Friday, January 15

জলি জ্বলে উঠবে!

ঢাকা: কুয়াশার চাদর মুড়ি দিয়ে ঘণ্টাখানেক আগেই সূর্য উঠেছে। নাগরিক ব্যস্ততা দেখে তা বুঝার উপায় নেই। তাই ঘড়ির কাটা ৯টার ঘরে পৌঁছানোর আগেই বাংলামেইলের অফিসে হাজির ‘অঙ্গার’ চলচ্চিত্রের বাংলাদেশি ইউনিট। বলে রাখা ভালো, আগামী ১৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ ও কলকাতায় একযোগে মুক্তি পাচ্ছে জাজ ও এসকে মুভিজের যৌথ প্রযোজনার চলচ্চিত্র ‘অঙ্গার’। ওয়াজেদ আলী সুমনের পরিচালনায় এ ছবির মধ্য দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক হচ্ছে নবাগতা জলির। সঙ্গে থাকছেন কলকাতার নায়ক ওম।
যাই হোক ‘অঙ্গার’ ছবির মুক্তি আর জলির অভিষেক দুই ইস্যুতে বাংলামেইলের পক্ষ থেকে আমন্ত্রণ জানানো হয় ‘অঙ্গার’ চলচ্চিত্রের বাংলাদেশি ইউনিটকে। তাতে সাড়া দিয়ে সাত সকালে বাংলামেইলের অফিসে হাজির ছবির পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন, নবাগতা জলি, সংগীত পরিচালক আকাশ ও জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান বিপনন কর্মকর্তা লিটন।
আড্ডার শুরুতেই ‘আইস ব্রেকিং’ এর কাজটা সারলেন জলি। বললেন, ‘সন্ধ্যায় কলকাতার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়ছি। সেখানে অঙ্গারের প্রচারণায় অংশ নিব। আজ সারা দিনে অন্তত পাঁচটি মিডিয়া হাউজে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে হবে। তাই বলতে পারেন বাংলামেইল দিয়েই দিনের ব্যস্ততা শুরু।’

শুটিং শেষেও ব্যস্ততা? ‘হ্যাঁ, আগে ভাবতাম নায়িকার আর কাজ কী। ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপগুলো বলা ছাড়া। এখন তো দেখছি, শুটিং শেষে ডাবিং এর মতো একটা বিপদ লেগেই থাকে। তবে যেটাতে সবচেয়ে অবাক হয়েছি তাহলো মুক্তির আগের দৌঁড়ঝাপ। একটা ছবিকে দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে এত কাজ করতে হয় তা আমার জানা ছিলো না।’

