Wednesday, December 23

ইসলামে আমাদের বিজয়


মোঃ তালহা তারীফ: ডিসেম্বর বিজয়ের মাস। এই বিজয় আমাদের শ্রেষ্ঠ অর্জন। বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে এটাই শ্রেষ্ঠ অর্জন। শত শত বছরের শোষণ, শাসন, লাঞ্ছনার শিকার আমাদের এই অসহায় বাঙালি জাতি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর এ দেশের জনগণ স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে এনে দেশকে বিজয়ী করেছেন। বিজয় অর্জনের পর ইসলাম আমাদের দুইটি কাজ করতে বলেছে। এক, বিজয় অর্জিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহর তসবিহ পাঠ করে তার দরবারে শুকরিয়া আদায় করা। দুই, মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করা। বিজয় সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'যখন আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে বিজয় বা সাহায্য আসবে তখন মানুষকে তুমি দেখবে তারা দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করেছে, অতঃপর তুমি তোমার মালিকের প্রশংসা করো এবং তার কাছে ক্ষমা প্রর্থনা করো, অবশ্যই মহান আল্লাহ তওবা কবুলকারী।' (সূরা আন নাসর : ১-৩)। দীর্ঘ নয় মাস বাংলাদেশের সাধারণ জনগণ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তাদের পরাজিত করেন। এই মুক্তিযুদ্ধে প্রচুর সম্পদের ক্ষতি এবং বহু লোকের বুকের তাজা রক্তের বিনিময়ে মহান আল্লাহ তায়ালা পরাধীনতা থেকে মুক্ত করে আমাদেরকে স্বাধীন মাতৃভূমি দিয়েছেন সেই সাথে। আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীর সব কিছু আমাদের অধীন করে দিয়েছেন। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'সব কিছু তোমাদের অধীন করে দিয়েছি।' (হজ : ৬৫)। স্বাধীনতার সিংহ পুরুষদের জীবন আমাদের হৃদয়কে আলোকিত করে। ব্যথিত করে ও গর্বিত করে, অত্যাচারিত জাতির প্রতি অঙ্গীকার ও দায়বদ্ধতা পালন করতে গিয়ে তারা জীবন উৎসর্গ করেছেন জাতির জন্য। যেসব শহীদ নতুন প্রজন্মের কাছে রেখে গেছেন বিজয়ের বার্তা, তাদের আত্মত্যাগের কারণেই আমরা আমাদের কথা বলার, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং ধর্মীয় অধিকার ফিরে পেয়েছি। ১৯৭১ সালে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসররা গণহত্যা কিংবা নারীর সম্ভ্রম হরণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগের মতো জঘন্য ঘটনা ঘটিয়েছে। বর্তমান ও পুরনো বছরের শোষণ-শাসন অপমানের শিকার বাঙালি জনগণ তখন ভিজে মাটির সোঁদা গন্ধ হৃদয়ে ধারণ করে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে। এদেশের মুক্তিপাগল জনগণ জীবন বাজি রেখে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানি সামরিক বাহিনীর ওপর। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে লাখ লাখ মানুষ নিজেদের তাজা প্রাণ বিলিয়ে দিয়েছেন দেশের জন্য। জানা-অজানা বহু মানুষ হারিয়ে গেছেন ফিরে না আসার দেশে। যারা আল্লাহর রাস্তায় আত্মদান জীবন দেন তারা শহীদ। কারণ এটি দেশের জন্য, মজলুম জনতার দাবি আদায়ের স্বার্থে লড়াই করারই নামান্তর। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, 'যারা আল্লাহর পথে জীবন দেন তাদের মৃত বলো না। বরং তারা জীবিত। কিন্তু তোমরা তা উপলব্ধি করতে পার না।' (সূরা বাকারা : ১৫৪)। অত্যাচারী শাসক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে আমাদের ২৬৩ দিনের সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রামের চরম পর্যায়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা। ১১ সেক্টর কমান্ডার, ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ, ৬৮ বীরউত্তম, ১৭৫ জন বীরবিক্রম, ৪২৫ বীরপ্রতীক সবার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। যারা এ বিজয় এনে দিয়েছেন তারা অমর। তাদের আমল কেয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মানুষ মৃত্যুর পর তার সব আমল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে তার আমল আর বৃদ্ধি পেতে পারে না, তবে ওই ব্যক্তির কথা ভিন্ন, যে ব্যক্তি মুসলিম রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সীমান্ত পাহারায় নিয়োজিত থাকা অবস্থায় মৃতবরণ করে। তার আমল কেয়ামত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে থাকবে এবং কবরে প্রশ্ন-উত্তর থেকে সে মুক্তি পবে।' (তিরমিজি, আবু দাউদ)। স্বাধীনতার লালসূর্য ছিনিয়ে আনতে বিজয় অর্জন করতে গিয়ে যারা দেশের জন্য আত্মত্যাগ করেছেন সেসব শহীদের জন্য আল্লাহর কাছে মাগফিরাতের জন্য দোয়া করা এবং এই বিজয় দিবসে শুকরিয়াস্বরূপ নামাজ আদায় করা উচিত। রাসুল (সা.) মক্কা বিজয়ের পর আট রাকাত নামাজ আদায় করেছিলেন। (আল হাদিস)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়