কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:
ন্যাভিগেশন ও লোকালাইজেশন প্রযুক্তির নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে এবার নাবিক ছাড়াই সমুদ্রে চলবে জাহাজ। ভবিষ্যতের জাহাজ হয়তো খুব দ্রুত একেবারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে মহাসাগর পাড়ি দেবে৷ শুধু বন্দরের মধ্যে এলে কয়েকজন নাবিক সেটি চালনা করবেন৷
জার্মানির ফ্রাউনহোফার সামুদ্রিক গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা প্রায় দুই বছর ধরে নাবিক ছাড়াই মালবাহী জাহাজ চালানোর সফটওয়্যার নিয়ে কাজ করছেন৷ এমন অ্যাটোম্যাটিক জাহাজের সুবিধা কী?
ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর কার্লোস ইয়ান বলেন, 'প্রথমত, কর্মীর প্রয়োজন না থাকায় অর্থ সাশ্রয় হবে৷ অর্থাৎ অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে৷ আরেকটি সুবিধা হলো, সেন্সর প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে সমুদ্রে জাহাজকে আরও নিরাপদ করে তোলা যাবে৷ ভুললে চলবে না, মানুষের ভুলের কারণেই সবচেয়ে বেশি জাহাজ দুর্ঘটনা ঘটে৷
ওক কাঠ দিয়ে তৈরি জাহাজটির নাম ‘ফ্রাম’ – যার অর্থ ফরোয়ার্ড বা অগ্রসর৷ ৩৯ মিটার দীর্ঘ ও ১১ মিটার প্রস্থের এই জাহাজকে 'বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী কাঠের জাহাজ' বলা হয়৷ কারণ এটা দিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুর সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে যাওয়া সম্ভব হয়েছে৷
তাছাড়া ধীর গতিতে চলা স্বয়ংক্রিয় জাহাজ পরিবেশ দূষণ কমাতেও সাহায্য করবে৷ কার্বন নির্গমন ও জ্বালানির ব্যবহার কমবে৷'
প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সিমুলেটরে গবেষকরা তাদের সফটওয়্যার পরীক্ষা করে দেখছেন৷ সিমুলেশনের মাধ্যমে দ্রুত বোঝা গিয়েছিল, যে নাবিক ছাড়া বন্দরের মধ্যে জাহাজ চলতে পারবে না৷ সেখানে জাহাজ চালানো অত্যন্ত জটিল কাজ৷
তাই ভবিষ্যতেও বন্দর ছেড়ে যাবার এবং সেখানে ঢোকার সময় নাবিকরাই জাহাজ চালাবেন৷ তারপর মালবাহী জাহাজ সমুদ্রে পৌঁছালে নাবিকরা ছোট নৌকা বা হেলিকপ্টারে চড়ে জাহাজ ছেড়ে চলে যাবে৷
গন্তব্যে ঠিক উলটোটা ঘটবে৷ বন্দরে ঢোকার আগে ঠিক সময়ে নাবিকরা জাহাজে পৌঁছবে৷ তারপর নিরাপদে জাহাজটি নোঙর করবে৷ সমুদ্রে চলার সময়ে সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা জাহাজের দায়িত্ব নেবে৷ সবচেয়ে বড় আশা হলো, জাহাজ চলাচল আরো নিরাপদ হবে, কারণ সেন্সর মানুষের তুলনায় অনেক বেশি দক্ষতার সঙ্গে চারিদিকে নজর রাখবে৷
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ‘কোনো বাধা শনাক্ত করতে আগের মতোই আমরা রাডার ও অটোম্যাটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ব্যবহার করছি৷ সেই সঙ্গে জাহাজে সাধারণ ও ইনফ্রারেড ক্যামেরাও থাকছে৷
সব সিস্টেম একসঙ্গে কাজ করতে পারে৷ এক সেন্সর ফিউশন কনসেপ্টের সাহায্যে তখন অপেক্ষাকৃত ছোট বস্তুও শনাক্ত করা সহজ হবে, যা রাডারে সরাসরি ধরা পড়ে না৷ ইনটেলিজেন্ট অ্যালগোরিদম সেটা সম্ভব করবে৷'
অন্য কোনো জাহাজের সঙ্গে সংঘাতের উপক্রম হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা চিনতে পারা হলো প্রথম পদক্ষেপ৷ ‘স্বতন্ত্র' জাহাজ তখন নিজেই স্থির করবে, এই অবস্থায় কী করা উচিত – তার নিজের এগিয়ে যাবার অধিকার আছে, নাকি পাশ কাটিয়ে যেতে হবে?
ফ্রাউনহোফার ইনস্টিটিউটের হান্স-ক্রিস্টফ বুয়রমাইস্টার বলেন, ‘‘আমরা জাহাজকে আরও বুদ্ধি দিতে চাই, যাতে সে নিজস্ব ক্ষমতায় যাত্রাপথ স্থির করতে পারে এবং নিজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারে – যেমন সংঘাত এড়িয়ে যাওয়া, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় নিরাপদে এগিয়ে যাওয়া ইত্যাদি৷''
তবে একেবারেই কোনো নজরদারি ছাড়া নাবিকহীন জাহাজ চলবে না৷ স্যাটেলাইটের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি সব কিছুর উপর নজর রাখবেন এবং প্রয়োজনে হস্তক্ষেপ করবেন – যেমন জাহাজের স্বয়ংক্রিয় সিস্টেম পরিস্থিতি সামলাতে না পারলে অথবা সেগুলি বিকল হয়ে গেলে৷ এমন পরিস্থিতিতে ৬টি পর্যন্ত জাহাজ দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে৷
ফ্রাউনহোফার সিএমএল-এর প্রধান কার্লোস ইয়ান বলেন, ‘‘আমাদের ধারণা, খোলা সমুদ্রে জাহাজ স্বতন্ত্রভাবে চলবে৷ তবে সীমাবদ্ধ জলপথ বা বন্দরে সেটা সম্ভব হবে না৷ তখন জাহাজ বন্দর থেকে বার করা এবং বন্দরে নিয়ে আসা নতুন এক পেশা হয়ে উঠবে৷ অথবা কনট্রোল রুমে বসে দূরের জাহাজ নিয়ন্ত্রণ করাও নতুন কাজ হবে৷''
এই যান্ত্রিক উদ্ভাবনের ফলে নাবিকের পেশার চরিত্রও বদলে যাবে৷ এই মুহূর্তে নাবিকহীন জাহাজ সমুদ্রে পাঠানো বেআইনি কাজ৷ ফলে আজই এই ব্যবস্থা যাচাই করতে এবং ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত হতে সিমুলেটারই একমাত্র ভরসা৷
খবর বিভাগঃ
ফিচার
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়