Friday, June 26

রোজার সুন্নত আদব


হাসানুল কাদির: প্রতিটি ইবাদতেরই কিছু আদব-কায়দা বা শিষ্টাচার রয়েছে। রোজা পালনের কিছু মুস্তাহাব ও সুন্নত আদব আছে, যেগুলো পালন করলে সওয়াব বাড়ে। তা ছেড়ে দিলে রোজা ভঙ্গ হয় না বা গোনাহও হয় না, তবে পুণ্যে ঘাটতি দেখা দেয়। নিচে রোজার সুন্নত আদব-কায়দাগুলো উল্লেখ করা হলো। সাহরি খাওয়া : রাসুল (সা.) বলেছেন, 'তোমরা সাহরি খাও, কারণ এতে বরকত রয়েছে। (বোখারি ১৯২৩)। অন্য হাদিসে এসেছে, 'আমাদের (মুসলিমদের) ও ইহুদি-খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া।' (মুসলিম : ১০৯৬)। আমরা রোজা পালন করি সাহরি খেয়ে, ইহুদি-খ্রিস্টানরা রোজা রাখে সাহরি না খেয়ে। রোজার অন্য একটি সুন্নত হলো সাহরি দেরি করে খাওয়া। অর্থাৎ তা শেষ ওয়াক্তে খাওয়া উত্তম। সাহরির সময় কোরআন শরিফ তেলাওয়াত, অধ্যয়ন, তাহাজ্জুদের সালাত আদায়, তওবা-এস্তেগফার ও দোয়া কবুলের জন্য একটি উত্তম সময়। আল্লাহ বলেন, 'তারা শেষ রাতে জেগে ওঠে তওবা-এস্তেগফার করে।' (সূরা জারিয়াত : ১৮)। সূর্য অস্ত যাওয়ামাত্র ইফতার করা : অতিরঞ্জিত সাবধানতার নামে ইফতারে বিলম্ব করা যাবে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'মানুষ যত দিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে তত দিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে।' (বোখারি : ১৯৫৭)। রাসুল (সা.) এবং সাহাবিরা সবার আগে তাড়াতাড়ি ইফতার করতেন এবং সবার চেয়ে দেরিতে সাহরি খেতেন। (মুসান্নাফ : ৭৫৯১)। মাগরিবের সালাতের আগে ইফতার করা এবং খেজুর বা পানি দ্বারা ইফতার করা : আনাস (রা.) বলেছেন, 'রাসুলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের সালাতের আগে তাজা খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত তবে শুকনো খেজুর দ্বারা ইফতার করতেন। যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করতেন।' (মুসনাদ আহমাদ : ৩/১৬৪)। পেটভর্তি করে খাওয়া ইসলাম সমর্থন করে না। রাসুল (সা.) বলেছেন, 'যে ব্যক্তি পেট ভর্তি করে খানা খায় তার ওই পেট (আল্লাহর কাছে) একটি নিকৃষ্ট পাত্র।' (প্রাগুক্ত)। ইফতারের সময় দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'ইফতারের সময় আল্লাহ তায়ালা বহু লোককে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। এ মুক্তিদানের পালা রমজানের প্রতি রাতেই চলতে থাকে। সে সময় রোজা পালনকারী প্রত্যেক বান্দার দোয়া কবুল হয়।' (মুসনাদ আহমাদ : ৭৪৫০)। বেশি বেশি কোরআন তেলাওয়াত, সালাত আদায়, জিকির ও দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, 'রোজা ও কোরআন কেয়ামতের দিন (আল্লাহর কাছে) মানুষের জন্য সুপারিশ করবে, রোজা বলবে, 'হে রব! দিনের বেলায় আমি তাকে পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত রেখেছি। তাই তার ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ কবুল করো।' কোরআন বলবে, 'হে রব! (কোরআন তেলাওয়াত ও তারাবির কারণে) রাতের নিদ্রা থেকে আমি তাকে বিরত রেখেছি। তাই এ পাঠকের ব্যাপারে তুমি আমার সুপারিশ মঞ্জুর কর।' অতঃপর উভয়েরই সুপারিশ কবুল করা হবে।' (মুসনাদ আহমাদ : ৬৫৮৯)। এভাবে রমজান মাসে আল্লাহর দরবারে ইবাদতের তৌফিক কামনা করা, তাঁর রহমত ও দয়া লাভের প্রার্থনা করা, এতিম, বিধবা ও গরিব-মিসকিনদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া, বেশি বেশি দান-খয়রাত করা, উত্তম চরিত্র গঠনের অনুশীলন করা, অপচয় ও অযথা খরচ থেকে বিরত থাকা, রুটিন করে সময় কাজে লাগানো, দুনিয়াবি ব্যস্ততা কমিয়ে দেয়ার মাধ্যমে পরকালের চিন্তায় বেশি মনোযোগী হওয়া, খাওয়া ও নিদ্রায় ভারসাম্য রক্ষা করা, ফজর হওয়ার আগেই রোজার নিয়ত করা এবং সর্বাবস্থায় আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়