এবার পরিচালক মুখ খুললেন। অভিজ্ঞতার ঝুঁঝি থেকে হাতড়ে নিয়ে জলির উদ্দেশ্যে ওয়াজেদ আলী সুমন বললেন, ‘ছবিটা হচ্ছে তোমার প্রোডাক্ট। এটাকে দর্শকের কাছে পৌঁছানোর দায়িত্বও তোমার।’ পরিচালকের কথা হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লেন জলি।
নবাগতা এক নায়িকা আর পরিচালকের কথায় আড্ডা যখন জমে উঠেছে, তখন পাশের চেয়ারে বসে থাকা ‘অঙ্গার’ ছবির সঙ্গীত পরিচালক আকাশ অনেকটাই ঘুমের রাজ্যে। আর এ নিয়ে সবার মুখে হাসির সঞ্চার হলো, সেই শব্দের চোখ মেলে তাকান আকাশ।
ইতিমধ্যে নির্মাতা ওয়াজেদ আলী সুমন পরিবেশটাকে হালকা করার চেষ্টা করে বললেন, ‘জলি জ্বলে উঠবে। ওকে কেউ থামিয়ে রাখতে পারবে না।’ মূলত জলির সাবলীল কথা বার্তার প্রেক্ষিতেই এমন কথা বলেন এই নির্মাতা। যার উত্তরে জলি বলেন, ‘প্রথম যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করি, তখন ঠিক ভাবে মাইক্রোফোনও ধরতে পারতাম না। আর এখন তো অনেক কথা বলি। প্রচুর আড্ডা দেই।’
এবার জলির মুখের কথা টেনে নিয়ে ওয়াজেদ আলী সুমন বলেন, ‘ওর আত্মবিশ্বাস আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গিয়েছে। শুটিংয়ের সময় পুরো ইউনিটের সঙ্গেই মিলেমিশে কাজ করতে পেরেছে। ফলে শুধু আমরা নই, এসকে মুভিজের সবার মুখেও জলির নাম।’
জলি ছোট থেকে নাচ করলেও, এভাবে এত বড় পরিসরের ছবির মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটবে এমনটা কখনও ভাবেননি। জলির ভাষা, ‘নায়িকা হওয়ার ইচ্ছা আমার মধ্যে থাকলেও, এত বড় একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করবো তা চিন্তা করিনি। আজিজ স্যার (জাজ মাল্টিমিডিয়ার কর্ণধার) আমাকে সেই সুযোগ করে দিয়েছেন, এ জন্য আমি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।’
তাহলে কেবল জাজের ছবিতে দেখা মিলবে জলির? ‘না, না এমন কোন চিন্তা ভাবনা আমার নেই। এমন কী জাজের সঙ্গে এ বিষয়ে আমার কোন চুক্তিও নেই। তবে এটা ঠিক আপাতত জাজের ছবি নিয়েই থাকতে চাই। তবে আগামীতে জাজের বাইরেও কাজ করার ইচ্ছা আছে।’
রোমান্টিক গল্পের ছবি ‘অঙ্গার’। এ কারণে ছবি জুড়েই থাকছে নিখাঁদ প্রেম আর ভালোবাসার টানাপোড়নের চিত্র। জলি কী সেখানে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে নির্মাতা ওয়াজেদ আলী সুমন  বলেন, ‘জলির কাছ থেকে যতটুকু আশা করেছিলাম, শুটিংয়ে তার চেয়ে অনেক ভালো করেছে। বাকিটা দর্শক হলে গেলেই বুঝতে পারবে। কারণ একজন নবাগতাকে তার অভিনয় দিয়েই দর্শকরা চিনে নেয়।’
এদিকে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে গত দশ বছরের সব রেকর্ড ভাঙ্গবে ‘অঙ্গার’! এর উত্তর দিলেন নির্মাতা সুমন, ‘একজন প্রযোজক সবকিছু বিচার বিবেচনা করেই চলচ্চিত্রে অর্থ লগ্নি করেন। সে হিসেবে তিনি যখন রেকর্ড ভাঙ্গার কথা বলেন, তখন বুঝতে হবে ছবিটির মধ্যে অবশ্যই এমন কিছু আছে, যা গত দশ বছরে আমাদের চলচ্চিত্রে দেখা যায়নি। চলচ্চিত্রটিকে আমরা অনেক লাইভ করতে পেরেছি। যা যা করতে চেয়েছি সব পারফেক্টলি হয়েছে।’
এদিকে সবাই যখন ‘অঙ্গার’ এর পেছনের গল্প নিয়ে মেতে উঠেছি, তখন ঘুম কাটাতে গুনগুনিয়ে ‘কতবার বুঝাবো বলো..’ গানটি ধরলেন ছবির সঙ্গীত পরিচালক আকাশ। আর গানের ফাঁকে ফাঁকেই বলতে শুর করলেন তার পেছনের গল্প।
আকাশ বলেন, ‘অঙ্গার ছবির গল্পটা মূলত মাটির কাছাকাছি। তাই সুর ও শব্দ ব্যবহারের ক্ষেত্রে তা প্রাধান্য পেয়েছে। আর আমি চেয়েছি গানগুলোতে যাতে ফোক ফিলটা থাকে।’
তিনি আরো বলেন, ‘ছবি মুক্তির আগেই কিন্তু কয়েকটি গান বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই যেমন আইটেম নাম্বার ‘আতা গাছে...’ গানটি, যার মধ্যে একটা ড্রিমি ভাব রয়েছে।’
আকাশের কথায় ছেদ টানলেন জলি। বললেন, ‘আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লেগেছে ‘কতবার বুঝাবো বলো..’ গানটি। এই কয়েকদিনেই গানটি প্রায় মুখস্ত করে ফেলেছি। যখন ফ্রী থাকি, নিজের অজান্তেই গানটি গেয়ে উঠি।

তবে কী নায়িকা এবার সঙ্গীতেও মনোযোগ দিবেন? ‘না, না, না…অভিনয় নিয়েই আপাতত থাকতে চাই। তবে এটা ঠিক একজন শিল্পীর সবই করতে হয়। তাই সময় সুযোগ হলে টুকটাক বিজ্ঞাপনে কাজ করার ইচ্ছা রয়েছে। তবে সেটাও এখন নয়। আগে হাতে থাকা ছবিগুলো নিয়ে দর্শকদের দোয়ারে পৌঁছাতে চাই।’

জাজের প্রযোজনা জলি সম্প্রতি ‘নিয়তি’ ছবির শুটিং শেষ করেছেন। এখন চলছে ডাবিংসহ অন্যান্য কাজ। নতুন ছবির প্রসঙ্গ আসতেই জলি বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ছবি। তবে এখানে একটা নতুনত্ব আছে। তা হলো আরিফিন শুভ। এই ছবির মাধ্যমেই প্রথমবারের মতো দেশি কোন নায়কের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পেলাম।’

এদিকে নতুন খবর হলো, জলি তার ক্যারিয়ারের তৃতীয় ছবির কাজ শুরু করতে যাচ্ছেন। যাতে তার সঙ্গে দেখা মিলবে ওপাড়ের জিৎ এর। এমন সব কথার ভিড়েই চলতে থাকলো আড্ডা। 

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়