কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
র্শীষ যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকরের পর তার দাফন
হবে গ্রামের বাড়ি রাউজানের গহিরায় বায়তুল বিলালের পারিবারিক কবরস্থানে।
মসজিদ সংলগ্ন সাকা চৌধুরীদের পুরনো পারিবারিক কবরস্থানে তাদের
দাদা-বাবা-চাচাদের দাফন করা হলেও সেখানে আর জায়গা না থাকায় এখন তাদের নতুন
বাড়ি বায়তুল বিলালের কবরস্থানেই তাকে দাফন করা হবে। আর সাকা চৌধুরীর ছোট
ভাই সাইফুদ্দীন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে
পরিবার। সাকা চৌধুরীর পারিবারিক সূত্র বাংলামেইলকে বিষয়টি জানিয়েছে।
শনিবার সাকা চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে
প্রাণভিক্ষা চাওয়ার বিষয়টি অনেকটা নিষ্পত্তি হওয়ার পর এখন রাষ্ট্রপতি যদি
প্রাণ ভিক্ষা না করেন তাহলে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি এখন সময়ের ব্যাপার
মাত্র। আইন-শৃংখলা বাহিনীর তৎপরতা ও ঢাকা কেন্দ্রিয় কারাগারের বর্তমান
অবস্থায় অনেকটা অনুমেয় প্রাণভিক্ষার আবেদন ‘নাকচ’ হয়ে সেটি কারা কতৃৃপক্ষের
কাছে পৌঁছছে শিগগিরই। আর শনিবার রাতেই দুই যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর
ফাঁসি কার্যকর হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে পরিবারকে শেষ
সাক্ষাতের জন ডেকে পাঠিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
সেকারণে সাকা চৌধুরীর দাফনের বিয়ষটিও
পরিবারে আলোচনায় রয়েছে। এরআগেও রিবিউ আবেদন আপীল বিভাগে খারিজ হওয়ার পর
সাকার সাথে দেখা করে বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে রাউজানের গহিরায়
অবস্থানাকারী সাকার চাচাতো ভাই ফেরদৌস চৌধুরীকে ফোনে কবর প্রস্তুত করতে
বলেছিলেন সাকাপত্মী ফরহাত কাদের চৌধুরী। যদিও গত দুই দিন নানা নাটকীয়তায়
সাকা চৌধুরীর ফাঁসি কার্যকর হয়নি।
শনিবার বিকেলে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর
গহিরার বাড়িতে সরেজমিনে দেখা যায়, সাকা চৌধুরীর এলাকায় সুনশান নীরবতা।
সাকার ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়েও কেউ কোনো কথা বলছেন না। এনিয়ে কারো মধ্যে
প্রতিক্রিয়া নেই। সাংবাদিক পরিচয় পেলেই এড়িয়ে চলছেন। তবে একসময়ে লোকে
লোকারণ্য থাকা এই বাড়িটাতে এখন অনেকটা ভূতড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, রাউজানের
গহিরার সাকা চৌধুরীর দাদা ফজলুল কাদের চৌধুরীর লাল দালানের বাড়ি। সেই
বাড়ির বাসিন্দা রাউজানের সাংসদ ও চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সহ
সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী, ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহফজুুল
হায়দার চৌধুরী রোটন আর মুসলিম লীগ নেতা ও সাবেক স্পিকার ফজলুল কাদের
চৌধুরীর তথা তার পুত্র সাকা চৌধুরীর বাড়ি। ওই বাড়ির সামনে একটি পুকুর।
পুকরের দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শ্বে সাকা চৌধুরীদের পারিবারিক মসজিদ। মসজিদ
লাগোয়া পারিবারিক কবরস্থানেই পূর্বে দাফন করা হয়েছে সাকা চৌধুরীর দাদা
আব্দুল জব্বার চৌধুরী, তার পুত্র ফজলুল কাদের চৌধুরী, ফজলুল কাদের চৌধুরীর
নিকটাত্মীয় ফজলে কাদের চৌধুরীসহ (এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী পিতা) তাদের
বংশের লোকজনদের। এই কবরস্থানে দাফন করার মত কোনো জায়গা নেই নতুন করে কাউকে
দাফন করার জন্য।
এই মসজিদের পূর্ব পার্শ্বেই নতুন করে বিলাস
বহুল বাড়ি নির্মাণ করেছেন ফজলুল কাদের চৌধুরী ছেলেদের নতুন বাড়ি ‘বায়তুল
বিলাল’। সেই বাড়ির পাশেই সাকা পরিবারের জন্য নতুন করে মাটি ভরাট করে
পারিবারিক কবরস্থান বানানো হয়েছে। সেখানে গত কয়েকমাস আগে অসুস্থতাজনিত
কারণে মৃত্যুবরণকারী সাকা চৌধুরীর ছোট বাই সাইফুদ্দীন কাদের চৌধুরীর মরদেহ
