Wednesday, June 10

যে আমলের সাওয়াব মৃত্যুর পরও জারি থাকে


হাবীবুল্লাহ মুহাম্মাদ ইকবাল (পূর্ব প্রকাশের পর) ৮. সীমান্ত রক্ষা করা ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয়া অর্থাৎ মানুষকে নিরাপদ ও শান্তিতে রাখার জন্য শত্রুর হাত থেকে ইসলামী রাষ্ট্রকে পাহারা দেয়ার সাওয়াব ব্যক্তির মৃত্যুর পরও জারি থাকবে। এ বিষয়ে হাদিসে উল্লেখ আছে : আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা অবস্থায় মারা যায় তাহলে যে কাজ সে করে যাচ্ছিল মরার পরও তা তার জন্য সাওয়াব জারি থাকবে, তার রিজিকও জারি থাকবে, কবরের পরীক্ষা থেকে সে থাকবে নিরাপদ এবং আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতে তাকে ভয় থেকে মুক্ত অবস্থায় উঠাবেন। [সহীহ ইবন মাজাহ : ২২৩৪] ফাদালাতা ইবন উবাইদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মৃত্যুর পর প্রত্যেক মৃতের কর্মের ধারা শেষ করে দেয়া হয়। তবে যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য ইসলামী রাষ্ট্রের সীমান্ত পাহারা দেয় তার আমল কিয়ামত পর্যন্ত বাড়তে থাকবে এবং কবরের ফিতনা থেকেও সে নিরাপদ থাকবে। [সহীহ ইবন হিব্বান : ৪৬২৪] ৯. প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা করা ফল-ফসল উৎপাদন করার জন্য প্রবাহিত পানির ব্যবস্থা থাকা খুবই জরুরি। সেচ ব্যবস্থার মাধ্যমে কৃষি জমি আবাদযোগ্য করা যায় এবং ফসল ভালোভাবে উৎপাদন সম্ভব হয়। প্রতিটি জীবনে রয়েছে পানির ব্যবহার। সেজন্য এটি একটি এমন সাওয়াবের কাজ-যা ব্যক্তির মৃত্যুর পরও জারি থাকবে। উসমান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে পানির ঝর্ণা খনন করল, তার জন্য জান্নাত রয়েছে। [সহীহ বুখারি : ২৭৭৮] ১০. আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকা উত্তম কাজ। এজন্য এ মাসে মানুষকে দ্বীনের পথে নিয়ে আসার জন্য আলোচনা করা, কোরআন ও হাদিসের দারস প্রদান, বই বিতরণ, কোরআন বিতরণ ইত্যাদি কাজ বেশি বেশি করা। আর এর সাওয়াব কিয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। আল কোরআনের ঘোষণা : ওই ব্যক্তির চাইতে উত্তম কথা আর কার হতে পারে যে আল্লাহর দিকে ডাকলো, নেক আমল করলো এবং ঘোষণা করলো আমি একজন মুসলমান। [সূরা হা-মীম সাজদাহ : ৩৩] আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়ার কাজটি এত ফজিলতপূর্ণ যে, নবী কারিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাদিআল্লাহু আনহুকে বললেন : তোমার মাধ্যমে একজনও যদি হিদায়াতপ্রাপ্ত হয়, তবে তা হবে তোমার জন্য লালবর্ণের অতি মূল্যবান উট থেকেও উত্তম। [সহীহ বুখারি : ২৯৪২] : যে মানুষকে হিদায়াতের দিকে আহ্বান করবে, এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব তার আমলনামায় যুক্ত হতে থাকবে। অথচ তাদের সাওয়াব থেকে কোনো কমতি হবে না। [সহীহ মুসলিম : ৬৯৮০] ১১. কিতাব রচনা করা এমন কিতাব রচনা করা, যার মাধ্যমে কল্যাণ সাধিত হয়। মানুষ সত্যিকার পথের সন্ধান পায়। কিতাব পড়ে দ্বীনের অনেক দায়ী তৈরি হবে, ইলম অর্জনের জন্য সহায়ক হবে। যিনি এ ধরনের কিতাব রচনা করবেন, তিনি মৃত্যুর পরও এর সাওয়াব পেতে থাকবেন। হাদিসে এসেছে : ভালো কাজের পথপ্রদর্শনকারী এ কাজ সম্পাদনকারীর অনুরূপ সাওয়াব পাবে। [সুনান আততিরমিযি : ২৬৭০] ১২. সাদাকায়ে জারিয়াহ সাদাকা শব্দের অর্থ দান করা এবং জারিয়া অর্থ প্রবহমান, সদাস্থায়ী প্রভৃতি। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের নিমিত্তে শরীয়া অনুমোদন করে এমন কল্যাণকর কাজে দান করা। যেমন মাদ্রাসা তৈরি, এতিমখানা প্রতিষ্ঠা, পাঠাগারের ব্যবস্থা করা, হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা, রাস্তাঘাট নির্মাণ অন্যতম। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : মানুষ মৃত্যুবরণ করলে তার যাবতীয় আমল বন্ধ হয়ে যায়, তবে ৩টি আমল বন্ধ হয় না- ১. সাদাকায়ে জারিয়া, ২. এমন ইলম-যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায় ও ৩. এমন নেক সন্তান- যে তার জন্য দুয়া করে। [সহীহ মুসলিম : ৪৩১০] ইবাদাত কবুলের শর্তসমূহ আমাদের ইবাদাত করার সময় অবশ্যই খেয়াল করতে হবে যে, ইবাদাত কবুলের শর্তগুলো পূরণ হয়েছে কি না। ইবাদাত কবুলের সকল শর্ত পূরণ ছাড়া ইবাদাতের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। যদি কোনো একটি শর্ত অনুপস্থিত থাকে তবে ইবাদাত কবুল হয় না। শর্তগুলো হলো : ১. নিয়ত শুদ্ধ করা ইবাদাতের পূর্বে নিয়ত শুদ্ধ করতে হবে। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যখন কিয়ামতের দিন হবে, আল্লাহ তাবারাকা ওয়াতায়ালা তার বান্দাদের বিচারের উদ্দেশে আবির্ভূত হবেন। তখন প্রতিটি জাতি ভয়ে নতজানু হয়ে পড়বে। বান্দাদের মধ্যে প্রথমে ডাকা হবে কোরআনের বাহক, আল্লাহর পথে শহীদ ও সম্পদশালী ব্যক্তিকে। ক্বারীর উদ্দেশে আল্লাহ বলবেন, আমি কি তোমাকে তা শিখায়নি যা আমার রাসূলের ওপর নাজিল করেছিলাম? বলবে, জি, হে আমার রব। আল্লাহ তায়ালা বলবেন, সুতরাং তুমি যা শিখেছো তার কী আমল করেছো? সে বলবে, আমি দিন-রাতের নানা প্রহরে নামাজে এ কোরআন তিলাওয়াত করেছি। আল্লাহ বলবেন, তুমি মিথ্যা বলেছো। ফেরেশতারাও তার উদ্দেশে বলবে, তুমি মিথ্যা বলেছো। তাকে লক্ষ্য করে আল্লাহ বলবেন, বরং তোমার অভিপ্রায় ছিল লোকেরা তোমাকে ক্বারী বলে ডাকবে। আর তা তো তোমাকে বলা হয়েছেই। ফলে তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো। তুমি দুনিয়াতেই তোমার প্রতিদান পেয়ে গেছো। (হাদীসের পরের অংশে রয়েছে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আল্লাহ তায়ালা আমাদের হেফাজত করুন) [সুনান আততিরমিযি : ২৩৮৬] ২. সুন্নাহ পদ্ধতিতে ইবাদাত করা আমল কবুল হওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণ প্রয়োজন। কোনো ব্যক্তির মনগড়া বা বিদয়াতি পদ্ধতিতে ইবাদাত করলে তা কবুল হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন অর্থ : যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো বিধান তালাশ করে, কস্মিনকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং পরকালেও সে হবে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত। [সূরা আলে ইমরান : ৮৫] এ বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে এমন ইবাদাত করল যাতে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই তা পরিত্যাজ্য হিসাবে গণ্য হবে। [সহীহ মুসলিম : ৪৫৯০] কোরআনে এসেছে : এবং রাসূল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে সে তোমাদের নিষেধ করে তা থেকে বিরত হও। [সূরা হাশর :৭] ৩. শিরক মুক্ত থাকা শিরক সব ভালো আমল নষ্ট করে দেয়। কোনো প্রকার শিরকের সাথে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না। শিরকের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমল কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন : আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন, তবে আপনার আমল নিষ্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন। [সূরা যুমার : ৬৫] ৪. হালাল উপার্জন করা আমল কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন শর্ত। আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, : নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন। তিনি মুমিনদের সেই আদেশই দিয়েছেন, যে আদেশ তিনি দিয়েছিলেন রাসূলগণের। আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার কর, যেগুলো আমি তোমাদের রুজি হিসেবে দান করেছি।’ অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করলেন, যে দীর্ঘ সফরে থাকা অবস্থায় এলোমেলো চুল ও ধূলি-ধুসরিত ক্লান্ত-শ্রান্ত বদনে আকাশের দিকে আল্লাহর দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করে ডাকছে : হে আমার প্রভু, হে আমার প্রভু অথচ সে যা খায় তা হারাম, যা পান করে তা হারাম, যা পরিধান করে তা হারাম এবং হারামের দ্বারা সে পুষ্টি অর্জন করে। তার প্রার্থনা কিভাবে কবুল হবে? [ সহীহ মুসলিম : ২৩৯৩] আল্লাহ তায়ালা আমলগুলো করার তাওফিক দিন। আমীন!

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়