Sunday, November 8

রাকিব হত্যার দায়ে শরীফ-মিন্টুর ফাঁসি, বিউটি খালাস


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: খুলনার বহুল আলোচিত শিশু রাকিব হত্যা মামলার রায়ে দুই আসামির ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন আদালত। তিন আসামির অন্যজন খালাস পেয়েছেন। ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দু’জন হচ্ছেন- গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ ও তার সহযোগী মিন্টু খান। শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দিয়েছেন আদালত। রোববার (০৮ নভেম্বর) বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় দেন খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা। হত্যা ঘটনার মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় আর ১১ বিচারিক কার্যদিবসে এ রায় ঘোষণা করলেন আদালত, যা খুলনাসহ সারা দেশের বিচার ও আইন-আদালতের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনা। বেলা ১১টা ৪৬ মিনিটে মামলার আসামি গ্যারেজ মালিক ওমর শরীফ, তার সহযোগী মিন্টু খান ও শরীফের মা বিউটি বেগমকে খুলনা জেলা কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এর আগে সকাল সাড়ে দশটায় আদালত প্রাঙ্গণে আসেন রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম, মা লাকি বেগম ও ছোট বোন রিমি। শরীফের মা বিউটি বেগমকে খালাস দেওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মা লাকি বেগম। রায়ের পরে কান্নায় ভেঙে পড়ে লাকি বেগম বলেন, আশা করেছিলাম, খুনিদের সকলের ফাঁসি হবে। তাদের ফাঁসি হলে রাকিবের আত্মা শান্তি পাবে। আদালত প্রাঙ্গনে বার বার কান্নায় ভেঙে পড়াসহ অজ্ঞান হয়ে যান লাকি বেগম। আদালতপাড়ায় কঠোর নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। রায় শুনতে আদালতপাড়ায় সকাল থেকে উৎসুক জনতা ভিড় করেছেন। খুনিদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধনসহ মিছিল করেন তারা। রাষ্ট্রপক্ষে পিপি সুলতানা রহমান শিল্পী ও এপিপি মো. কামরুল হোসেন জোয়ার্দার, আসামিপক্ষে মাজহারুল আলম মিলন ও তৌহিদুর রহমান চৌধুরী তুষার মামলা পরিচালনা করেন। মানবাধিকার প্রতিনিধি হিসেবে মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম ও মহসিন চৌধুরী, মহিলা আইনজীবী সমিতির লায়লা স্নিগ্ধা ও কনিষ্ঠা ধর মামলা পরিচালনার জন্য বাদীপক্ষে আদালতে উপস্থিত থেকে রাষ্ট্রপক্ষকে সহায়তা করেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী মোমিনুল ইসলাম রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে বাংলানিউজকে জানান, মাত্র ৩ মাস ৫ দিনের মাথায় ও ১১ বিচারিক কার্যদিবসে আলোচিত এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের রায় ঘোষণা আমার জানা মতে দেশে এটাই প্রথম। রাকিব হত্যা মামলার মতো খুলনায় ঘটে যাওয়া চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলাগুলোর দ্রুত নিষ্পত্তি ও ফাঁসির রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন উদ্যোগ খুলনা নামে সংগঠনটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা। দ্রুততার সঙ্গে এ বিচার সম্পন্ন হওয়ার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনে বিচার বিভাগের ওপর আরও বেশি আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করছেন দৈনিক খুলনাঞ্চলের সম্পাদক মিজানুর রহমান মিলটন। গত ৩ আগস্ট বিকেলে নগরীর টুটপাড়া কবরখানা মোড়ে শরীফ মোটরসের মালিক শরীফ যানবাহনের টায়ারে হাওয়া দেওয়া (কম্প্রেসার) মেশিনের নল ১২ বছরের শিশু রাকিবের মলদ্বারে ঢুকিয়ে হাওয়া দিতে থাকেন। এতে তার পেট ফুলে ফেঁপে যায়। এক পর্যায়ে রাকিব মারা যায়। Rakib_Khulnaপরের দিন ০৪ আগস্ট রাকিবের বাবা মো. নুরুল আলম বাদী হয়ে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত শরীফ, শরীফের সহযোগী মিন্টু খান ও মিন্টুর মা বিউটি বেগমের বিরুদ্ধে সদর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২৫ আগস্ট এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এজাহারভুক্ত তিন আসামিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন। গত ০৬ সেপ্টেম্বর খুলনা মহানগর হাকিম আদালত বিচার কাজ শুরুর জন্য মামলাটি মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠান। মহানগর দায়রা জজ আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক দিলরুবা সুলতানা ০১ অক্টোবর দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় আসামিদের বিরুদ্ধে মামলাটি বিচারের জন্য আমলে গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে পৈশাচিক ওই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। গত ০৫ অক্টোবর তিন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেন আদালত। ১১ থেকে ২৫ অক্টোবর পর্যন্ত ছয় কার্যদিবসে মামলার ৩৮ সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। ২৮ অক্টোবর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা অনুযায়ী আসামিদের বক্তব্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। গত ০১ নভেম্বর যুক্তিতর্ক শুনানি শেষ হওয়ার পর ০৮ নভেম্বর মামলার রায়ের দিন ধার্য করেন বিচারক। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, সাংবাদিক, আইনজীবী, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ও সাধারণ নাগরিকদের সহায়তার কারণে মামলাটির দ্রুত রায় ঘোষণা করা সম্ভব হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়