Friday, June 26

মদিনা শরিফের জুমার খুতবা!মাহে রমজানের সওগাত


শায়খ ড. হুসাইন আলে শায়খ: সবাইকে মাহে রমজানর শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এবং সব মুসলমানের জন্য এ মাসকে বরকত, কল্যাণ এবং নিরাপত্তা ও শান্তির মাস বানিয়ে দিন। এ মাস পাওয়াটাই আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে এক বিরাট নেয়ামত ও বিশাল দান। কেন নয়? এ মাস সব পাপ ও পঙ্কিলতা দূর করে। এ মাসে পদস্খলনগুলোকে মার্জনা করা হয়। সব গোনাহ মাফ করা হয়। রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি ঈমান ও সওয়াবের আশায় রমজানের রোজা রাখবে, তার আগের গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে।' (বোখারি ও মুসলিম)। তৌফিকপ্রাপ্ত ও ভাগ্যবান বান্দা সে, যে তার রবের সন্তুষ্টি পেতে চেষ্টা করে, যেন এর দ্বারা সুউচ্চ স্থান ও মর্যাদা পেয়ে হয় সফল আর দুনিয়া ও আখেরাতে হয় সৌভাগ্যবান। রাসুল (সা.) বলেন, 'যখন রমজান আসে, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।' (বোখারি ও মুসলিম)। পূর্ণ সফলতা আর মহাসৌভাগ্য হচ্ছে ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করা, আনুগত্যে অগ্রগামী হওয়া এবং আকাশ ও জমিনের পালনকর্তার সন্তুষ্টি অর্জন। আমাদের রাসুল (সা.) তাঁর রবের এবং সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে ছিলেন অনেক উদার। আর রমজান এলে তার উদারতা, দানশীলতা আরও বেড়ে যেত। তিনি কল্যাণের ক্ষেত্রে ছিলেন প্রবহমান বাতাস অপেক্ষা অগ্রগামী। এ মাসকে হেলায়-ফেলায় নষ্ট করাই হচ্ছে স্পষ্ট ক্ষতি। আর এটা কেমন, আমাদের অনেকেই তা গোনাহের কাজে নষ্ট করছে? একবার রাসুল (সা.) মিম্বরে আরোহণ করতে গিয়ে বললেন, 'আমিন', এর পর বললেন, 'আমিন', এরপর আবার বললেন, 'আমিন'। অতঃপর যখন এর কারণ জানতে চাওয়া হলো, উত্তরে তিনি বললেন, 'জিবরাঈল (আ.) আমাকে বললেন, সে ব্যক্তি ধ্বংস হোক যে রমজান পেল, অথচ তার গোনাহ মাফ করাতে পারল না এবং আল্লাহ তাকে দূরে ঠেলে দিলেন এবং সে জাহান্নামে প্রবেশ করল। আপনি বলুন_ আমিন, তাই আমি বললাম 'আমিন'। আল্লাহর ভয় ও তাকওয়ার গুণ অর্জনের জন্য রমজান হচ্ছে একটি পাঠশালা। তাই সর্বদা আমাদের এ গুণে গুণান্বিত হতে হবে, বিশেষ করে এ মহান মাসে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'হে ইমানদাররা! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।' (সূরা বাকারা : ১৮৩)। আত্মার পরিচর্যা, আত্মশুদ্ধি ও চরিত্র গঠনের মাসব্যাপী পাঠশালা এ রমজান মাসে যেন সব ধরনের মিথ্যা, অপরাধ এবং অসংযত কাজ থেকে বেঁচে থাকা যায়। রাসুল (সা.) বলেন, 'যখন তোমাদের কেউ রোজা রাখে তখন যেন পাপাচার এবং শোরগোল না করে। যদি তাকে কেউ গালমন্দ করে বা ঝগড়ায় জড়ায়, তাহলে সে যেন বলে- আমি রোজাদার।' অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) বলেন, 'যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা ও কাজ এবং মূর্খতা পরিত্যাগ করে না, তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।' রমজান মানুষকে দান-দক্ষিণা ও উদারতা, মিসকিন ও অভাবী মানুষের প্রতি দয়া এবং বদান্যতা শেখানোর এক বিশাল শিক্ষালয়। রাসুল (সা.) বলেন, 'এবং যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতারি করাবে তার জন্য রোজার সমপরিমাণ প্রতিদান রয়েছে।' অতএব প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এ মাসকে আনুগত্য ও নৈকট্য অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ মনে করা উচিত। এ মাসে সর্বোৎকৃষ্ট আমল হচ্ছে গভীর চিন্তা, একাগ্রতা ও মনোযোগের সঙ্গে কোরআন তেলাওয়াত করা। যে তেলাওয়াত আপনাকে এ জীবনে আমলের দিকে উৎসাহিত করবে। এবং এতে আকাশ ও জমিনের পালনকর্তা আপনার ওপর সন্তুষ্ট হবেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'নিশ্চয়ই যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করে এমন ব্যবসায়ের, যার ক্ষয় নেই। যাতে আল্লাহ তাদের কাজের প্রতিফল পরিপূর্ণভাবে দেন এবং তিনি নিজ অনুগ্রহে তাদের আরও বেশি দেন। নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, অসীম গুণগ্রাহী।' (সূরা ফাতির : ২৯-৩০)। আমাদের নবী (সা.) রমজানে জিবরাঈল (আ.) এর সঙ্গে কোরআন মুদারাসা করতেন। প্রায় ৯টি রমজান তারা এ কোরআনের মুদারাসা করেছেন। অর্থাৎ একে অপরকে শুনিয়েছেন। আর জীবনের শেষ বছরে রাসুল (সা.) তাকে দুইবার কোরআন শুনিয়েছেন। তাফসির শাস্ত্রের আলেমরা বলেন, আল্লাহ তায়ালা রোজার আয়াতগুলোর মধ্যে এ আয়াত এনেছেন, 'আর আমার বান্দারা যখন আমার সম্পর্কে আপনাকে জিজ্ঞেস করে (তখন বলে দিন যে) নিশ্চয়ই আমি অতি কাছে। আহ্বানকারী যখন আমাকে আহ্বান করে আমি তার আহ্বানে সাড়া দেই। কাজেই তারাও আমার ডাকে সাড়া দিক এবং আমার প্রতি ঈমান আনুক, যাতে তারা সঠিক পথে চলতে পারে।' (সুরা বাকারা : ১৮৬)। আর এতে বোঝা যাচ্ছে এ মাসে বান্দার উচিত অধিক পরিমাণে দোয়া করা। রাসুল (সা.) এক হাদিসে এদিকেই ইঙ্গিত করেছেন। তিনি বলেন, 'তিন ধরনের ব্যক্তির দোয়া বিফলে যায় না এর মাঝে একধরনের হচ্ছে রোজাদার যখন ইফতার করে।' অতএব এ মাসে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ কামনায় দোয়ার ক্ষেত্রে অধিক গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। আর দোয়ার মাঝে যেন একটি অংশ বিভিন্ন দেশে আমাদের মুসলিম জাতি যারা বিভিন্ন বালা-মুসিবত ও সমস্যায় পর্যুদস্ত, তাদের জন্য করি। কারণ মুসলমানদের বিভিন্ন বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া মোমিন ও মুত্তাকির বৈশিষ্ট্য ও গুণ। ২ রমজান ১৪৩৬ হি. মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার ভাষান্ত করেছেন মহিউদ্দীন ফারুকী

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়