Tuesday, December 22

সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান ইসলামে নেই


মাহমুদ আহমদ: বিশ্বময় শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহপাক ইসলাম নামক ধর্মকে মনোনীত করেছেন। ইসলামে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের স্থান নেই। অমুসলিমদের উপাসনালয়ে হামলা চালানোকে ইসলাম কঠোরভাবে নিষেধ করেছে। শুধু তাই নয়, বরং অমুসলিমরা যেসবের উপাসনা করে সেগুলোকেও গালমন্দ করতে আল্লাহপাক বারণ করেছেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহপাক বলেছেন, 'আল্লাহকে বাদ দিয়ে তারা যাদের উপাস্যরূপে ডাকে তোমরা তাদের গালমন্দ করো না। নতুবা তারা শত্রুতাবশত না জেনে আল্লাহকেই গালমন্দ করবে।' (সূরা আন আম : ১০৮)। এ আয়াতে শুধু প্রতিমা পূজারিদের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য নির্দেশ দান করা হয়নি, বরং সব জাতি এবং সম্প্রদায়ের মাঝে বন্ধুত্ব এবং সৌহার্দ স্থাপনের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। কোনো ধর্মের উপাসনালয় বা ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়ার শিক্ষা ইসলামে নেই। ইসলাম ধর্মের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব হলো, ইসলাম প্রত্যেক মানুষকে ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রদান করে। এ স্বাধীনতা শুধু ধর্মবিশ্বাস লালনপালন করার স্বাধীনতা নয় বরং ধর্ম না করার বা ধর্ম বর্জন করার স্বাধীনতাও এ ধর্মীয় স্বাধীনতার অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র কোরআনে আমরা দেখতে পাই, মহান আল্লাহ তায়ালা যখন আদম সৃষ্টির মহাপরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন তখন ফেরেশতারা আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'তুমি কি সেখানে এমন কাউকে সৃষ্টি করতে যাচ্ছ যে, সেখানে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে আর রক্তপাত ঘটাবে? এর উত্তরে সর্বজ্ঞানী খোদা শুধু এটাই বলেছিলেন, 'ইনি্ন আলামু মালা তালামুন।' অর্থাৎ আমি যা জানি, তা তোমরা জানো না।' (বায়হাকি)। লক্ষণীয় বিষয় হলো, মহান আল্লাহ কিন্তু বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা রক্তপাতের কথা অস্বীকার করেননি। সে কথার উল্লেখ না করে তার উত্তরে তিনি শুধু তাঁর মহাজ্ঞানের বিষয়ে ফেরেশতাদের সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছিলেন। ধর্ম জগতের ইতিহাসে এক ঝলক ভাষাভাষা দৃষ্টি দিলে বাহ্যত ফেরেশতাদের কথাই ঠিক বলে মনে হবে। আপাতদৃষ্টিতে মনে হবে, যেখানে ধর্ম সেখানেই অশান্তি, যেখানেই ধর্ম সেখানেই বিগ্রহ ও নৈরাজ্য। কিন্তু না, একটু মনোযোগ দিয়ে গভীর দৃষ্টিতে দেখুন। দেখতে পাবেন, এই বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য ধার্মিকদের পক্ষ থেকে নয় আর আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সত্য ধর্মের অনুসারীদের পক্ষ থেকেও নয়। কিন্তু যারা সমাগত সত্য-সুন্দর জ্যোতিকে অস্বীকার করে অন্ধকারের পূজারি হয়ে থাকতে চেয়েছে, যারা তাদের প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও গলিত-মথিত সমাজ দর্শন পরিত্যাগ করতে চায়নি- এসব অরাজকতা ও সন্ত্রাস সব সময় সর্বযুগে তাদের পক্ষ থেকে পরিচালিত হয়েছে। পবিত্র কোরআনের ঐশী বাণীটি ভালোভাবে পড়লেই বিভিন্ন স্থানে হজরত আদম (আ.) থেকে আরম্ভ করে সর্বশেষ শরিয়তকে আর পূর্ণতম নবী খাতামান নাবিয়্যিন ও