Sunday, January 3

উন্নত জীবনের আদর্শ


মাহমূদ হাসান: মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.) ছিলেন সব শ্রেণী-পেশার মানুষের জন্য আদর্শ। তিনি ছিলেন শিশুর আদর্শ, যুবকের আদর্শ, সৈনিকের আদর্শ, সেনাপতির আদর্শ, স্বামীর আদর্শ, বাবার আদর্শ, নানার আদর্শ, ব্যবসায়ীর আদর্শ, শিক্ষকের আদর্শ এবং রাষ্ট্রনায়কেরও আদর্শ। পৃথিবীর অন্য কোনো মহামানবের জীবনে এমন অপূর্ব দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে না। এসবের সমাহার ও সংমিশ্রণ শুধু মহানবী (সা.) এর জীনাদর্শেই বিদ্যমান। তার অনুসরণ-অনুকরণ করার মধ্যে মানবজীবনের সার্বজনীন সফলতা নিহিত। রাসুল (সা.) পৃথিবীতে আগমন করেছেন সচ্চরিত্রের বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'আমাকে সচ্চরিত্রের পূর্ণতা সাধনের নিমিত্তই প্রেরণ করা হয়েছে।' (জামেউল আহাদিস : ৬৭২৯)। পবিত্র কোরআনে মহানবীর চরিত্রকে মানবজাতির জন্য আদর্শ হিসেবে আখ্যয়িত করা হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবনে রয়েছে তোমাদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ।' (সূরা আহজাব : ২১)। রাসুলে করিম (সা.) কে সৃষ্টি করা হয়েছে সবার জন্য অনুসরণীয় ও মুক্তির কা-ারি হিসেবে। আল্লাহর ভালোবাসা প্রাপ্তিও মহানবীর পরিপূর্ণ আনুগত্য ও অনুসরণের ওপর নির্ভরশীল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেছেন, 'হে রাসুল! তুমি লোকদের বলে দাও, যদি তোমরা আল্লাহ তায়ালাকে ভালোবাস তাহলে আমার অনুসরণ করো। তবেই আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন।' (সূরা আলে ইমরান : ৩১)। রাসুল (সা.) ছিলেন সৃষ্টির সেরা মানুষ। ঐতিহাসিকরাও অকপটে স্বীকার করেছেন যে, মুহাম্মদ (সা.) সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। উম্মুল মুমিনিন আয়েশা (রা.) কে রাসুলের চরিত্র সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, 'কোরআন মজিদই হলো রাসুল (সা.) এর চরিত্র।' এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রে অধিষ্ঠিত।' (সূরা কলাম : ৪)। তার চরিত্র কত মহান তা পরিমাপ করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। ক্ষমতা ও সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি শত্রুকে ক্ষমা করে দিতেন। মক্কা বিজয়ের দিনে রাসুল (সা.) মক্কার লোকদের উদ্দেশে ঐতিহাসিক বক্তৃতায় বলেছিলেন, 'হে কোরাইশরা! তোমরা আমার কাছ থেকে আজ কেমন ব্যবহার আশা করো? তারা বলল, সম্মানিত ভাই ও ভ্রাতুষ্পুত্রের মতো! তিনি বললেন, তোমরা যাও! আজ তোমরা মুক্ত।' যারা একসময় তাকে অনেক অত্যাচার-নির্যাতন, সামাজিকভাবে বয়কট এমনকি হত্যার চেষ্টা পর্যন্ত করেছিল তিনি তাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিলেন! সহনশীলতা তার চরিত্রকে নিয়ে গিয়েছিল এক অনন্য উচ্চতায়। রাসুল (সা.) একবার সাহাবিদের সঙ্গে মসজিদে বসা ছিলেন। এমন সময় একজন বেদুইন এসে সেখানে প্রস্রাব করা শুরু করলে সাহাবিরা তাকে ধমক দিয়ে থামতে বললেন। রাসুল (সা.) বললেন, 'তাকে ছেড়ে দাও; বাধার সৃষ্টি করো না।' তারপর তিনি লোকটিকে ডেকে বললেন, 'এটা মসজিদ; এ স্থান অপবিত্রতা কিংবা প্রস্রাব-পায়খানার জন্য নয়।' অতঃপর রাসুল (সা.) কওমের একজন লোককে বললেন, তুমি পানিভর্তি একটা বালতি নিয়ে এসো। এরপর এর ওপর ঢেলে দাও। তিনি বালতিতে পানি এনে তার ওপর ঢেলে দিলেন। (মুসনাদে আহমাদ : ১২৯৮৪)। বিভিন্ন শারীরিক সমাস্যা হতে পারে এই চিন্তা থেকে রাসুল (সা.) লোকটিকে প্রস্রাবের মাঝে বাধা দিতে নিষেধ করলেন। যারা উগ্র মানসিকতাসম্পন্ন তাদের জন্য এটি একটি শিক্ষণীয় ঘটনা। ভিন্নমতাবলম্বী মানুষের সঙ্গে ইসলাম কী ব্যবহার করতে বলেছে তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এখানে বিদ্যমান। সৃষ্টিকুলের মধ্যে রাসুল (সা.) এর মতো দানবীর আর কাউকে পাওয়া যাবে না। কেউ তার কাছে কিছু চেয়েছে অথচ, তিনি তা দেননি এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। একবার তার কাছে একজন লোক এলো সাহায্য প্রার্থী হয়ে, তিনি তাকে দুই পাহাড়ের মাঝের সব বকরি দিয়ে দিলেন। অতঃপর লোকটি নিজের সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে বলল, 'হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। কেননা, মুহাম্মদ (সা.) এত বেশি পরিমাণে দান করেন যে, তিনি নিঃস্ব হয়ে যাওয়ার কোনো ভয় করেন না।' (মুসলিম : ২৩১২)। সৃষ্টির সেরা হয়েও তিনি বিলাসিতামুক্ত অত্যন্ত সাদামাটা ও অনাড়ম্বর জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। রাসুল (সা.) গাছের লতাপাতা দিয়ে তৈরি করা বিছানায় ঘুমাতেন। এতে তার শরীর মুবারকে দাগ পড়ে যেত। সাহাবারা ভালো কোনো বিছানার ব্যবস্থা করার আবদার জানালে তার প্রতি উত্তরে তিন বলতেন, 'আমার দুনিয়ার প্রতি কোনো আকর্ষণ নেই। আমি দুনিয়াতে একজন পথচারী ছাড়া আর কিছুই নই। যে পথচারী একটা গাছের ছায়ায় আশ্রয় নিয়ে একটু পরে সেটা ছেড়ে চলে যায়।' (তিরমিজি : ২৩৭৭)। জীবনের সফলতা ও জান্নাত পেতে হলে তার আদর্শের পূর্ণ অনুসারী হতে হবে। এরশাদ হচ্ছে, 'যে আল্লাহ ও তার রাসুলের আনুগত্য করল সে মহা সফলতা লাভ করল।' (সূরা আহজাব : ৭১)। 'যে ব্যক্তি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের আনুগত্য করবে আল্লাহ তাকে এমন জান্নাতগুলোতে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবহমান। আর সেটিই প্রকৃত সফলতা।' (সূরা নিসা : ১)। আবার তার আদর্শের অনুসারী না হলেও রয়েছে কঠোর শাস্তির হুশিয়ারি, 'আর যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের নাফরমানি করবে অবশ্যই তার শাস্তি হলো জাহান্নাম, সে সেখানে চিরকাল থাকবে।' (সূরা জিন : ২৩)। লেখক : খতিব, এয়ারপোর্ট মসজিদ, শমসেরনগর, মৌলভীবাজার।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়