Wednesday, July 1

রোজায় সাহরির গুরুত্ব


নাঈম আবু বকর:gd সাহরি ও ইফতার রোজার দুই প্রান্ত। আমরা রোজা সম্পর্কিত প্রথম যে কাজটি করি তা হলো সাহরি খাওয়া। সাহরি না খেলেও রোজা শুদ্ধ হয়। রোজার জন্য সাহরি বাধ্যতামূলক না হলেও ইসলাম সাহরি খেতে ব্যাপক উৎসাহ দিয়েছে। এ উৎসাহের কারণ মূলত ইসলামের মানবিক বোধ। মানুষের মানবীয় প্রয়োজনকে ইসলাম কখনোই অবজ্ঞা করেনি। ভোরে কিছু না খেয়ে সারা দিন রোজা রাখা মানুষের পক্ষে কষ্টকর। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতেও তা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। সাহরির প্রতি তাই ইসলাম যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছে। সাহরির ফজিলত রোজার জন্য সাহরি খাওয়া মুস্তাহাব। (হেদায়া : ১/১২২)। ইসলাম সাহরি খেতে নানাভাবে উৎসাহ দিয়েছে। কোরআনে সাহরির বিষয়ে উল্লেখ রয়েছে। এরশাদ হয়েছে, 'তোমরা পানাহার করো ভোরের কালো রেখা থেকে সাদা রেখা স্পষ্ট হওয়া পর্যন্ত।' (সূরা বাকারা : ১৮৭)। রাসুল (সা.) বলেন, 'তোমরা সাহরি খাও; কারণ সাহরিতে বরকত রয়েছে।' (বোখারি : ১৯২৩)। রাসুল (সা.) নিয়মিত সাহরি খেতেন। হাদিসে রাসুল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের একসঙ্গে সাহরি খাওয়ারও বিবরণ পাওয়া যায়। হজরত জায়েদ বিন সাবিত (রা.) বলেন, 'আমরা রাসুল (সা.) এর সঙ্গে সাহরি খেয়েছি; অতঃপর তিনি (ফজরের) নামাজে দাঁড়িয়েছেন।' (বোখারি : ১৯২১)। হজরত ইরবাজ বিন সারিয়া (রা.) বলেন, 'রাসুল (সা.) আমাকে রমজানে সাহরির দাওয়াত দিয়েছেন এ বলে, 'বরকতময় খাবারে শরিক হও।' (সুনানে আবু দাউদ : ২৩৪৪)। দেরিতে সাহরি খাওয়া রাসুল (সা.) সবসময়ই উম্মতের জন্য সহজতর পন্থা বেছে নিতেন। উম্মতের সুবিধার প্রতি লক্ষ রেখে যেমন তিনি সাহরি খেতে উৎসাহ দিয়েছেন, তেমনি উৎসাহ দিয়েছেন সাহরি দেরিতে খেতে। রাতের শুরুতে বা মাঝে সাহরি খেলে রোজায় অধিক কষ্ট হতে পারে বলে শেষ রাতে সাহরি খাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন তিনি। এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'তিনটি কাজ আল্লাহ তায়ালার প্রিয়- তাড়াতাড়ি ইফতার করা, দেরিতে সাহরি খাওয়া এবং নামাজে এক হাতের ওপর আরেক হাত রাখা (অর্থাৎ হাত বাঁধা)।' (তাবারানি ফিল কাবির : ৬৭৬)। রাসুল (সা.) নিজেও দেরিতে সাহরি খেতেন। হজরত আবু আতিয়া বলেন, 'আমি হজরত আয়েশা (রা.) কে বললাম, 'আমাদের মধ্যে রাসুল (সা.) এর দুইজন সাহাবি আছেন, যাদের একজন তাড়াতাড়ি ইফতার করেন এবং দেরিতে সাহরি খান; আর অপরজন দেরিতে ইফতার করেন এবং তাড়াতাড়ি সাহরি খান।' হজরত আয়েশা (রা.) প্রশ্ন করলেন, 'যিনি তাড়াতাড়ি ইফতার করেন এবং দেরিতে সাহরি খান, তিনি কে?' আমি বললাম, 'তিনি আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.)।' হজরত আয়েশা (রা.) বললেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অভ্যাসও তা-ই ছিল।' (সুনানে নাসাঈ : ২১৫৮)। সাহরি এক বিশেষ নেয়ামত পূর্ববর্তী ধর্ম, এমনকি ইসলামের শুরু যুগেও রোজাদারদের সাহরি খাওয়ার অনুমতি ছিল না। রাতে ঘুমিয়ে পড়লেই রোজা শুরু হয়ে যেত। এরপর শেষ নবীর উম্মতের প্রতি বিশেষ অনুগ্রহবশত আল্লাহ তায়ালা সাহরির অনুমতি দিয়েছেন। সাহরির প্রতি যত্নবান হওয়া তাই ওই বিশেষ নেয়ামতের শুকরিয়ারও দাবি। হাদিসে আছে, 'আমাদের ও আহলে কিতাবদের রোজার পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।' (মুসলিম : ১০৯৬)। সাহরিতে বিশেষ যে ভুল হয় সাহরির ক্ষেত্রে আমাদের যেসব ভুল হয়, তার মধ্যে অন্যতম ফজরের আজান পর্যন্ত খানাপিনা চালিয়ে যাওয়া। অনেকে মনে করেন, আজান পর্যন্তই সাহরির সময় থাকে। এ ধারণা ঠিক নয়। আমাদের দেশে ফজরের আজান সাহরির সময় শেষ হওয়ার কয়েক মিনিট পর দেয়া হয়। মূলত সতর্কতার খাতিরেই এ বিলম্ব করা হয়ে থাকে; কারণ হানাফি মাজহাবে সময়ের আগে ফজরের আজান শুদ্ধ হয় না। তাই আজানের ক্ষেত্রে সতর্কতা যেমন একটু দেরিতে দেয়া, তেমনি সাহরির ক্ষেত্রে সতর্কতার দাবি সময় শেষ হওয়ার সম্ভাবনা শুরুর আগেই খাওয়া বন্ধ করা। দ্বীনের সব কাজেই সতর্কতা প্রশংসনীয়। রমজানের মহান মাস চলছে। হাতের নাগালে সওয়াবের নানা উপলক্ষ। সাহরি খাওয়ার মতো একটি মানবীয় কাজেও রয়েছে সওয়াবের ঘোষণা। হাদিসে এসেছে, 'সাহরি যারা খান তাদের প্রতি আল্লাহ রহমত বর্ষণ করেন, ফেরেশতারা তাদের জন্য দোয়া করেন।' (মুসনাদে আহমাদ : ১১৪১৪)। পুণ্যের এ ভরা মৌসুমে সাধ্যমতো সওয়াব অর্জনে সচেষ্ট হওয়াই সচেতন মুসলমানের কাজ।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়