Monday, June 1

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে শিশুদের ব্যবহার চাই না


জিবলু রহমান: ‘বাহবা! সাবাস! বড়দের দল; এইতো চাই, ছোটরা খেলবে, আসুন আমরা বোমা বানাই।’ কোনো এক ভোটের সকালে প্লাস্টিক ব্যাগে ফেলে রাখা ক’টি তাজা বোমাকে বল ভেবে দেড় থেকে দুই বছর বয়সী কয়েকটি শিশু ক্রিকেট খেলতে গেলে ঘটে বিকট বিস্ফোরণ। পশ্চিমবঙ্গের এরকম একটি সত্য ঘটনাই কবির সুমনের ‘হাউ ইজ দ্যাট’- গানটির উপজীব্য। সে ঘটনার সঙ্গে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চলমান ঘটনাগুলোর আশ্চর্য মিল রয়েছে। আজকের শিশুরাই অনাগত সকল পরিস্থিতি মোকাবেলায় অনিবার্য সম্পদ। হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ব্যবহার করা হচ্ছে শিশুদের। রাজনীতিক নেতাদের খেলার ঘুঁটিতে পরিণত হচ্ছে এই নিষ্পাপ অবুঝ শিশুরা। রাজনৈতিক সহিংসতার বলি হচ্ছে এখন অসংখ্য শিশু-কিশোর। হরতাল-অবরোধ, ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও ও বোমাবাজির মতো বিপজ্জনক কাজে শিশুদের ব্যবহার করা হচ্ছে। তাদের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ককটেল-বোমার মতো অনিরাপদ বিস্ফোরক। বহন ও ব্যবহারে অদক্ষ হওয়ায় অনেক সময় বহনকারী শিশুরাই শিকার হচ্ছে এর। অন্যদিকে, কাগজ কুড়াতে গিয়ে বা খেলতে গিয়ে যত্রতত্র পড়ে থাকা ককটেল, হাতবোমা ইত্যাদির আঘাতে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে শিশুরা। হরতালে ককটেল বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে অনেকে। যেখানে-সেখানে ফেলে রাখা ককটেল বিস্ফোরণে শিশু হতাহত হওয়ার ঘটনা একের পর এক ঘটে চলেছে। রাজনৈতিক হরতাল-সমাবেশের মতো কর্মসূচিতে ব্যাপকহারে হাতবোমার ব্যবহার দেখা যাচ্ছে অহরহ। আবাসিক এলাকার যত্রতত্র ফেলে রাখা বোমা-ককটেল খেলনা হিসাবে শিশুদের হাতে উঠে যাচ্ছে আর হতাহত হচ্ছে নিষ্পাপ শিশুরা। এর অবশ্যই প্রতিকার দরকার। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এ নিয়ে কারো কোনো মাথাব্যথা দেখা যাচ্ছে না। এরকমটা চলতে থাকলে যে কোনো দিন আমাদের যে কারো সন্তান-স্বজন প্রাণঘাতী বিস্ফোরণের শিকার হতে পারে। বাড়ির বাইরে শিশুকে মূলত স্কুলে, খেলার মাঠে, শিক্ষক বা ডাক্তারের কাছে অথবা মা-বাবার সঙ্গে যেতে হয়। এ রকম যাওয়া আসার পথে রাজনৈতিক সহিংস ঘটনায় শিশু সরাসরি আক্রান্ত হচ্ছে। বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয়ে শিশুর মৃত্যু, ট্রেনে-বাসে-টেম্পোতে আগুনে পুড়ে মৃত্যু, ককটেল বোমার আঘাতে মারা যাওয়া, গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু ইত্যাদি খবর হরতাল-অবরোধের সময় পত্রিকার পাতায় প্রতিদিন স্থান পায়। বোমা আগুনে টিয়ারগ্যাসে লাঠির আঘাতে আহত শিশুর খবর এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অনেক শিশু হরতাল অবরোধে নৃশংসতা কিছুটা দূর থেকেও প্রত্যক্ষ করে। হরতাল-সমাবেশ ডাকা হচ্ছে ও পালিত হচ্ছে বোমা ফাটিয়ে। পত্রিকায় খবর বের হচ্ছে- দলের ক্যাডাররা এখন ব্যস্ত। বোমা বানাতে গিয়ে, বোমা রাখতে গিয়ে ক্যাডারদের হাত-পা উড়ে যাওয়ারও খবর এসেছে। পেশাদার বোমবাজদেরও এখন রমরমা অবস্থা। রাজনৈতিক ‘প্রয়োজন’ তথা প্রশ্রয়েই বোমাবাজির এই বাড়বাড়ন্ত। বোমাবাজির হরতাল ব্যবসায়ী নেতৃত্ব থেকে খেটে খাওয়া মজুর কেউ না চাইলেও এর তোয়াক্কা করছে না রাজনৈতিক মহল। চলছে হরতাল, সামনে রয়েছে আরো হরতালের হুমকি। এই হরতাল-বোমাবাজির রাজনীতি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের লাশ আমাদের হাতে তুলে দিচ্ছে- আর কীভাবে দেখলে আমাদের হুঁশ হবে? হরতাল ও অবরোধে বড়দের পাশাপাশি শিশুদের জীবনের ওপরও