Tuesday, June 16

২৪ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে জামায়াত


ঢাকা: জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসির রায়ের প্রতিবাদে আগামীকাল বুধবার ভোর ৬ টা থেকে ২৪ ঘণ্টার হরতাল দিয়েছে স্বাধীনতা বিরোধী এই দলটি। আজ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে জামায়াত এই হরতালের ডাক দেয়। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ মঙ্গলবার মাত্র দুই মিনিটে এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দেন। আর সর্বোচ্চ সাজার এই রায় আসে বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করার চেষ্টায় বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে। এই বেঞ্চের বাকি তিন সদস্য হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী। এই প্রথম বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা কোনো ব্যক্তি একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছেন। সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চূড়ান্ত রায়ে মুজাহিদের ফাঁসির রায় বহাল রাখার দুই ঘণ্টা যেতে না যেতেই তারা এই হরতালের ডাক দিলো।বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় প্রচার বিভাগ থেকে এম. আলম স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বুধবার হরতালের ঘোষণা দিয়ে বলা হয়, সরকারের দায়ের করা মিথ্যা, বায়বীয় ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে মৃত্যুদ- প্রদান করায় হতাশ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত আমীর জনাব মকবুল আহমাদ। তিনি আটক সকল নেতা-কর্মীর মুক্তির দাবিতে ১৭ জুন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। বিবৃতিতে আরো বলা হয়েছে “সরকার জামায়াতকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য জামায়াত নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও কাল্পনিক অভিযোগে ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দায়ের করে বিচারের নামে প্রহসনের আয়োজন করে। সরকারী ষড়যন্ত্রের শিকার আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। তার আপোষহীন নেতৃত্বে দিশেহারা হয়ে সরকার তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তথাকথিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মিথ্যা অভিযোগে মামলা দায়ের করে। মাননীয় ট্রাইব্যুনাল জনাব মুজাহিদকে ১, ৬, এবং ৭ নং অভিযোগে মৃত্যুদ-ে দ-িত করেন। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপিল করেন। আপিল বিভাগ মুজাহিদের আপীল খারিজ করে ৬ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল প্রদত্ত মৃত্যুদ- বহাল রাখেন। এ রায়ে মুজাহিদ ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশের জনগণ এ রায়ে হতাশ হয়েছে। সরকারের দায়ের করা মামলাটি সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্রমূলক। এই মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন যে, স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত মুজাহিদের বিরুদ্ধে ফরিদপুর জেলায় কোন থানায় বা বাংলাদেশের অন্য কোন থানায় ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে সংঘটিত কোন অপরাধের জন্য কোন মামলা হয়েছে, এমন কোন তথ্য তিনি তার তদন্তে পাননি। মামলার আইও এটাও স্বীকার করেছেন যে, মুজাহিদ আল বদর, শান্তি কমিটি, রাজাকার বা আল শামস বা এই ধরনের কোন সহযোগী বাহিনীর সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন, এমন কোন তথ্য তিনি তার তদন্তকালে পাননি। এর পরও আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে সরকারের সাজানো মিথ্যা অভিযোগের ভিত্তিতে মৃত্যুদ-ে দ-িত করা হলো। তিনি জুলুমের শিকার হয়েছেন। সরকারের দায়ের করা ৬ নম্বর অভিযোগে জনাব মুজাহিদকে বুদ্ধিজীবী হত্যার সাথে জড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়। সরকার অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর জন্য বুদ্ধিজীবী হত্যার এই অপবাদ রচনা করে। তার বিরুদ্ধে দাখিল করা অভিযোগ পত্রের কোথাও একটি বারের জন্যও বলা হয়নি যে, মুজাহিদ কবে কিভাবে কোন বুদ্ধিজীবীকে হত্যা বা অপহরণ করেছেন। কোন অভিযোগেই সুনির্দিষ্ট দিন, তারিখ উল্লেখ নেই। বুদ্ধিজীবী পরিবারের কোন সদস্য, যারা ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সিটিটিউটের কথিত ঘটনার ভিক্টিম তাদের কারো স্ত্রী বা সন্তান-সন্ততি ট্রাইব্যুনালে এসে মুজাহিদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করেননি। অথচ সরকার জনাব মুজাহিদকে ফাঁসানোর জন্য যে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করেছে তার ভিত্তিতে তাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করা হলো। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউ দায়ের করবেন। রিভিউ আবেদনে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হলে মুজাহিদ খালাস পাবেন বলে আমরা গভীরভাবে বিশ্বাস করি। দেশবাসী অবগত আছেন ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-ের বিচারের কোন কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। স্বাধীনতা উত্তর আওয়ামী সরকারের আমলে বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রমাণসহ জহির রায়হানকে অপহরণ করা হয়। তার রহস্য আওয়ামী সরকার উন্মোচন করেনি। অত্যন্ত সুকৌশলে তদানিন্তন আওয়ামী সরকার বুদ্ধিজীবী হত্যাকা-টি এড়িয়ে গিয়েছে। সেই বুদ্ধিজীবী হত্যার মিথ্যা অভিযোগ মুজাহিদের ঘাড়ে চাপিয়ে সরকার তার অতীতের কূটকৌশল বাস্তবায়ন করলো মাত্র। ভবিষ্যত প্রজন্ম ও সত্যানুসন্ধিৎসু ইতিহাস গবেষকদের নিকট বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল রহস্য অবশ্যই উন্মোচিত হবে ইনশাআল্লাহ্। আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে হত্যার সরকারী ষড়ন্ত্রের প্রতিবাদে, তিনিসহ আটক জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ ও নেতা-কর্মীর মুক্তির দাববিতে ১৭ জুন বুধবার সকাল ৬টা থেকে ১৮ জুন বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত দেশব্যাপী ২৪ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করছি। ঘোষিত এ কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে সফল করার জন্য দেশের বুদ্ধিজীবী, পেশাজীবী, আইনবিদ, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতি মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।” বিঃদ্রঃ হাসপাতাল, এম্বুলেন্স, ফার্মেসী ইত্যাদি হরতালের আওতামুক্ত থাকবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়