Monday, December 14

শিকলে বাঁধা জীবন!


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: সকালের আলো চোখে পড়ে না। পা দুটো শিকলে বাঁধা। রাতের অন্ধকার সবার আগে সে চোখে জেঁকে বসে। ওই চোখ মানসিক ভারসাম্যহীন, বিকারগ্রস্ত। যাকে সবাই ‘পাগল’ বলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেবে বাংলাদেশে এমন রোগীর সংখ্যা প্রায় দেড় কোটি। যাদের আপনজনরা বুঝতে চান না, মানসিক ভারসাম্যহীনতা একটা রোগ। কোনমতেই একে ‘পাগলামি’ বলা চলে না। দেশের এই বিপুল সংখ্যক মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির জন্য সরকারি ঠিকানা বলতে একটাই-‘পাবনা পাগল গারদ’। ১৯৫৭ সালে এটির কার্যক্রম শুরু হয়েছিল একটি বাড়িতে। পরে ১৯৫৯ সালে হাসপাতালটি হেমায়েতপুরে স্থানান্তর করা হয়। শুরুতে মানসিক হাসপাতালটি ছিল ৬০ শয্যাবিশিষ্ট। পরবর্তীতে তা ৫০০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। আজও সেই অবস্থায় আছে। আসন বাড়েনি। বাড়েনি সুযোগ সুবিধা। বাংলাদেশে মানসিক রোগীদের ‘পাগল’বলা হয়, যা অনেকক্ষেত্রে নেতিবাচক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মানসিক রোগীদের সম্পর্কে এমন ভ্রান্ত ধারণা সমাজের প্রতিটি স্তরে। মানসিক রোগীদের চিকিৎসায় যা এক অন্তরায় বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। বিখ্যাত ফটো সাংবাদিক অ্যালিসন জোইসি গত বছর বাংলাদেশে এসেছিলেন মানসিক রোগীদের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে। সর্বপ্রথম তিনি ঢুঁ মারেন পাবনায়। ক্যামেরার ফোকাসে বেশ কিছু তথ্য তুলে আনেন। অ্যালিসন তার সফর শেষে দ্য গার্ডিয়ানকে বলেন, মানসিক রোগীদের জন্য বাংলাদেশের অবস্থা মোটেই সুখকর নয়। সরকারের স্বাস্থ্যখাতে যে বাজেট তার মধ্যে ০.৫ শতাংশ বরাদ্দ থাকে এইসব রোগীদের জন্য। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মুখপাত্র জামান বলেন, বাংলাদেশে মানসিক সমস্যাকে রোগ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না। এটাকে সবাই নিয়তি বলেই গণ্য করে। অথচ একটু সচেতন হলে ওই সব লোকদের সারিয়ে তোলা সম্ভব। তারাবি নামের এক ১৬ বছর বয়সী তরুণীকে খুঁজে বের করেন অ্যালিসন। তিনি সিজোফ্রেনিয়াতে আক্রান্ত। পাবনায় নিয়ে যাওয়ার পাঁচ মাস পর ডাক্তাররা তাকে সুস্থ বলে ঘোষণা করেন। এরপর বাড়ি নিয়ে আসলেও পরিবারের সদস্যরা তারাবিকে নিরাপদ মনে করেন না। তাই লোহার শিকলে তাকে বেঁধে রাখা হয়। তারাবির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি দুই বছর আগে আত্মহত্যা করা চেষ্টা করেছিলেন। ছাড়া পেলেই এদিক-সেদিন দৌড় মারেন। তাই বাধ্য হয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। তারাবিকে বদ্ধ অবস্থায় প্রায়ই কাঁদতে দেখা যায়। রফিকুল। বয়স ২২। তিনিও এক সময় পাবনায় ছিলেন। কিন্তু ডাক্তার তাকে সুস্থ বলে মনে করেন। তাই বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। রফিকুলকে বাড়ি আনার পর শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রফিকুল ছাড়া পেলেই মানুষকে আক্রমণ করেন। অ্যালিসন মনে করেন, এসব রোগীকে হাসপাতালে না রেখে পরিবারের কাছে রেখে চিকিৎসা করলে ভাল সুফল পাওয়া যায়। রোগীদের অবচেতন মনে ‘পাগল’ শব্দটি কখনোই প্রবেশ করতে দেয়া উচিত না। তাতে সমস্যা বাড়ে। সহানুভূতি, মমতা আর সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে এসব রোগীকে সারিয়ে তোলা সম্ভব। তথ্য: দ্য টেলিগ্রাফ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়