প্রভাব পড়ে। অবরোধ চলাকালীন ককটেল বিস্ফোরণ ও বিভিন্ন যানবাহনে অবরোধকারীদের দেওয়া আগুনে বহু শিশু হতাহত হয়। শ্রমজীবী শিশুরা নানা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। ব্যবসা খারাপ চলার অজুহাতে অনেক শিশুশ্রমিক বেতন পায় না। যারা দিনপ্রতি মজুরি ভিত্তিতে কাজ করে, সেসব শিশুর হাতে কোনো কাজ থাকে না। এ ছাড়া শিশুদের পড়ালেখার ব্যাপক ক্ষতি হয়। আইন অনুযায়ী শিশুদের সহিংস কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। শিশুনীতি অনুযায়ী তাদের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও সহিংস রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে শিশুদের যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করে তাদের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ১৬ জুন ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস করা হয়েছে শিশু বিল ২০১৩। এ বিলে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য সংযোজন রয়েছে। প্রথমেই যেটা উল্লেখ করতে হয় তা হলো সন্ত্রাসী কাজে শিশুদের ব্যবহারকে সন্ত্রাসী কাজ অর্থাৎ (সর্বোচ্চ) মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ হিসাবে গণ্য করার বিধান। এছাড়া বিলে স্বতন্ত্র আদালতে শিশুর বিচার, প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে শিশু-অভিযুক্তের চার্জশিট না দেওয়া, শিশু অপরাধীদের হাতকড়া বা কোমরে দড়ি না পরানো, নয় বছরের কমবয়সী শিশুকে গ্রেফতার না করার বিধান রাখা হয়েছে। এ বিল পাস শিশু অধিকার সংরক্ষণে দেশের আইনি ব্যবস্থার একটি মাইলফলক অগ্রগতি। শিশু বিলের ৭৯ ধারায় বলা হয়েছে- কোনো শিশুকে কোনো সন্ত্রাসী কাজে ব্যবহারকারী বা নিয়োগকারী স্বয়ং ওই সন্ত্রাসী কাজ করেছে বলে গণ্য হবে। তার বিচার হবে সন্ত্রাসবিরোধী আইনে। যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। একই ধারায় আরো বলা হয়েছে- কোনো ব্যক্তি কোনো শিশুকে দিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র বা অবৈধ বা নিষিদ্ধ বস্তু বহন করালে ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ডে বা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ডে অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। তবে আইন থাকলেই তো হবে না, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। অন্যদিকে, খেয়াল রাখতে হবে যেন ব্যক্তি/গোষ্ঠীগত বা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার কাজে এ আইনের অপপ্রয়োগ না ঘটে। শিশু আদালতের বিষয়টিও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আলোচ্য বিলে বলা হয়েছে- শিশু অপরাধের বিচারের জন্য আলাদা শিশু আদালত থাকবে। কোনো মামলায় শিশু জড়িত থাকলে, যে কোনো আইনের অধীনেই হোক না কেন, ওই মামলা বিচারের এখতিয়ার কেবল শিশু-আদালতের থাকবে। আইনে যে কোনো মামলায় শিশুকে জামিন দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। বলা হয়েছে- নয় বছরের নিচের কোনো শিশুকে কোনো অবস্থায় গ্রেফতার বা আটক রাখা যাবে না। নয় বছরের বেশি কোনো শিশুকে গ্রেফতার বা আটক করা হলে হাতকড়া বা কোমরে দড়ি পরানো যাবে না। কেউ ১৮ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা দেখালে তিনি অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা এক লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। ২০১৩ সালে শিশুদের সুরক্ষায় শিশু আইন পাস হলেও সারা বছর ধরে শিশুরা অরক্ষিত থাকে। নানা কারণে শিশুর মৃত্যু হচ্ছে। রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি যেমন টানা হরতাল, অবরোধের