Tuesday, November 10

অলসতা দূর করে কফি


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: কফির গন্ধই অলস দিনকে চনমনে করে তোলে। পেটে কফি পড়লে মনের গুমোট কাটতে বেশি সময় লাগে না। কফি কমাবে স্কিন ক্যান্সারের ঝুঁকি ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমা এমন এক ধরনের স্কিন ক্যান্সার, যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে থাকে আর তার ঝুঁকি কমাতে পারে কফি পানের অভ্যাস। গবেষণায় দেখা যায় যারা কফি পান করেন না, তাদের তুলনায় যারা দৈনিক চার কাপ বা তার বেশি কফি পান করে থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে ম্যালিগন্যান্ট মেলানোমার ঝুঁকি কমে যায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত। গবেষণা থেকে দেখা যায়, চার কাপ বা তার বেশি কফি পান তেমন ক্ষতির নয়। তবে আপনার যদি খুব বেশি কফি পানের অভ্যাস না থাকে, তবে হুট করে চার কাপ কফি পান শুরু করে দেবেন না, তাতে হিতে বিপরীতও হতে পারে। তবে তার মানে এই নয় যে, বেশি করে কফি পান করলেই স্কিন ক্যান্সার থেকে রেহাই পাবেন। স্কিন ক্যান্সার হওয়ার মূল কারণ— কোনো রকম নিরাপত্তা ছাড়া সূর্যের আলোয় বেশি সময় কাটানো। তাই অতিরিক্ত সূর্যের আলো এবং অতিবেগুনি রশ্মি থেকে দূরে থাকাই উত্তম। যারা নিয়মিত কফি পান করতে অভ্যস্ত, তাদের জন্য সুখবর, কফি পানের অভ্যাস দেয় কয়েক ধরনের স্কিন ক্যান্সার থেকে নিরাপত্তা। দিনে কত কাপ কফি ফিমেলফার্স্ট ডটকো ডটইউকের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, স্বাস্থ্য বিষয়ক নির্দেশিকা অনুসারে শরীরে খুব বেশি হলেও দৈনিক ৪০০ মিগ্রাম ক্যাফেইন নেয়া যেতে পারে। তবে কফি ছাড়াও চা, চকোলেট ও রঙিন কোমলপানীয়তেও আছে ক্যাফেইন। সারা দিনে কফি ছাড়া এসবও খাওয়া পড়ে। তাই সব মিলিয়ে দেখা যায়, শরীরে অতিরিক্ত ক্যাফেইন চলে যাচ্ছে। তাহলে দিনে কত কাপ কফি নিরাপদ? এমন প্রশ্নের জবাবে গবেষকরা বলছেন, এক কাপ পরিমাণ চায়ে প্রায় ৩০ থেকে ১০০ গ্রাম ক্যাফেইন রয়েছে, যেখানে এক কাপ ইনস্ট্যান্ট কফিতে আছে ৬০ থেকে ১০০ গ্রাম এবং এসপ্রেসো কফিতে ৪০ থেকে ৯০ গ্রাম। গবেষকরা বলছেন, দিনে চার কাপের বেশি কফি পান না করা হলে এ সমস্যা হয় না। বিজ্ঞানীরা বলছেন, দৈনিক দুই থেকে তিন কাপ কফি পান আসলে খারাপ নয়। তাছাড়া কফিতে আছে ফ্ল্যাভনয়েড, যা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে ও বিভিন্ন ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ইত্যাদির ঝুঁকি কমায়। ক্যাফেইন ব্যথা কমাতে সহায়ক, ঠাণ্ডা লাগলে শ্বাসনালি প্রসারিত করতে সাহায্য করে এবং ঘুম তাড়ায়, মেজাজ ভালো রাখে। তাই কফিকে যতটা খারাপ ভাবা হয়, ততটা নয়। উপকার-অপকার যুক্তরাজ্যের দ্য গ্লেন হাসপাতাল ব্রিসটলের কনসালট্যান্ট সার্জন এবং ওজন কমানোর বিশেষজ্ঞ স্যালি নরটন, ক্যাফেইন গ্রহণের সুবিধা-অসুবিধা সম্পর্কে বলেছেন— িক্যাফেইন স্নায়ুতন্ত্র উজ্জীবক এবং ডাইউরেটিক বা মূত্র উৎপাদন বাড়ায়, সে কারণে বেশি কফি পান করলে বারবার বাথরুমে যেতে হয় এবং এতে বয়স্ক বা অসুস্থ মানুষের পানিশূন্যতা দেখা দিতে পারে। আবার কফি পান হূদস্পন্দন বাড়ায়, হাত কাঁপতে পারে কারো কারো, ঘুমেরও ব্যাঘাত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, ক্যাফেইন হৃপণ্ডের রক্ত সরবরাহকারী ধমনিতে রক্ত চলাচল ধীর করে দেয়। বুক ধড়ফড়ানি, অনিয়মিত হূদস্পন্দন বা উচ্চ রক্তচাপের কারণেও শরীরের অতিরিক্ত ক্যাফেইন দায়ী। িগবেষণায় প্রমাণিত, যারা দিনে তিন কাপের বেশি কফি পান করেন, তাদের শান্তির ঘুম খুব কমই হয়। আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কফি খান না, তাদের থেকে কফি পানকারীদের ৭৯ মিনিট কম ঘুম হয়। তাই ঘুমের সমস্যা থাকলে কফিকে ‘না’ বলুন। ক্যাফেইন শরীরের অ্যাড্রেনালিন নামক এক ধরনের হরমোনের মাত্রা বাড়ায়। যে কারণে শরীরের টানটান উত্তেজনা বা ঘাবড়িয়ে যাওয়ার অনুভূতির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। দৈনিক পাঁচ কাপের বেশি কফি খেলে গর্ভধারণের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। যদি মা হতে চান, তবে অবশ্যই কফি খাওয়ার পরিমাণ কমাতে হবে। দৈনিক ২০০ মিগ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে গর্ভের শিশুর ক্ষতি হওয়ার পাশাপাশি জন্মত্রুটি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে কোনো খেলার আগে কফি পান শরীরে আনে আলাদা শক্তি। কফি শরীরে উদ্যম ও উৎসাহ তৈরি করে। গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক চাপের সময় ২০০ মিগ্রাম ক্যাফেইন শরীরে গেলে মনোযোগ বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে প্রমাণ মিলেছে অ্যালঝেইমার (স্মৃতিভ্রংশ) রোগের ক্ষেত্রে বিশেষ উপকারী পদার্থ ক্যাফেইন। ক্যাফেইন যুক্ত বা বিহীন, যে কোনো ধরনের কফি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগ ও কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো কোনো সময় লিভার বা যকৃতের মেদ কমাতে ক্যাফেইন কার্যকর ভূমিকা পালন করে। কফি পানে সতর্কতা গবেষকরা জানিয়েছেন, প্রত্যেক মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রিত হয় বডি ক্লকের মাধ্যমে, যার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাবক হচ্ছে সূর্যের আলো। আর এ বডি ক্লক কর্টিসল নামে একটি হরমোন নিঃসরণ করে আমাদের সতর্ক ও জাগ্রত করে। সাধারণ অবস্থায় সকাল ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কর্টিসল হরমোন সবচেয়ে বেশি নিঃসরণ করে। ফলে এ সময়ে স্বাভাবিকভাবেই দেহে যথেষ্ট উন্নত মানের ‘প্রাকৃতিক ক্যাফেইন’ থাকে। ফলে এ সময় অতিরিক্ত ক্যাফেইনের দরকার হয় না। উপরন্তু যখন শরীরে যথেষ্ট ‘ক্যাফেইন’ থাকে, তখন আরো ক্যাফেইন গ্রহণ এর কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাই ‘যখন ক্যাফেইনের দরকার নেই, তখন ক্যাফেইন গ্রহণে দেহ দ্রুত তা সহ্য করে নেয়। ফলে আপনার দেহের উদ্দীপনা ধ্বংস হয়ে যায়।’ শরীর চাঙ্গা করতে ও ক্ষতিকর প্রভাবমুক্ত রাখতে কফি পানের জন্য কিছুটা ভিন্ন সময়সূচির কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। সাধারণ মানুষের কর্টিসল মাত্রা সর্বোচ্চ পরিমাণে থাকে সকাল ৮টা থেকে ৯টা, দুপুর ১২টা থেকে ১টা ও বিকাল সাড়ে ৫টা থেকে সাড়ে ৬টার মধ্যে। এ কারণে কফি বিরতি হওয়া উচিত— সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা ও ১টা থেকে সাড়ে ৫টার মধ্যে, জানিয়েছেন আইওয়াটা। কফি পানে অনেকটাই সতর্ক থাকা ভালো। কারণ এতে রয়েছে ক্রিয়াশীল মাদক ক্যাফেইন। তাই অতিরিক্ত কফি পান, আপনার সাময়িক মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটাতে পারে। ক্যাফেইন আসক্তি থেকে সৃষ্টি হয় অস্থিরতা, নার্ভাসনেস, উত্তেজনা, রাগ, পরিপাকজনিত অবসাদ, পেশিতে টান পড়া, অকারণে কথা বলা, ঘুম না হওয়া, দ্রুত ও অনিয়মিত হার্টবিট ইত্যাদি। তাই কফি পান করার পর যদি এগুলোর মতো উপসর্গ টের পান, তবে এটা কফি ইনটক্সিকেশন হতে পারে। সাধারণত ক্যাফেইন মানুষকে উদ্যমী হতে সাহায্য করে, কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় ও ঘুমভাব কাটাতে সাহায্য করে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী কফি পান করতে হবে। দিনে দুবারের বেশি কফি পান না করাই ভালো। এত বাঁধাধরা নিয়মের মধ্যে থেকেও কিছু উপকারিতাও আছে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়