Monday, December 21

কেন্দ্রের বার্তা নিয়ে ছুটছেন বিএনপির নেতারা


ঢাকা: অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগ থাকলেও সারা দেশে এখন পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারণার উৎসব চলছে। দলীয় প্রতীকে ভোট হচ্ছে বলে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন পেয়েছে নতুন মাত্রা। প্রার্থীদের পাশাপাশি নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন বিভিন্ন দলের কেন্দ্রীয় নেতারাও। দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও প্রধান বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা ছুটছেন পৌরসভার বাড়ি বাড়ি। অন্যান্য নির্বাচনের মতো পৌরসভায়ও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে দুই দলেরই কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর‌্যবেক্ষণ করা হচ্ছে সারাক্ষণ। বিএনপির পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নির্বাচন পরিচালনায় তিনটি মনিটরিং সেল ও ১১টি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিভাগীয় দলের দায়িত্বপ্রাপ্তদের নির্দেশনা নিয়ে বিএনপির বিভিন্ন টিমের সদস্যরা মাঠে নেমে পড়েছেন। তারা সকাল থেকে রাত পর‌্যন্ত প্রচারণা চালাচ্ছেন দলীয় প্রার্থীর পক্ষে। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এই অংশগ্রহণ দলের তৃণমূলে উদ্দীপনার সৃষ্টি করছে বলে জানাচ্ছেন নেতারা। এর মধ্য দিয়ে কেন্দ্রের বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে তৃণমূলে। কেন্দ্রীয় নেতারা তৃণমূলের কর্মীদের নিয়ে পথসভা করছেন, লিফলেট বিতরণ করছেন, বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট চাইছেন। রংপুর, দিনাজপুর, সিলেট, চট্টগ্রাম, বরিশাল, যশোর, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, নরসিংদী, নারায়ণগঞ্জ, টাঙ্গাইলসহ বেশ কিছু এলাকায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা দলের প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। চার দিন ধরে উত্তরাঞ্চলে প্রচারণায় ব্যস্ত আছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল। এই দলে আছেন দলের রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু, সাবেক এমপি বিলকিস ইসলাম, স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সম্পাদক অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম ও আক্তারুজ্জামান মিয়া প্রমুখ। আমিনুল ইসলাম ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ইতিমধ্যে নীলফামারীর সৈয়দপুর, দিনাজপুরের বীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁও সদর, পীরগঞ্জ, পঞ্চগড় সদর, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, হাকিমপুর, বিরামপুর, গাইবান্ধা সদর, গোবিন্ধগঞ্জ, রংপুরের বদরগঞ্জ, লালমনিরহাট সদর, কুড়িগ্রাম সদর, নাগেশ্বরী, উলিপুরে প্রচারণা চালানো হয়েছে। আমিনুল জানান, মূলত স্থানীয়ভাবে আয়োজিত কর্মসূচি; যেমন-পথসভা, কর্মিসভা, লিফলেট বিরতণ,গণসংযোগ করা হচ্ছে। এ ছাড়া প্রার্থী ও ভোটারদের নির্বাচনের মাঠে শেষ পর‌্যন্ত থাকার যে সিদ্ধান্ত দল নিয়েছে, তা জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য দলের পক্ষ থেকে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে। দলের প্রধান মাহবুবুর রহমান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন পৌরসভায় প্রচারণা চালিয়েছি। ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। ধানের শীষের প্রতীকের পক্ষে জোয়ার শুরু হয়েছে।” নির্বাচন সুষ্ঠু হলে বিএনপির প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবেন বলে আশা প্রকাশ করেন সাবেক এই সেনাপ্রধান। দক্ষিণে খুলনা বিভাগীয় টিমের প্রধান স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম অসুস্থ থাকায় টিমের সদস্যসচিব মশিউর রহমানের নেতৃত্বে ওই এলাকায় প্রচারণা চলছে বলে জানা গেছে। এদিকে গত তিন দিন ধরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও নরসিংদীতে প্রচারণা চালিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণের নির্বাচন সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। ওই টিমে রয়েছেন দলের যুগ্ম মহাসচিব ও কেন্দ্রীয় সমন্বয় সেলের সদস্যসচিব মো. শাজাহান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, টাঙ্গাইল জেলা বিএনপির সভাপতি আহমেদ আজম খান, সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম তোফা ও সাংগঠনিক সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, দলের কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অবদুস সালাম আজাদ প্রমুখ। শনিবার গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে একটি টিম টাঙ্গাইলে গণসংযোগ করেছে। তারা টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে প্রচারণা শুরু করেন। পরে টাঙ্গাইল সদর, ভূঞাপুর, গোপালপুর ও সর্বশেষ কালিহাতীতে গণসংযোগ করেন। দলীয় প্রার্থীদের বিজয়ী হওয়ার আশা প্রকাশ করে গয়েশ্বর বলেন, “ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। আশা করি সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারের নির্যাতনের বিরুদ্ধে জনগণ তাদের প্রতিবাদ জানাতে ভোটকেন্দ্রে যাবেন।’ বরিশাল বিভাগীয় টিমের আহ্বায়ক ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমানের নেতৃত্বে একটি দল এই মুহূর্তে বরিশালে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। সঙ্গে রয়েছেন ওই বিভাগীয় টিমের সদস্যসচিব ও দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মজিবর রহমান সরোয়ার,এ বি এম মোশাররফ হোসেন,বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মাহবুবুল হক নান্নু, সাবেক ছাত্রদল নেতা নূরুল ইসলাম নয়ন, হাসান মামুন,স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা ফরিদ উদ্দিন আহমেদ প্রমুখ। এই দলের সদস্যরাও পথসভা আর নেতাকর্মীদের নিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করে নির্বাচনী কৌশল ঠিক করছেন। ঘুরে বেড়াচ্ছেন ভোটারদের দ্বারে দ্বারে। সরকারের বিভিন্ন নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে ধানের শীষের প্রতীকে ভোট চাইছেন তারা। এদিকে সিলেট বিভাগে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক কূটনীতিক ইনাম আহমেদ চৌধুরী। এ ছাড়া সিলেটের গোলাপগঞ্জ পৌরসভা বিএনপির মেয়র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহিন কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেন। চট্টগ্রাম বিভাগের তিনটি নির্বাচনী টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মীর মোহাম্মদ নাছিরউদ্দিন ও মে. জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী। এ তিন কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার। আবদুল্লাহ আল নোমান ছাড়া বাকিরা এখন চট্টগ্রামে বিএনপি মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। টিমের সদস্য মে. জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, দেশের অন্যান্য জেলার মতো এখানেও গণগ্রেপ্তার চলছে। নেতাকর্মীদের আতঙ্কে রাখতেই এসব করা হচ্ছে। কিন্তু এরপরও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে ধানের শীষে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে বলে তিনি জানান। এদিকে রাজশাহী বিভাগের সমন্বয় টিমের আহ্বায়ক ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু শনিবার থেকে প্রচারণায় নামছেন বলে জানা গেছে। বিএনপির নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত আছেন এমন একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখনো যারা মাঠে নামেননি তাদের দ্রুত নামার জন্য শীর্ষপর‌্যায় থেকে বলা হচ্ছে। দু-এক দিনের মধ্যে সবাই মাঠে নেমে যাবেন। পাশাপাশি জোটের শরিক এবং বিএনপিমনা পেশাজীবী সংগঠনের নেতারাও প্রচারণায় নামবেন।”

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়