সমাহিত করা হয়েছিল। আর যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীর দাফনও হবে এই কবরস্থানে
তার ভাই সাইফুদ্দীন কাদের চৌধুরীর কবরের পাশেই।
শনিবার রাতে ফাঁসি কার্যকর হলে ভোরের মধ্যেই
সাকার মরদেহ সড়কপথে তার গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। আর সেই হিসেবে
যাবতীয় প্রস্ততি নিয়ে রেখেছে আইন-শৃংখলা বাহিনী। তবে এখনো পর্যন্ত কবর
খননের কাজটি শুরু করেনি তার পরিবার ও প্রশাসন। বলা হচ্ছে, ফাঁসি কার্যকর
হওয়ার পরপরই কবর খননের কাজ শুরু হবে। আর সেটি করতে বেশি সময় লাগবে না।
মরদেহ দাফনের যাবতীয় প্রস্তুতি ও মরদেহ বহনকারী গাড়ি বহরের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে পুলিশ সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামে
সহাকরি পুলিশ সুপার (হাটহাজারী) মশিউদৌল্লাহ রেজা। শনিবার সন্ধ্যার পর থেকে
নগরী ও জেলায় ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মোতায়ন করা হয়েছে
বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র্যাব ও বিজিবি।
এদিকে সাকার মরদেহ রাউজানে প্রতিহত করার
ঘোষণা দিয়েছে মুক্তিযোদ্ধাসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে দিয়ে সাকার মরদেহ নিতে দেয়া হবে না
বলে ঘোষনা দিয়েছে চবি ছাত্রলীগও। তবে এই ধরণের কোনো পরিস্থিতি ঘটাতে দেয়া
হবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার হাফিজ আক্তার।
১৯৭১ সালে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায়
গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর সাকা চৌধুরীকে
ফাঁসির আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। পরে ট্রাইব্যুনালের
রায়ের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ আদালতে আপিল করেন সাকা চৌধুরী। আপিলের রায়ে তাঁর
মৃত্যুদন্ডদেশ বহাল থাকে। আপিল বিভাগের দেওয়া পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয় ৩০
সেপ্টেম্বর। এর ১৪ দিনের মাথায় ওই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদন করেন সাকা
চৌধুরী।
২০ অক্টোবর সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন
চেম্বার আদালত ওই আবেদন শুনানির জন্য ২ নভেম্বর দিন নির্ধারণ করেছিলেন। পরে
সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানির তারিখ ১৭
নভেম্বর পুনর্নিরধারণ করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু সাকা চৌধুরীর আইনজীবীর
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে শুনানি এক দিন পিছিয়ে দেন আদালত।
১৮ নভেম্বর বুধবার প্রধান বিচারপতি
সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চার
সদস্যের বেঞ্চ সাকা চৌধুরীর ফাঁসির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ
করেছেন। ফলে চূড়ান্ত আদেশেও তাঁর ফাঁসি বহাল থাকে। ফাঁসির রায় বহাল থাকায়
সাকা চৌধুরীর সামনে সর্বশেষ রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সুযোগ
ছিলো।
পরে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৯টায় আন্তর্জাতিক
অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সিনিয়র সহকারী জজ আফতাবুজ্জমানের নেতৃত্বে একটি
প্রতিনিধি দল রায়ের অনুলিপি নিয়ে কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। সে দিন রাতেই
সাকার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়। ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস ও ডা. হাফিজ
তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন। শুক্রবার সকালে ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস
গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ আছেন।’
---
বাংলামেইল২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়