Thursday, December 24

মক্কা-মদিনার সম্মান বজায় রাখুন


মাওলানা আবদুস সবুর: মক্কা ও মদিনার চেয়ে পবিত্র এবং মর্যাদাশীল শহর পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আল্লাহর পক্ষ থেকে ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে 'হরম' ঘোষণা করেছেন। আর রাসুল (সা.) মদিনাকে 'হরম' ঘোষণা করেছেন। এ দুটি স্থান মর্যাদাশীল। এর ইজ্জত-সম্মান বজায় রাখা প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, 'ইবরাহিম (আ.) মক্কাকে হরম বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং আমি মদিনাকে হরম বলে ঘোষণা দিলাম।' (বোখারি : ৩১১৬)। 'হরম' মানে সংরক্ষিত এলাকা, সম্মানিত এলাকা। মক্কা ও মদিনা হরম, সুতরাং এখানে মারামারি-কাটাকাটি চলবে না। মক্কা-মদিনার কোনো গাছ-পাতাও ছেঁড়া যাবে না। কোনো পশু শিকার করা যাবে না। অশ্লীল বাক্য বলা যাবে না। চুরি-ডাকাতি করা যাবে না। কিছু পড়ে থাকলে, তা ধরা যাবে না। অনেক বাধ্যবাধকতা হরম শরিফের ক্ষেত্রে আছে। উম্মত যত দিন মক্কা-মদিনায় মারামারি-কাটাকাটি, চুরি-ডাকাতি, গান-বাজনা করবে না, অশালীন বাক্য উচ্চারণ করবে না, মক্কা-মদিনাকে খুব ইজ্জত-সম্মান করবে, তত দিন পর্যন্ত উম্মত নিরাপদে থাকবে। তাদের ওপর আল্লাহর রহমত নাজিল হবে। আল্লাহর পক্ষ থেকে হেফাজতি নাজিল হবে। রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, 'যত দিন পর্যন্ত উম্মত মক্কা-মদিনার ইজ্জত-সম্মান সঠিকভাবে বজায় রাখবে, তত দিন পর্যন্ত খায়ের ও ভালো থাকবে। আর যখনই ইজ্জত-সম্মান ছেড়ে দেবে, তখনই তারা ধ্বংস হয়ে যাবে।' (মুসনাদে আহমাদ : ১৮২৭১)। মক্কা-মদিনার ইজ্জত-সম্মান নষ্ট করলে, এর প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করলে উম্মত হালাক-ধ্বংস হয়ে যাবে। মক্কা-মদিনায় যেন কোনো অবৈধ কাজ না হয়। এখানকার ইজ্জত-সম্মান যেন সঠিকভাবে বজায় থাকে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। মক্কা সম্পর্কে রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'হে মক্কা! তোমার মাটি আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয়। এজন্য তুমি আমার কাছেও অত্যন্ত প্রিয়।' এরপর রাসুল (সা.) আরও এরশাদ করেন, 'কওম যদি আমাকে তোমার কোল থেকে বের করে না দিত, তাহলে তোমার কোল ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও আমি বসবাসের স্থান বানাতাম না।' (তিরমিজি : ৩৮৬১)। মক্কায় গিয়ে এক রাকাত নামাজ পড়লে ১ লাখ রাকাত নামাজ পড়ার সওয়াব। এক টাকা দান করলে ১ লাখ টাকা দান করার সওয়াব। একবার সুবহানাল্লাহ পড়লে ১ লাখবার সুবহানাল্লাহ পড়ার সমান সওয়াব হয়। পবিত্র মক্কায় বিশেষ আমল বিশেষ একটি আমল, যা মক্কা ছাড়া কোথাও হবে না। নামাজ-রোজা, তেলাওয়াত-জিকির বাংলাদেশেও করতে পারেন। কিন্তু একটি আমল এমন আছে, যা মক্কা ছাড়া আর কোথাও করা যাবে না। কী সেই আমল? সেটা হলো 'আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করা'। এ আমল মক্কার সঙ্গে খাস। 'আল্লাহর ঘরের চতুর্দিক দিয়ে তাওয়াফ' এটা মক্কা ছাড়া আর কোথাও করা যাবে না। সুতরাং যারা সুযোগ পাবেন, তারা হজে গিয়ে বেশি বেশি তাওয়াফ করবেন। তাওয়াফের সওয়াব নামাজের চেয়েও বেশি। এজন্য সময় পেলেই বেশি বেশি তাওয়াফ করবেন। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আল্লাহর ঘর তাওয়াফ করার পর দুই রাকাত নামাজ পড়ে, (সব তাওয়াফের পরই মাকামে ইবরাহিমের পেছনে দুই রাকাত নামাজ পড়তে হয়) সে লাখ টাকা দামের একটি গোলাম আযাদ করার সমান সওয়াব পাবে।' (ইবনে মাজাহ :২৯৪৭)। অন্যত্র এরশাদ করেন, 'এই তাওয়াফ করার সময় বান্দা যখন এক পা উঠায়, তখন আল্লাহ তায়ালা তার একটি গোনাহ মাফ করে দেন। আর যখন আরেকটি পা ফেলে, তখন তার আমলনামায় একটি সওয়াব লিখে দেন।' (তিরমিজি : ৮৮২)। তাহলে একটি তাওয়াফের মধ্যে আপনার পা কতবার উঠবে আর কতবার আপনি পা ফেলবেন? কদমে কদমে আল্লাহ তায়ালা একটি করে গোনাহ মাফ করে দেবেন ও একটি সওয়াব লিখে দেবেন। পবিত্র মদিনায় বিশেষ আমল মক্কার মতো মদিনাতেও বিশেষ আমল আছে। মদিনার বিশেষ আমল হলো, রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করা। এটা মদিনা ছাড়া আর কোথাও নেই। রাসুল (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করলে কী লাভ হবে? রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেন, 'যে ব্যক্তি হজ করতে এসে আমার কবর জিয়ারত করবে আমার মৃত্যুর পর- সে যেন আমার জীবদ্দশায় আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করল।' (মেশকাত : ২৭৫৬)। রাসুল (সা.) কে জীবদ্দশায় যারা দেখেছেন, তারা সাহাবি। তারা সবাই জান্নাতি। তাদের কিছু গোনাহ থাকলেও আল্লাহ মাফ করে দিয়েছেন। আর আজ তার কবর যারা দেখবে, তারাও জীবদ্দশায় দেখার মতো। মানে তারাও জান্নাতি। অন্যত্র বর্ণিত আছে, রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আমার কবর জিয়ারত করল, আমার কবর দেখল, আমার কবরের পাশে এলো, তার জন্য সুপারিশ করা আমার ওপর ওয়াজিব হয়ে যায়।' (শুয়াবুল ঈমান : ৪০০০)। নবীর শাফায়াত যদি কারও নসিবে এসে যায়, তাহলে তার আর কোনো অসুবিধা নেই। এটা একটা বিশেষ আমল, যা মদিনা ছাড়া আর কোথাও সম্ভব নয়। রাসুল (সা.) এরশাদ করেন, 'যে ব্যক্তি আমার কবরের পাশে এসে সালাম দেয়, সেটা আমি শুনি। আর যে ব্যক্তি দূর থেকে সালাম দেয়, সেই সালাম ফেরেশতার মাধ্যমে আমার কাছে পৌঁছানো হয়।' (মেশকাত : ৯৩৪)। অনুলিখন : মুহাম্মাদ আশরাফুল আলম

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়