Wednesday, December 16

বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তি

বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তি

কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল যে বাংলাদেশ, তা পার করল ৪৪ বছর। আজ বুধবার বিজয়ের ৪৪ বছর পূর্তিতে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এই মাটির মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে দেশবাসী।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণীতে দেশে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে।

বিজয়ের এই দিনের কর্মসূচি শুরু হবে সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। তারপরের কর্মসূচি আবর্তিত হবে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূর্যোদয়ের পরপরই স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।

ভিআইপিদের শ্রদ্ধা জানানোর পর স্মৃতিসৌধ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠবে স্মৃতিসৌধ।

স্মৃতিসৌধের অনুষ্ঠান চলার মধ্যেই সকাল ১০টায় রাজধানীতে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে শুরু হচ্ছে কুচকাওয়াজ। এই কুচকাওয়াজের সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীর বিভিন্ন মহড়া চলবে, যার প্রস্তুতি চলছে গত কয়েকদিন ধরে।

রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম নেবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন। বিজয় দিবস উপলক্ষে নৌ-বাহিনীর জাহাজগুলো সর্বসাধারণের পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রাম শুরুর পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

একাত্তরে বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের যারা জড়িত ছিল, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের ফলে তারা চলে যায় ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। বহু প্রতীক্ষা শেষে চার দশক পর শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায় আসার পর একে একে চারজনকে ঝোলানো হয় ফাঁসিতে।

সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর ফাঁসি হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের, যারা বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। তাদের ফাঁসির পর এবারের বিজয় দিবস কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

ঢাকার সদরঘাট, নারায়ণগঞ্জের পাগলা নেভাল জেটি, চট্টগ্রামের নিউমুরিং নেভাল জেটি, খুলনার বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাট, মংলার নেভাল বার্থ এবং বরিশালের বিআইডব্লিউটিএ রকেট ঘাটে দুপুর ২টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জাহাজ পরিদর্শনের জন্য উন্মুক্ত থাকবে বলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর থেকে জানানো হয়েছে।

নানা কর্মসূচিতে বিজয়ের এই দিন উদাযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিজয় উদযাপনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বানে ‘কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের’ মাধ্যমে এবারের বিজয় দিবস উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’।

বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এ বছর দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রামসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কমিটি।

তাদের আয়োজনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় উৎসবের উদ্বোধন হবে সকাল ১১টায়, উদ্বোধন করবেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক।

পরে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শুরু হবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ‘আমাদের সংস্কৃতি’। এরপর বিকাল সাড়ে ৩টায় থাকছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব।

বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীত পরিবেশন শেষে হবে ‘আগামী বাংলাদেশের শপথ’। শপথবাক্য পড়াবেন বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটির প্রধান উপদেষ্টা আবদুল গাফফার চৌধুরী।

বিকাল ৪টা ৪৭মিনিট থেকে ৫টা ১৫মিনিট পর্যন্ত চলবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের কণ্ঠে মুক্তিযুদ্ধের গান। এরপর আছে ‘বিজয় আতশ সন্ধ্যা’।

সবশেষে বিকাল ৫টা ৪০ মিনিট থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত বিজয় মঞ্চে হবে দেশের জনপ্রিয় ব্যান্ডদলের অংশগ্রহণে ‘কনসার্ট ফর ফ্রিডম’।

১৯৭১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সেই ক্ষণ এবারও উদযাপন করবে একাত্তরে রণাঙ্গনে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। স্বাধীনতা স্তম্ভে পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের দৃশ্য মঞ্চায়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও থাকবে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সকাল ১০টায় এটি শুরু হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা ‘আনারকলি’ পরিবেশন করবে যাত্রাদল ‘লোকনাট্য গোষ্ঠী’।

বিজয় দিবসের সকালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী অন্যান্য কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে।

দলের পক্ষ থেকে সাভার স্মৃতিসৌধ, ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গীপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দেওয়া হবে। জাতিরজনক বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের পাশাপাশি তার কবর জিয়ারতও করা হবে।

ঢাকা মহানগরীর সব থানা শাখা বিজয় র‌্যালি নিয়ে পাক হানাদারদের আত্মসমর্পণস্থল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে। সেখানে ৪টা ২০ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বিজয় মিছিল যাবে ধানমন্ডি ৩২ নম্বর অভিমুখে।

এছাড়া ১৭ ডিসেম্বর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে আলোচনা সভা রয়েছে দলটির, যেখানে প্রধান অতিথি হিসাবে দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রধান প্রধান ভবনে পতাকা উত্তোলন, এরপর সাভারে স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পনের কর্মসূচি রয়েছে।

বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের উদ্যোগে জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘বিজয় উৎসব’ উদযাপন হবে। ছায়ানট, সংগীত বিভাগসহ নবীন-প্রবীণ চার হাজার শিল্পী এতে অংশ নেবেন বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

জোহরের নামাজের পর মসজিদ ও উপাসনালয়ে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের উন্নতির জন্য দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

বিজয় দিবসের বিকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিকাল ৩টায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হবে বলে দলটি জানিয়েছে।

এছাড়া সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে জাতীয় এবং দলীয় পতাকা উত্তোলন ও রাতে আলোকসজ্জা থাকছে।

সকাল সাড়ে ৮টায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে সাভার স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেবেন তারা।

বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৮ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার কর্মসূচিও রয়েছে দলটির। সকাল ৯টায় প্রেসক্লাবে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় প্রেসক্লাব।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতার পূর্ণাঙ্গ আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সাংবাদিকসহ দেশবাসীকে জোর প্রয়াস অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম চৌধুরী।

জাতীয় স্মৃতিসৌধে সকাল ৯টায় ফুল দিয়ে বেদীর পেছনে ইতিহাসের দায়মুক্তির বিজয় উল্লাস পালন করবে ‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান’।

বিজয় দিবস উপলক্ষে বিকেল ৪টায় একাডেমির নজরুল মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বাংলা একাডেমি। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে বিজয় শোভাযাত্রা বের করবে।

বিজয়ের চেতনাকে বুকে ধারণ করে ‘কার্বনকে না বলুন’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে সপ্তম বারের মতো বিজয় র‌্যালি করবে সার্চ স্কেটিং ক্লাব। সকাল ৮টায় শহীদ মিনার থেকে শুরু করে র‌্যালিটি সাভার স্মৃতিসৌধে গিয়ে শেষ হবে। সেখানে ফুল দেওয়ার মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হবে।

সার্ক চলচ্চিত্র সাংবাদিক ফোরাম-বাংলাদেশের উদ্যোগে সিদ্ধেশ্বরী ইস্টার্ন হাউজিং ফ্ল্যাট মালিক সমিতি মিলনায়তনে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও বিজয় দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

বিজয় দিবসে সাধারণ ছুটির দিনে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়বে। প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রং-বেরংয়ের পতাকায় সজ্জিত হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় হবে আলোকসজ্জাও।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বেতার ও টেলিভিশনেও হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

জাতির শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডা ও অন্যান্য উপসানালয়ে হবে মোনাজাত ও প্রার্থনা। হাসপাতাল, কারাগার, বৃদ্ধাশ্রম, এতিমখানা, শিশুপরিবার ও ভবঘুরে প্রতিষ্ঠানগুলোয় উন্নতমানের খাবার সরবরাহ করা হবে।

দেশের সব জেলায় এবং বিদেশে দূতাবাসগুলোতে বিজয় দিবস উপলক্ষে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

বিজয় দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, “আমাদের গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার পথ মসৃণ ছিল না। নানা চড়াই-উৎরাই এর মধ্য দিয়ে দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত।”

“সরকারের যুগোপযোগী পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ফলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে অর্জিত হচ্ছে নানা সাফল্য। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও ধারাবাহিকভাবে দেশ ছয় শতাংশের ঊর্ধ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করে চলেছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর কাজ এগিয়ে যাচ্ছে।

“গণতন্ত্রের বিকাশ, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নয়ন, নারী শিক্ষার সম্প্রসারণ, স্থানীয় সরকার শক্তিশালীকরণ, কৃষির উন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির উন্নয়ন, তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশসহ অনেক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্ব দরবারে ‘রোল মডেল’ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।”

দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ও চেতনা বাস্তবায়নে নিজ নিজ অবস্থানে থেকে আরও অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “সম্মিলিত প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় পরিণত হোক।”

প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, “বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে ধ্বংসস্তূপ থেকে টেনে তুলে সোনার বাংলা গড়ার সংগ্রামে নিয়োজিত, তখনই স্বাধীনতাবিরোধী-যুদ্ধাপরাধী চক্র জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা করে।    

“সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৯৬ সালে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি। জনগণের আর্থসামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখে ২০২১ সালের মধ্যে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলার প্রত্যয় ব্যক্ত করছি।”

বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পূর্ণরূপে বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশের ইতিহাসে মুক্তিযোদ্ধাদের অপরিসীম ত্যাগ ও বীরত্ব গাঁথা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। রাজনৈতিক স্বাধীনতা, অর্থনৈতিক স্বয়ংসম্পূর্ণতা এবং শ্রেণি বৈষম্যহীন ও শোষণমুক্ত সমাজ গঠনই ছিল মুক্তিযুদ্ধের মূল লক্ষ্য।

“বিজয়ের চার দশক পার হলেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পরিপূর্ণরূপে এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।” দলমত নির্বিশেষে তা বাস্তবায়নে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান বিরোধীদলীয় নেতা।   

অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বাণীতে বলেন, “শোষণ-বঞ্চনামুক্ত একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদশ প্রতিষ্ঠার প্রত্যয় নিয়েই ১৯৭১-এ এদেশের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল। স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সময়ে আমাদের গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়েছে, জনগণের মৌলিক ও মানবিক অধিকার খর্ব হয়েছে।

“১৯৭১-এ আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শত্রুমুক্ত হলেও চক্রান্তকারীদের চক্রান্ত আজও বিদ্যমান। চক্রান্তকারীরা আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে গ্রাস করে আমাদেরকে একটি পদানত জাতিতে পরিণত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত।

“ওই অশুভ শক্তি নানাবিধ চক্রান্তজাল রচনা করে আমাদের বহু ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা বিপন্ন করে চলেছে। সেই জন্য ২০১৪’র ৫ জানুয়ারির প্রহসনের একতরফা নির্বাচন করে জনমতকে তাচ্ছিল্য করা হয়েছে।

“ওদের হাত থেকে প্রিয় মাতৃভূমির স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করতে মহান বিজয় দিবসের প্রেরণায় আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।”

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়