Tuesday, December 22

স্বাধীনতা সুরক্ষায় করণীয়


মাহমূদ হাসান: মহান আল্লাহ একমাত্র মানুষকেই স্বাধীন সত্তা হিসেবে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। আর তার স্বাধীন বিচরণক্ষেত্র হিসেবে সৃষ্টি করেছেন বিশাল পৃথিবী। পরাধীনতা মানবজীবনের সবচেয়ে বড় বঞ্চনার নাম। স্বাধীনতা ছাড়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও পালন কোনোটাই যথার্থভাবে সম্ভব নয়। সে কারণেই মুসা (আ.) জন্মভূমি মিসর ছেড়ে একটি স্বাধীন ভূখন্ডের অনুসন্ধানে নীল দরিয়া পাড়ি দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) প্রিয় মাতৃভূমি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় গিয়ে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপন করেছিলেন। আমরা মূলত দুইবার স্বাধীন হয়েছি, একবার ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের থেকে। এরপর যখন পাকিস্তানিদের দ্বারা আবার বঞ্চনার স্বীকার হলাম, ১৯৭১ সালে ৯ মাস যুদ্ধ করে পেয়েছি পূর্ণাঙ্গভাবে চূড়ান্ত স্বাধীনতা। অথচ পৃথিবীতে এমন অনেক জাতি আছে, যারা যুগের পর যুগ যুদ্ধ করে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে পারছে না। মানুষের কোনো প্রচেষ্টাই সফলতার মুখ দেখে না যতক্ষণ না আল্লাহর ইচ্ছা তার সঙ্গে সংযুক্ত হয়। অতএব আমি যদি বুদ্ধিমান হয়ে থাকি তাহলে বিজয় বা স্বাধীনতা এ ধরনের নেয়ামতের ক্ষেত্রে আমাদের স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারণ হবে এগুলো আল্লাহরই দান। মুসা (আ.) এর বিজয়ের ইতিহাস প্রসঙ্গে কোরআনে এরশাদ হয়েছে, 'যখন মুসা স্বজাতিকে বললেন, তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ করো, যখন তিনি তোমাদের ফেরাউন সম্প্রদায়ের কবল থেকে মুক্তি দেন। তারা তোমাদের অত্যন্ত নিকৃষ্ট ধরনের শাস্তি দিত, তোমাদের ছেলেদের হত্যা করত এবং মেয়েদের জীবিত রাখত। এতে তোমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে বিরাট পরীক্ষা হয়েছিল। যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করো, তবে তোমাদের আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর।' (সূরা ইবরাহিম : ৬-৭)। এখানে মুক্তি ও বিজয় লাভের পর মুসা (আ.) কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে, এ বিজয় বা মুক্তি মহান আল্লাহর দান এবং এর জন্য উচিত তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা আদায় করা। অন্যথায় এ স্বাধীনতা দীর্ঘস্থায়ী হবে না বরং পরাধীনতার শাস্তি অবধারিত। আর এজন্য মুসা (আ.) বিজয় দিবসে কৃতজ্ঞতাস্বরূপ রোজা পালন করেছিলেন। আবার মুহাম্মদ (সা.) মক্কা বিজয়ের শুকরিয়া আদায় করেছেন ৮ রাকাত নামাজ আদায়ের মাধ্যমে এবং মক্কা বিজয়ের ঐতিহাসিক ভাষণে তাঁর অভিব্যক্তি ছিল এমন, 'সব প্রশংসা মহান আল্লাহর, যিনি তাঁর প্রতিশ্রুতিকে (বিজয়) সত্যে পরিণত করেছেন, আপন বান্দাকে বিজয়ী করেছেন এবং একাই শত্রুপক্ষকে পরাজিত করেছেন।' (বোখারি : ১৭০৩)। এখানে নিজেদের পরিকল্পনাকে নয়, নিজেদের বাহিনীকেও নয়; বরং তিনি পুরো কৃতিত্ব দিচ্ছেন মহান আল্লাহকে। বিজয়ে ইসলামের শিক্ষা হলো বিনীত হওয়া, উদ্ধত না হওয়া, অহঙ্কারী না হওয়া এবং আচরণে সীমালঙ্ঘনকারী না হওয়া। মক্কা বিজয়ের পর রাসুল (সা.) তাই করেছিলেন। মক্কা বিজয় হলো। আবু জাহেল নিহত হয়েছে বদর যুদ্ধে। তার ছেলে ইকরামা বিন আবি জাহল সে জীবনের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তার স্ত্রী এসে রাসুল (সা.) এর কাছে এসে মুসলমান হয়ে নিজের স্বামী ইকরামার জন্য নিরাপত্তা চান। রাসুল (সা.) তাকে পূর্ণ নিরাপত্তার আশ্বাস দেন। ইকরামা খবর পেয়ে রাসুলের দরবারে আসে। এদিকে রাসুল (সা.) ইকরামার আগমনের কথা টের পেয়ে উপস্থিত সাহাবাদের উদ্দেশে বলেন, 'ইকরামা আসছে মুসলমান হওয়ার জন্য। তোমরা তার বাবাকে গালি দেবে না। মৃত ব্যক্তিকে গালি দিলে তা তাদের জীবিত স্বজনরা কষ্ট পায়। অথচ মৃত ব্যক্তির কাছে গালিটা পৌঁছে না।' (কানজুল আমল : ৩৩৬২৫)। মানুষের জীবনের যত সফলতা আসে তা সবই আল্লাহ তায়ালার দান। অথচ বিপদ কেটে গেলেই মানুষ তা বেমালুম ভুলে যায়। এরশাদ হচ্ছে, 'মানুষকে যখন দুঃখ-কষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে আমাকে ডাকতে শুরু করে, এরপর আমি যখন তাকে আমার পক্ষ থেকে নেয়ামত দান করি, তখন সে বলে, এটা তো আমি আগের জানা মতেই প্রাপ্ত হয়েছি। অথচ এটা এক পরীক্ষা; কিন্তু তাদের অধিকাংশই বোঝে না।' (সূরা জুমার : ৪৯)। বিপদে পড়লে মানুষ কায়মনো বাক্যে আল্লাহকে ডাকে; কিন্তু বিপদ কেটে যাওয়ার পর সে নিজের কৌশল, মেধা, শক্তি-সামর্থ্য, দল ও নিজের জনসমর্থনকে বড় করে দেখে। এখন এই সুখের উপকরণটিই যেন আল্লাহ ও বান্দার মাঝে এক ধরনের প্রাচীর তুলে দেয়। এখানে আল্লাহর কোনো অনুগ্রহ বা সাহায্য সে খুঁজে পায় না। যদি মানুষ স্বাধীনতা লাভের পর আল্লাহকে ভুলে যায়, তার হুকুম পালনে অনীহা প্রকাশ করে; তাহলে বাহ্যিক স্বাধীনতা থাকলেও জানমালের কোনো নিরাপত্তা থাকবে না। মহামারী, দুর্ভিক্ষ ও প্রাকৃতিক বিপর্যয় তাদের পিছু ছাড়বে না। একথাই যেন ধ্বনিত হয়েছে নিম্নোক্ত আয়াতে, 'আল্লাহ দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন একটি জনপদের, যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত, তথায় প্রত্যেক জায়গা থেকে আসত প্রচুর জীবনোপকরণ। অতঃপর তারা আল্লাহর নেয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল। তখন আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের কারণে স্বাদ আস্বাদন করালেন, ক্ষুধা ও ভীতির।' (সূরা নাহল : ১১২)। লেখক : খতিব, এয়ারপোর্ট মসজিদ শমসের নগর, মৌলভীবাজার

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়