শ্রেষ্ঠ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত ইতিহাসের এই একই ধারার পুনরাবৃত্তি আমরা লক্ষ্য করব। মহানবী, বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পবিত্র জীবনী সবাইকে স্মরণ রাখতে হবে। তিনি সত্য প্রচার ও প্রসারের কারণে সারা জীবন মার খেয়েছেন, কিন্তু কারও প্রতি ধর্মের ক্ষেত্রে বলপ্রয়োগ করেননি। বরং তাঁর পক্ষ থেকে পরিচালিত সব আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ ছিল সবার ধর্মীয় স্বাধীনতা নিশ্চিত করার জন্য। সূরা হজের দুইটি আয়াত এ বিষয়ে স্পষ্ট নির্দেশনা দান করে। আল্লাহ তায়ালা বলছেন, 'যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের (যুদ্ধ করার) অনুমতি দেয়া হলো, কেননা তারা অত্যাচারিত। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদের সাহায্যকল্পে পূর্ণ ক্ষমতাবান। যাদের তাদের নিজ বাড়িঘর থেকে অন্যায়ভাবে শুধু এ কারণে বের করে দেয়া হয়েছে যে, তারা বলে, 'আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক প্রভু! আল্লাহর পক্ষ থেকে যদি মানুষের একদলকে মানুষের আরেক দল দিয়ে প্রতিহত না করা হতো তাহলে সাধু-সন্ন্যাসীদের মঠ, গির্জা, ইহুদিদের উপাসনালয় (ধ্বংস করে দেয়া হতো) যেখানে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্মরণ করা হয়। আর আল্লাহ অবশ্যই তাকে সাহায্য করেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাশক্তিধর ও মহাপরাক্রমশালী।' (সূরা আল হজ : ৩৯-৪০)। মদিনায় অবতীর্ণ উল্লেখিত আয়াত দুইটিতে স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে, মহানবী (সা.) এর অনুসারীরা দীর্ঘকাল মক্কায় অত্যাচারিত ও নিপীড়িত থাকার পর যখন তাদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য আবারও মক্কার কাফেররা যুদ্ধ চাপিয়ে দিল কেবল তখনই আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, একথা বলা হয়েছে, কেবল মুসলমানদের ধর্মীয় স্বাধীনতা ও অধিকার রক্ষার্থে এই যুদ্ধ পরিচালিত হবে না। বরং মঠ, গির্জা, মন্দির ও মসজিদ তথা সব ধর্মের উপাসনালয় রক্ষার্থে আল্লাহ এ ব্যবস্থা নিয়েছেন। সব ধর্মীয় ও বিবেকের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার চেয়ে স্পষ্ট ঘোষণা আর কি হতে পারে! যেখানে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ, সেখানে ইসলাম নেই। ইসলাম শান্তির ধর্ম। ইসলাম কল্যাণের ধর্ম। সারা পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলাম নামের ধর্ম আল্লাহ তায়ালা এই পৃথিবীতে ইসলামের নবী, বিশ্বনবী এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ শরিয়তবাহী নবী হজরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে শান্তির অমিয় বাণী দিয়ে পাঠিয়েছেন। অথচ মহানবী (সা.) এর নামেই সমাজে করা হচ্ছে বিশৃঙ্খলা। ইসলাম ধর্মে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই। যারা সামাজিক পরিমন্ডলে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে, রক্তপাত ঘটায়, ধ্বংসযজ্ঞ এবং নৈতিকতা বর্জিত ইসলামিক কর্মকান্ড চালায় তারা কখনও শান্তির ধর্ম ইসলামের অনুসারী হতে পারে না। শ্রেষ্ঠ নবীর উম্মত হওয়ার দাবি সবাই করতে পারে, কিন্তু কার্যকলাপে শ্রেষ্ঠত্ব না দেখালে তারা কখনও প্রকৃত ইসলামের অনুসারী বলে আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য মর্যাদা পাবে না।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়