Sunday, January 3

আমরা কেমন মুসলমান


কাজী আবুল কালাম সিদ্দীক: দ্বীন পালনের যে পদ্ধতি স্বার্থের পথে প্রতিবন্ধক হয় না, রেওয়াজ-রুসুমের মুখোমুখি দাঁড়ায় না, নিয়ম-অভ্যাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় না- এমন দ্বীন পালন করেই আমরা নিজেদের মোমিন মুসলমান দাবি করছি। এটা কেমন মুসলমানি? এটা কেমন ঈমানদারি? সত্যি কথা বলতে কী, আল্লাহ তো আমাদের জন্য মিষ্টি মিষ্টি বিষয়ই নির্ধারণ করেছিলেন, আর যে জিনিসগুলো একজন সত্যিকার বিবেকবান মানুষের কাছে তিতা ছিল তা থেকে আমাদের বিরত থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের অবস্থা সম্পূর্ণ বিগড়ে যাওয়ায় ভালোটা মন্দ আর মন্দটা ভালো মনে হচ্ছে। বিষধর সাপ যাকে দংশন করে, তিতা জিনিস তার মিষ্টি লাগে আর মিষ্টি জিনিস তার তিতা লাগে। আমাদেরও নফস ও শয়তান নামক বিষধর সাপে দংশন করায় অবস্থা সম্পূর্ণ উল্টে গেছে। এখন সব উল্টাপাল্টাই আমাদের ভালো লাগে, আর সব খারাপ জিনিস বাপ-দাদার সূত্রে পেয়েছি- এই অজুহাতে ধর্ম বানিয়ে নিয়েছি। কারও ঘরে কিছু দ্বীন-ধর্ম পালন হচ্ছে, কেউ কিছু হালাল-হারাম মেনে চলছে। কেউ একটু বেশি করছে, কেউ মোটেই করছে না। অথচ মুসলমান তো একই নিয়ম-পদ্ধতির অনুসারী, একই আমল-আখলাকের অধীনে চলার কথা। কিন্তু বাস্তবতা এর সম্পূর্ণ ভিন্ন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'আসমান-জমিনের সবকিছুই তার অনুগত।' সূর্য প্রতিদিন সঠিক সময় উঠে, সারা দিন আলো বিলিয়ে সঠিক সময়ে ডুবে। চাঁদ, সিতারা, গ্রহ-নক্ষত্র সব আল্লাহর আজ্ঞাবহ হয়ে স্ব-স্ব ডিউটি পালন করছে। আল্লাহ বলেন, 'আল্লাহর প্রতি আনুগত্যশীল ও মুসলমান আসমান জমিনে যা কিছু আছে সব।' সূর্য মুসলমান, চন্দ্র মুসলমান, পাহাড় মুসলমান, পর্বত মুসলমান। গাছপালা, তরুলতা, ফলফুল, কান্ডশিকড় সব মুসলমান। সবাই তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করে যাচ্ছে। ব্যতিক্রম শুধু মানুষ। সে প্রতিনিয়ত আল্লাহর হুকুম অমান্য করে আর নিজেকে মুসলমান দাবি করে। একথা পরিষ্কার যে, আল্লাহ তায়ালা আমাদের মুসলমান করে পাঠিয়েছেন এবং শেষ নবীর উম্মত হওয়ার সুবাদে এক বিশেষ জিম্মাদারিও আমাদের ওপর অর্পিত হয়েছে। কোরআন পরিষ্কার ঘোষণা করছে, 'তোমরা শ্রেষ্ঠ উম্মত, মানুষের কল্যাণের জন্য তোমাদের পাঠানো হয়েছে। তোমরা সৎকাজে আদেশ করবে, অসৎকাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর ওপর অবিচল বিশ্বাস রাখবে।' আল্লাহর দেয়া জান-মাল আল্লাহ আবার দ্বিতীয়বার আমাদের থেকে জান্নাতের বিনিময়ে কিনে নিয়েছেন। চিন্তা করা উচিত, বিক্রি করা জিনিস কীভাবে ব্যবহার করা উচিত আর আমরা কীভাবে তা ব্যবহার করছি। আল্লাহ তার ক্রয়কৃত জিনিস আবার আমাদের ব্যবহারের জন্য দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহকে কীভাবে মানা দরকার ছিল? আমরা ঈমান গ্রহণের সঙ্গে সঙ্গে একথা স্বীকার করে নিয়েছি যে, আল্লাহর কথা ও হুকুম মানব, অন্য সবকিছু থেকে মুখ ফিরিয়ে নেব। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়ার পর আল্লাহ ভিন্ন অন্যকিছু গ্রহণ করার বা অন্যকিছু নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগ আছে কী? আল্লাহ তায়ালা তার নবীর মাধ্যমে যে বিধিবিধান নাজিল করেছেন, আমাদের প্রতি যে দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, বান্দার জন্য বিন্দু পরিমাণ সুযোগ নেই যে, তার মধ্যে সামান্য সংযোজন বা বিয়োজন করে। কালেমা আমাদের কী শিক্ষা দেয়? কালেমা আমাদের সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালা ছাড়া সবকিছুকে অস্বীকার করার শিক্ষা দেয়, এরপর ওই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হৃদয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের জাত ও সত্তাকে ধারণ করার শিক্ষা দেয়। একজন মোমিনের জন্য আল্লাহ তায়ালা গন্ডি দিয়ে রেখেছেন, ওই গন্ডির বাইরে যাওয়ার কোনোই সুযোগ নেই। আল্লাহ আমাদের দুনিয়াতে পাঠিয়ে আমাদের ব্যাপারে ঘোষণা দিয়েছেন, তোমরা শ্রেষ্ঠ জাতি, শ্রেষ্ঠ উম্মত, শ্রেষ্ঠ মানুষ। তোমাদের মানুষের কল্যাণে পাঠানো হয়েছে। তোমাদের শ্রেষ্ঠত্বের কারণ এটাই যে, এক বিশাল জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব তোমাদের কাঁধে অর্পিত হয়েছে। এক মহান লক্ষ্য নিয়ে তোমাদের আগমন হয়েছে পৃথিবীতে। এক উচ্চ মিশন দিয়ে তোমাদের পাঠানো হয়েছে এ ধরার মাঝে। অতএব তোমাদের বের হতে হবে। মানুষের কল্যাণে তোমাদের বের হতে হবে। এলাকা থেকে বের হতে হবে। আপনজন ছেড়ে বের হতে হবে মানুষের জন্য। সব মানুষের জন্য। 'আন্নাস' বা 'লিন্নাস' যখন কোরআনে কারিমে ব্যবহার হয় তখন বিশেষ শ্রেণী অর্থাৎ কাফের-মোশরেক উদ্দেশ্য হয়। ঈমানহীনদের জন্য মৌলিকভাবে ব্যবহার হয়। ঈমানদাররাও এর অধীনে কোথাও কোথাও উদ্দেশ্য হতে পারে। যেহেতু ঈমানদাররাও মানুষ তাই তারাও এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু কোরআনে বর্ণনারীতির ব্যাপকতা সত্ত্বেও মূল একটি লক্ষ্য থাকে। 'ইয়া আইয়ুহান্নাস', 'হুদাল্লিন্নাস' বা 'উখরিজাতলিন্নাস' যেসব স্থানে এসেছে, সেখানে কোরআনের ব্যাপকতা সত্ত্বেও মূল উদ্দেশ্য ঈমানহীন কাফের-মোশরেক লোকেরা। ফের আয়াতে বলা হয়েছে, তাদের জন্য তোমাদের করণীয় হলো, তোমরা নেক কাজের আদেশ দেবে, খারাপ কাজে বাধা দেবে এবং আল্লাহর ওপর ঈমান রাখবে। অর্থাৎ আল্লাহর প্রতি ঈমান ও তাকে স্বীকার করার যে দাবি তোমরা করেছ তার প্রমাণ তোমাদের দিতে হবে, সৎ কাজের আদেশ, অসৎ কাজের নিষেধের মাধ্যমে। সব মানুষের কল্যাণকামিতার মাধ্যমে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়