Friday, June 26

রমজানে মহানবীর ইবাদত


মুফতি মাহবুবুর রহমান নোমানি: রমজান ইবাদতের বসন্ত। মহান আল্লাহ এ মাসে ইবাদত বেশি রেখেছেন এবং তার সওয়াবও বহুগুণে বৃদ্ধি করেছেন। মহানবীর ভাষায়, ‘যে ব্যক্তি এ মাসে একটি নফল ইবাদত করবে, সে অন্য মাসের একটি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে। আর যে একটি ফরজ আদায় করবে, সে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়ের সওয়াব পাবে।’ এ মাসে মোমিন হৃদয়ে তাকওয়ার প্রদীপ জ্বলে। আল্লাহর রহমতের অবিরাম বর্ষণে মোমিনদের অন্তর সিক্ত হয়। গোনাহর পথ রুদ্ধ হয় এবং শয়তানকে বন্দি করা হয়। তাই প্রিয় নবী (সা.) দুই মাস আগ থেকে এ মোবারক মাসের প্রস্তুতি গ্রহণ করতেন। রজব ও শাবান মাসে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। মাঝে মাঝে তিনি পুরো শাবান মাস রোজা রেখেছেন। আর রমজানে তাঁর ইবাদতের কোনো সীমা-পরিসীমা থাকত না। উম্মুল মোমিনিন হজরত আয়শা (রা.) বলেন, রমজান এসে গেলে রাসুল (সা.) কোমরে গামছা বেঁধে নিতেন। এবং মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত বিছানায় গমন করতেন না। (সহিহ ইবনে খুজাইমা : ৩৪২)। কোমরে গামছা বাঁধা দ্বারা উদ্দেশ্য ‘ইবাদতের জন্য ওঠেপড়ে লাগা’। অর্থাৎ রমজানে নবীজি (সা.) অধিক পরিমাণে ইবাদতে মশগুল থাকতেন। দিনে রোজা, জিকির, দান-খায়রাত আর রাত কাটাতেন নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে। ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন অত্যন্ত দানশীল। রমজানে এলে তাঁর দানের মাত্রা প্রচন্ডবেগে প্রবাহিত বাতাসের চেয়েও বেড়ে যেত। তিনি প্রতি রমজানে জিবরাঈল (আ.) এর সঙ্গে কোরআনের দাউর করতেন। অর্থাৎ রাসুল (সা.) জিবরাঈলকে কোরআন শোনাতেন এবং জিবরাঈল (আ.) তাঁকে শোনাতেন। (বোখারি)। হজরত উবাদা ইবনে সামিত (রা.) বর্ণনা করেন, একদা রমজান উপস্থিত হলে রাসুল (সা.) আমাদের ডেকে বললেন, ‘রমজান তো এসে গেছে। এটা বরকতের মাস। এ মাসে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেন এবং খাস রহমত বর্ষণ করেন। গোনাহখাতা মোচন করেন। দোয়া কবুল করেন। ইবাদতের প্রতি তোমাদের আগ্রহ লক্ষ্য করেন এবং তা নিয়ে ফেরেশতাদের কাছে গর্ব করেন। অতএব, তোমরা বেশি বেশি সৎকর্ম করে আল্লাহকে দেখিয়ে দাও। হতভাগা ওই ব্যক্তি যে এ মাসে তার রহমত থেকে বঞ্চিত হয়।’ (তিরমিজি)। বাস্তবেই সাহাবারা রমজানে অধিক পরিমাণে ইবাদত করে আল্লাহকে দেখিয়েছেন এবং পরবর্তীদের জন্য উত্তম আদর্শ হয়ে আছেন। এ প্রসঙ্গে হজরত মুয়াল্লা ইবনুল ফজল (রহ.) বলেন, তারা ছয় মাস পর্যন্ত রমজানের ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন। নবীজির শিষ্যদের আমলের এ অবস্থা হলে তাঁর ইবাতদের অনুমান করাও আমাদের পক্ষে কঠিন। কেননা তিনি তো এমনিতেই সারা বছর নামাজ, রোজা, জিকির, দোয়া ইত্যাদি ইবাদতে কাটাতেন। সপ্তাহে সোম ও বৃহস্পতিবার রোজা রাখতেন এবং প্রতির মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। রাতের ইবাদতে তাঁর পা মোবারক ফুলে যেত। বোখারির বর্ণনায় এসেছে, তাঁকে যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আল্লাহ তো আপনার পূর্বাপর যাবতীয় পাপ ক্ষমা করে দিয়েছেন, তবুও আপনি এত অধিক ইবাদত কেন করেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘তা ঠিক; কিন্তু আমি কি আল্লাহর কৃতজ্ঞ বান্দা হবো না?’ হজরত হুজাইফা (রা.) বলেন, এক রাতে আমি নবীজি (সা.) এর পেছনে নামাজের ইক্তিদা করলাম। তিনি সূরা বাকারা পড়ছিলেন। আমি ভাবলাম, হয়তো ১০০ আয়াত তেলাওয়াত করে রুকুতে যাবেন। কিন্তু না, পুরো সূরা শেষ করে আলে ইমরান এবং সূরা নিসাও শেষ করেন। তাঁর তেলাওয়াত ছিল ধীরগতির। প্রার্থনার আয়াত পাঠকালে প্রার্থনা করতেন। রহমতের আয়াতে পৌঁছলে রহমত কামনা করতেন। অতঃপর রুকুতে যান। তাঁর রুকু, সিজদা ছিল দন্ডায়মান সমান। (মুসলিম)। রাসুল (সা.) এর ইবাদত ছিল দায়েমি। তিনি এরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে সেই আমল উত্তম, যা সব সময় করা হয়, যদিও তা অল্প হয়। (বোখারি : ৬৪৬৪)। হজরত আয়শা (রা.) বলেন, কোনো সমস্যার কারণে তাঁর রাতের ইবাদত ছুটে গেলে দিনের বেলায় ১২ রাকাত নামাজ পড়ে নিতেন। (মুসলিম)। মহানবীর অন্তরে সর্বদা আল্লাহর জিকির চালু থাকত। তিনি বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া, ইস্তিগফার ও তওবা করতেন। তিনি বলেন, ‘হে লোক সবাই, তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। কেননা আমি প্রতিদিন ১০০ বার আল্লাহর কাছে তওবা করি।’ (মুসলিম)। রমজান মাসে রাসুল (সা.) শবেকদরের তালাশে ইতিকাফ করতেন। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) রমজানের প্রথম দশক ইতিকাফ করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় দশক ইতিকাফ করেছেন।’ এরপর তিনি লোকদের সম্বোধন করে বলেন, ‘আমি শবেকদরের তালাশে প্রথম ও দ্বিতীয় দশক ইতিকাফ করেছি। কিন্তু আমাকে জানানো হয়েছে, শবেকদর তৃতীয় দশকে। সুতরাং যে ইতিকাফ করতে চায়, সে যেন তৃতীয় দশকে ইতিকাফ করে।’ (মুসলিম)। রাসুল (সা.) আমৃত্যু রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন। শেষ দশকে তাঁর ইবাদত ছিল সবচেয়ে বেশি। আয়শা (রা.) বলেন, শেষ দশক এলে রাসুল (সা.) রাত জেগে ইবাদত করতেন এবং বিবিদের জাগিয়ে দিতেন। (মুসলিম)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়