা আল্লাহর দাবিকে পূর্ণ করতে পারি, তাহলেই আমরা সফলকাম হয়ে যাব। আমাদের সফল হতে হলে দ্বীনের ওপর আমল করতে হবে। দ্বীন আমাদের মাঝে আনতে হলে তাবলিগে সময় দেয়ার জন্য আল্লাহর রাস্তায় বের হতে হবে। মসজিদে তালিম করতে হবে। বাড়িতেও তালিম করতে হবে। অনুলিখন : সাজ্জাদ শরীফ

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়