জের ধরে শিশুরা প্রাণ হারাচ্ছে। অনেক শিশুর অঙ্গহানি হচ্ছে। এ ছাড়া এসব ঘটনায় গুরুতর আহত শিশুর সংখ্যাও অনেক। একটি ভুল ধারণা আমরা অনেকেই পোষণ করে থাকি। যেমন আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বলতে আমরা কেবল পুলিশকে বুঝি। সাংবিধানিক সকল আইন প্রয়োগের ক্ষমতা এককভাবে পুলিশের নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আইন প্রয়োগের বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষ হিসেবে পুলিশ ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। আমরা মনে করি আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষ মূলত রাষ্ট্রের নির্বাহী বিভাগের অধীনস্ত প্রশাসন। কাজেই মানুষের কল্যাণে যতো আইনই প্রণয়ন করা হোক না কেন সেটি প্রয়োগের ক্ষেত্র কতোটা বাস্তবমুখী সেটাই দেখার বিষয়। রাজনৈতিক সহিংসতায় শিশুদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ইদানীং এই হার সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। এটি শিশু অধিকারের লঙ্ঘন। এর জন্য দোষী ব্যক্তিদের সাজা দিতে হবে। বর্তমান সহিংস পরিস্থিতিতে শিশুরা ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে। বারবার তাদের পরীক্ষা পেছানোর কারণে লেখাপড়ার প্রতি তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। দেশের নেতিবাচক অবস্থায় তাদের মধ্যে দেশ সম্পর্কে খারাপ ধারণার জন্ম হচ্ছে, যাতে করে তাদের দেশপ্রেমেও ভাটা পড়তে পারে। শিশু ঠিকমতো খেলতে পারছে না। ফলে তার স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। তারা সহিংস রাজনীতি, জ্বালাও-পোড়াওসহ বিভিন্ন খারাপ পরিবেশের মধ্যে বড় হওয়ার কারণে এগুলোকে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নিচ্ছে। এতে তাদের কোমলতা নষ্ট হচ্ছে। একটা গাড়ি দেখলে হয়তো বলে উঠছে এই গাড়িতে কি এখন আগুন দেবে! এভাবে তাদের মানসিক অবস্থায়ও এমন একটি ভীতিকর পরিস্থিতি দেখার কারণে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিশুদের এই খারাপ অবস্থার দায় অবশ্যই রাজনৈতিক নেতাদের নিতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সবাইকেও এর দায়িত্ব নিতে হবে। কেননা আমরাও তো শিশুদের জন্য কিছু করিনি। সবাই মিলে শিশুকে তার স্বাভাবিক জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। ককটেলের আঘাতে আহত শিশুরা হাসপাতালের বিছানায় যন্ত্রণায় কাতরায়। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কিত অভিভাবকরা। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের শিশু মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক হেলাল উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, এ ধরনের ঘটনাগুলো শিশুর মনে স্থায়ী ছাপ ফেলতে পারে; শিশুর মনে তৈরি করতে পারে বিরূপ প্রতিক্রিয়া। এমনকি তার ভেতরে আচরণজনিত সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এছাড়া শিশুর নিরাপত্তার দিকেও আমাদের নজর রাখতে হবে। (সূত্রঃ দৈনিক মানব কন্ঠ, ৭ ডিসেম্বর ২০১৩) নিম্ন-মাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীরা যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৭ বছর তারা অনেকেই বিভিন্ন রাজনৈতিক অঙ্গ সংগঠনের সক্রিয় কিশোরকর্মী। বিভিন্ন মিছিল-মিটিংয়ে এদের সরব উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো। অথচ স্কুল-কলেজে এদের উপস্থিতি কদাচিৎ চোখে পড়ে। কোমলমতি এসব শিক্ষার্থী ন্যায়-অন্যায়ের ধার ধারে না, ক্ষমতা ও পদের মোহ এদের পরম আরাধ্য। পড়া-লেখা ও ভবিষ্যৎ বিসর্জন দিয়ে এসব কিশোর স্থানীয় স্বার্থান্বেষী নেতাদের ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছে। শিক্ষাজীবন, আদর্শ, নৈতিকতা ও সততা বিসর্জন দিয়ে এসব তরুণ ভুল নির্দেশনায় ও ক্ষমতার দাপটে খুব সহজেই বিপথগামী হয়ে যাচ্ছে। কৈশোরে আবেগতাড়িত আচরণের নেপথ্যে অনেকেই খামখেয়ালিপূর্ণ আচরণ করে এবং নানা হুমকি বা ভীতির মুখে আবেগতাড়িত হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। কারণ, তখন তাদের মস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্স অংশটি ঠিকমতো কাজ করে না। