Tuesday, June 16

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ইসলামের নির্দেশনা


ইসলাম ডেস্ক: পবিত্র মাহে রমজানের আগে আমাদের দেশে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যাওয়া প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। এক দিকে কালোবাজারি, মুনাফালোভী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট; অন্যদিকে ক্রেতা বা ভোক্তাসমাজ। ব্যবসায়ীদের অভিসন্ধি দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। আর ভোক্তাদের উদ্দেশে অতিরিক্ত ভোগ-ব্যবহার কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে সরবরাহ হ্রাস বা মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কা এড়ানো। অনেক ভোক্তা রমজানপূর্ব প্রস্তুতিটা একসঙ্গে নেয়ার চেষ্টা করেন। এভাবেই চাহিদার বিপরীতে সরবরাহের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি হয়। এবং দ্রব্যমূল্য পাগলা ঘোড়ার মতো লাফিলে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। এ কারণেই ইসলাম মজুতদারিকে দ্ব্যর্থহীনভাবে নিষিদ্ধ করেছে। রাসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলমানদের কোনো পণ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি করার ষড়যন্ত্র করে, তাকে জাহান্নামের অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা আল্লাহ তায়ালা নিজের ওপর অবধারিত করে নেন।’ আর ভোক্তা পর্যায়ে অতিমাত্রিক সঞ্চয় ও ভোগ-ব্যবহারের ব্যাপারে কোরআনের নির্দেশনা হচ্ছে : ‘খাও, পান করো ও অপচয় করো না (আল-‘আরাফ : ৩১)।’ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাজারের স্বাভাবিকতা নিশ্চিত করা দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের একটি মৌলিক উপাদান। রাসুলে কারীম (সা.) বাজার পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য দায়িত্বশীল নিয়োগ দিয়েছিলেন। যেমন: সায়ীদ বিন আল-আস বিন উমাইয়্যাকে মক্কার বাজার দেখাশোনা করার দায়িত্বভার অর্পণ করেছিলেন। এমনকি রাসুল (সা.) নিজেও এ দায়িত্ব পালন করেছেন। রাসুল (সা.) কর্তৃক খাদ্যস্তূপের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে ভেজা গম বের করে আনা ও ব্যবসায়ীকে প্রতারণার জন্য সতর্ক করে দেয়ার ঘটনাই এর প্রমাণ। ওমর (রা.) আবদুল্লাহ বিন ওত্বাহকে বাজার ব্যবস্থাপনার জন্য নিয়োগ করেছিলেন। বাজারের অনিয়ম রোধে ওমর (রা.) কখনও কখনও অসাধু ব্যবসায়ীদের দোররা দিয়ে প্রহার করতেন। হজরত আলী (রা.) মিসরের গভর্নরের প্রতি যে পত্র প্রেরণ করেছিলেন, তাতেও এ বিষয়টি স্থান পেয়েছিল। তিনি বলেছিলেন : ‘তুমি ব্যবসায়ীদের প্রতি সদাচরণ করবে। তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের ব্যাপারে সতর্ক থাকবে। শহরে এবং শহরের উপকণ্ঠে সর্বত্র তাদের বিষয়গুলো নিজেই দেখাশোনা করবে। এ কথাও মনে রাখবে, তাদের অনেকের মধ্যে ভীষণ কৃপণতা, সংকীর্ণতা, সুযোগ-সুবিধা কুক্ষিগতকরণ, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুতদারির প্রবণতা আছে। আর এগুলো হচ্ছে সাধারণ জনগণের জন্য ক্ষতিকর এবং রাষ্ট্র পরিচালকদের জন্য লজ্জাকর। অতএব, মজুতদারি রোধ করবে। কারণ রাসুল (সা.) এটা নিষেধ করেছেন। ক্রয়-বিক্রয় যেন পারস্পরিক উদারতা, সঠিক পরিমাপ ও ন্যায্য মূল্যে সম্পন্ন হয়। যাতে করে ক্রেতা-বিক্রেতা কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। যদি কেউ এরপরও মজুতদারি করে তাহলে তাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাও।’ ব্যবসা-বাণিজ্য, ক্রয়-বিক্রয় মূলত আত্মস্বার্থ ও বৈষয়িক মুনাফা লাভের বিকৃত সুযোগ সন্ধান নয়। বরং এটি একটি মহান মানবিক কাজ। এতে রয়েছে পারস্পরিক চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের মহান উদ্যোগ, যা সামাজিক দায়বদ্ধতার তথা ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। মহানবী (সা.) এ মর্মে ইরশাদ করেন, ‘সত্ ও ন্যায়পরায়ণ ব্যবসায়ী (পরকালে) নবী, সিদ্দিকীন ও আল্লাহর পথে জীবন বিসর্জনকারী শহীদদের সঙ্গী হবে।’ তাই এ ক্ষেত্রে উদারতা, মহানুভবতা অবলম্বন করা ইসলামের এক সুমহান নীতি। হাদিসে রয়েছে, ‘আল্লাহ তায়ালা সেই ব্যক্তির প্রতি রহম করেন যে বেচাকেনা ও নিজের প্রাপ্য আদায়ের তাগাদা করার সময় মহানুভবতা অবলম্বন করে।’ কম লাভে, বেশি বিক্রির নীতি এই মহানুভবতারই বহিঃপ্রকাশ। হজরত আবদুর রহমান বিন আওফ (রা.) সাহাবীদের মধ্যে একজন বিশিষ্ট ধনবান ব্যবসায়ী ছিলেন। তাকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, আপনার ব্যবসায় নীতি কী? কীভাবে আপনি এত মুনাফা অর্জন করলেন? তখন তিনি বলেছিলেন, আমার নীতি হলো ‘কম লাভ, অধিক বিক্রি।’ আমাদের পুণ্যবান সালাফদের আদর্শ ছিল ৫ শতাংশ টাকা লাভ করা। হজরত আলী (রা.) কুফা নগরীর বাজার পরিদর্শনকালে বলতেন, ‘হে ব্যবসায়ী সমপ্রদায়! ন্যায্যভাবে লাভ করো, নিরাপদে থাকতে পারবে। অল্প মুনাফা প্রত্যাখ্যান করো না, তাহলে অধিক মুনাফা থেকে বঞ্চিত হবে।’

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়