Friday, December 25

মোদিকে যে অস্ত্র উপহার দিলেন পুতিন

মোদিকে যে অস্ত্র উপহার দিলেন পুতিন
কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলার নবাব মির জাফরের বংশধরদের ব্যবহৃত তরবারি দিয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিনরাশিয়া সফরকালে মোদিকে এ উপহার দেন পুতিনভারতের মিডিয়া সূত্রে এমন তথ্যই জানা গেছে।

নানাবিধ আন্তর্জাতিক চুক্তির অবশ্যম্ভাবী গাম্ভীর্য এবং সুদূরপ্রসারী অভিঘাত ছাপিয়ে ভারতবাসীর মনে যে বিষয়টি আনন্দ দেয় সেটি পুতিনের দেয়া এ উপহারই।

নরেন্দ্র মোদির দু'দিনের রাশিয়া সফর কূটনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ নিঃসন্দেহে। তবে সৌহার্দ্যের চিহ্নস্বরূপ পুতিন মোদিজিকে বাংলার নাজাফি বংশের--- (এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা মীর জাফর)--- একখানি তলোয়ার উপহার দিলেন।

আঠেরো শতকের তলোয়ারটির গায়ে নাকি সেই সময়কার শৈল্পিক রীতি-রেওয়াজ অনুযায়ী অপূর্ব কারুকাজ। কোপানোর অস্তর হুনুরি লাগিয়ে কারুকার্যখচিত শিল্পবস্তুতে রূপান্তরিত করতে হবে এহেন তামাশা সে যুগের জায়েজ ধরন ছিল বটে, তবে আর একটি ব্যাপার এ ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সে সূত্র ধরেই।

তলোয়ারের সঙ্গে পুতিন মোদীজিকে মহাত্মা গান্ধীর রোজনামচা লেখা একখানি ডাইরির পাতাও উপহার দিয়েছেন। তলোয়ারের গায়ে রূপোর কারুকাজ আঘাতের চোট খানিক প্রশমিত করত কিনা জানার উপায় নেই বটে, তবে এটি দ্বারা যে শান্তি প্রক্রিয়ার শুরুয়াত হল, তার ওপর ডাইরির পাতা অহিংস মতাদর্শের একখানি প্রলেপ চড়ালো সন্দেহ নেই।

নাজাফি বংশের সঙ্গে মীর জাফরের প্রত্যক্ষ যোগ নিয়ে নিন্দুকেরা নানা তির্যক ইঙ্গিতে মাতবেন নিশ্চই, তবে সে সবই অদরকারি এবং নিঃসার প্রলাপ মাত্র। বরং সন্দেহের বিষয় হিসেবে ওই অহিংস মতাদর্শের অন্তরালে খোলা তলোয়ার আস্ফালনের গুরুত্ব অসীম। গান্ধীজির সহিষ্ণু ভারত গড়াই মোদীজির লক্ষ--- কারই বা নয়--- তবে, সে মোকামে পৌঁছতে যদি রক্তগঙ্গা বইয়ে দেওয়ার দরকার পড়ে, তা হলে রুশ প্রধানমন্ত্রীর সমর্থন নিয়ে হয়তো মোদীজিকে ভাবতে হবে না--- আর এ ক্ষেত্রে শুধু বাংলা, বিহার, ওড়িষ্যা নয়, গোটা ভারতের ঝুঁটি ধরে নাড়ানোতথা দক্ষিণ এশিয়া জুড়ে সুতোয় ঝোলানো পুতুলের দোল খাওয়ার সনদ তো মিলেই গেছে যদি মীর জাফরের প্রসঙ্গ টানা নিন্দুকদের এক ছটাকও পাত্তা দিতে হয়।

সত্যি বলে কী, ওই ঢাকা চাপা দেওয়া, এই বার্তার আবডালে সেই অর্থ নির্মাণই হয়তো একমাত্র পথ। রুশ বিমান সিরিয়ায় বোমা ফেলেছে কারুর তোয়াক্কা না করে, শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে কি না সে নিয়ে জোরগলায় এই মুহূর্তে কিছু বলা না গেলেও, বিকল্প ব্যবস্থার খোঁজ কেউই দিতে পারেননি। তলিয়ে দেখলে, ওই সামরিক অভিযানটিও গান্ধীজির রোজনামচার পাতায় আচ্ছাদিত ছিল।

বিদেশি রাষ্ট্রের অতিথিদের দেশজ শিল্পবস্ত্ত উপহার দেওয়ার ধরন নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে তলোয়ার এবং চিঠি দুটোই মোদীজির দেশের সামগ্রী। তা হলে তলোয়ারটির সঙ্গে, অর্থাত্‍‌, শিল্পকলার নিদর্শনটি আইনমাফিক জায়েজ মালিকের হাতে তুলে দেওয়ার মধ্যে দিয়ে কি একটি বিশেষ যুগের স্মৃতিও ফেরানো হল? সে সময়ের ন্যায় অন্যায়ের যুক্তি, শাসন শোষণের কাঠামো, রাজধর্ম ও প্রজাপালনের আদলও কি বহন করে ওই তলোয়ার? প্রশ্নটিকে একেবারে বাদ দেওয়া যাবে না, কারণ মৈত্রী এবং শান্তি বিষয়গুলি বহুমাত্রিক সে নিয়ে সন্দেহের অবকাশ না থাকলেও, প্রান্ত অর্থগুলি যে দ্ব্যর্থবোধক নয় সে নিয়েও সন্দেহ নেই।

পুতিন এবং মোদীর রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক আদানপ্রদানের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা এই দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলোচনা থেকেই হতে পারে। পুতিন অন্তত গোড়াতেই নিজের অবস্থানটি পরিষ্কার করে রাখলেন।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়