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের সান ডিয়েগোতে সোসাইটি ফর নিউরোসায়েন্সের আয়োজনে ৯ থেকে ১৩ নভেম্বর ২০১৩ পর্যন্ত এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এতে গবেষকেরা বলেন, নিজের জীবনকে ঝুঁকিপূর্ণ করার হার শৈশবের চেয়ে কৈশোরে প্রায় ২০০% বেশি দেখা যায়। তারুণ্যের মনস্তত্ত্ব নিয়ে একাধিক গবেষণায় দেখা যায়, কৈশোরে ও তারুণ্যের একটি বিশেষ পর্যায়ে (১৩ থেকে ১৯ বছর বয়স পর্যন্ত) কারণে-অকারণে ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা বেশি হয়ে থাকে। হুমকি বা ভীতির মুখে কৈশোরের আচরণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও মানসিক অবস্থা নিয়ে গবেষণা করেন যুক্তরাষ্ট্রের উয়েইল কর্নেল মেডিকেল কলেজের স্নায়ুবিজ্ঞানী ক্রিস্টিনা কডল ও বিজে কেসি। তাঁরা বিভিন্ন বয়সী একদল নারী-পুরুষকে স্বাভাবিক ও আক্রমণাত্মক চেহারার কিছু ছবি দেখতে দেন এবং নির্দিষ্ট কিছু বোতাম চাপতে বলেন। প্রতিক্রিয়ায় দেখা যায়, কিশোর-তরুণেরা ভুল বোতাম চাপে অন্যদের চেয়ে বেশি। আর তাদের প্রিফ্রন্টাল কর্টেক্সও তখন প্রায় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। (সূত্রঃ দৈনিক প্রথম আলো ১৭ নভেম্বর ২০১৩) এই সবকিছুর দায়দায়িত্ব সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোকে নিতে হবে। এখনই যদি শিশুদের নিয়ে ভাবা না হয়, তাহলে দেশ ভবিষ্যতে অন্ধকারে নিমজ্জিত হতে পারে। সাধারণ মানুষের দাবি হরতাল অবরোধের মতো বিভিন্ন কর্মসূচিতে আর যেন কোনো শিশু চোখ না হারায়, আর যেন কোনো শিশুর হাত উড়ে না যায়। সবারই সন্তান আছে, অন্তত নিজের সন্তান মনে করে এই শিশুদের রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার। শিশুদের রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা রোধে পরিবার ও সমাজকে সচেতন হতে হবে। প্রতিটি পরিবার যদি নিজের শিশুর কর্মকাণ্ডের ব্যাপারে সজাগ থাকে তবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে। অনেক শিশু পরিবারবঞ্চিত। এ ধরনের শিশুদের বিপথগামী করা তুলনামূলকভাবে সহজ। দেখা যায়, এ ধরনের শিশুদেরই বেশি রাজনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়। এক্ষেত্রে সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকেও ভূমিকা রাখতে হবে। রাজনীতিতে শিশুদের অন্যায় ব্যবহারের বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনকে কাজ করতে হবে। আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে প্রশাসনকে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। অন্যদিকে, দায়িত্বশীলতা দরকার রাজনৈতিক দলগুলোরও। দুর্ভাগ্যজনক হলো, ব্যবসায়ী নেতৃত্ব থেকে খেটেখাওয়া মজুর কেউই বোমাবাজির হরতাল না চাইলেও এর তোয়াক্কা করছে না রাজনৈতিক মহল। এই বোমাবাজির হরতাল-রাজনীতি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অন্ধ-পঙ্গু করে দিচ্ছে, সন্তানের লাশ তুলে শুধু আইন করে রাজনীতিতে শিশুদের ব্যবহার বন্ধ করা যাবে না। jiblu78.rahman@gmail.com

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়