নিউজ ডেস্ক:
সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল। তার হাত ধরেই বাংলাদেশের আকাশে প্রথমবারের মতো উড়েছিল মনুষ্যবিহীন ড্রোন। শাহাজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী থাকাকালীন ড. জাফর ইকবালের তত্ত্বাবধানে এবং সহযোগিতায় নাবিলসহ আরো কয়েকজন তৈরী করেছিলেন মনুষ্যবিহীন ড্রোন। এরপর নাবিলের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী তৈরী করেন মনুষ্যবিহীন সাবমেরিন। এমনকি নাবিলের হাত ধরেই দেশে প্রথমবারের মতো হেক্সা ও অক্টোকপ্টার তৈরী হয়েছিল। কিন্তু সেসব এখন অতীত! রেজওয়ানুল হক নাবিল এসেছেন নতুন চমক নিয়ে! দেশের প্রথম রাসবেরি পাই ক্লাস্টার কম্পিউটার তৈরী করেছেন নাবিল! সাথে ছিলেন আরো কয়েকজন উদ্যমী।
রাসবেরি পাই ক্লাস্দ্বার কম্পিউটার: বর্তমান বিশ্বেরাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার খুবই জনপ্রিয়। রাসবেরি পাই হচ্ছে সিঙ্গেল বোর্ড কম্পিউটার, যা দামে তুলনামহৃলকভাবে সস্না। কিন্তু এ ধরনের কম্পিউটার দ্রুত কাজ করতে সক্ষম এবং কাজ করার ক্ষমতা অনেক বেশি। অন্যদিকে ক্লাস্দ্বার কম্পিউটার হচ্ছে অনেকগুলো কম্পিউটারের সমন্বিত হৃপ। তবে ক্লাস্দ্বার কম্পিউটার অনেক ব্যয়বহুল।
এসব দিক বিবেচনা করেই রাসবেরি পাই দিয়ে ক্লাস্দ্বার কম্পিউটার তৈরীর চিন্তা মাথায় আসে সিলেট মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক ও ছাত্রদের। যেই ভাবা, সেই কাজ! ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের লেকচারার সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিলের তত্ত¡াবধানে ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় সেই চিন্তার বা¯øব হৃপ দিয়েছেন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্বজন দেবনাথ, ইনতেজাম আহমেদ প্রিনন, লুৎফুর রহমান শাকিল, জয় রয় ও আখলাকুজ্জামান আশিক।
সৈয়দ রেজওয়ানুল হক নাবিল বলেন, ‘বাংলাদেশে এর আগে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবালের তত্ত¡াবধানে ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরী করা হয়েছিল। কিন্তু রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার দেশে এই প্রথমবারের মতো তৈরী হলো। ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার হচ্ছে সুপার কম্পিউটারের ছোট হৃপ। গবেষণার কাজে এ ধরনের কম্পিউটারের প্রয়োজন অনেক বেশি। কিন্তু ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার অত্যšø ব্যয়বহুল হওয়ায় আমাদের দেশে এ ধরনের কম্পিউটার শিক্ষক-শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে কেউই ব্যবহার করতে পারে না।’ আর ঠিক এ চিšøা থেকেই রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরীর প্রজেক্ট হাতে নেন নাবিলরা।
যেভাবে শুরু: সৈয়দ নাবিল যখন শাবিপ্রবি’র শিক্ষার্থী ছিলেন, তখন ড. জাফর ইকবালের বানানো একটি বিশালাকারের ক্লাস্টার কম্পিউটার দেখেছিলেন। তখনো এর কিছুই বুঝতেন না নাবিল! এতো বড় এবং ভিন্ন প্রকৃতির কম্পিউটার ব্যবহার করার সাহসও হয়নি তার। কিন্তু যে কম্পিউটার ব্যবহার করারই সাহস হয়নি নাবিলের, সেই কম্পিউটার বানানোর নেশা মাস তিনেক আগে ঢুকে পড়ে তার মাথায়! কিন্তু ক্লাস্টার কম্পিউটার বানাতে তো অনেক টাকার ব্যাপার! কি করা যায় তাহলে?
সুড়ঙ্গের মুখে আলোর দেখা পেয়ে গেলেন নাবিল। খোঁজ পেলেন রাসবেরি পাই-এর। শুরু করলেন ইন্টারনেট ঘাটাঘাটি। রাসবেরি পাই ক্লাস্টার কম্পিউটারের উপর ইউনিভার্সিটি অব সাউদামপটন’র এক প্রফেসরের রিসার্চ পেপার পড়লেন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে। কিভাবে কি করতে হবে, বুঝে গেলেন নাবিল। কয়েকজন উদ্যমী তারুণ্যকে নিয়ে নেমে পড়লেন কাজে। প্রথম দিকে সবাইকে নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক করলেন রেজওয়ানুল হক নাবিল। তারপর সবাই মিলে প্রয়োজনীয় যšস্লাংশ ও কম্পিউটার সামগ্রি সংগ্রহ করলেন। এরপর নতুন উদ্যমে সঙ্গীদের নিয়ে নেমে পড়লেন কাজে।
কদিনের টানা খাটাখাটুনির পর মোট ৪টি রাসবেরি পাই দিয়ে একটি ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরীর কাজটি শেষ করলেন। স্বজন-প্রিননরা বাংলাদেশের পতাকার আদলে লাল-সবুজ ফাইবার গøাস দিয়ে কম্পিউটারের কেসিং বানিয়ে ফেলেন। পরে যুক্ত করা হয় কুলিং সিস্টেম। তৈরী হযে যায় বাংলাদেশের প্রথম রাসবেরি পাই ক্লাস্টার কম্পিউটার। এই একটি ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার ৩২টি কম্পিউটারে সমানতালে কাজ করতে সক্ষম। প্যারালাল কম্পিউটিংকে জনপ্রিয় করতেই নাবিলদের এই প্রচেষ্টা।
মূলত এই রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার প্রজেক্টটি বা¯øবায়িত হয়েছে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির অর্থায়নে। নাবিল জানালেন, ‘৪টি রাসবেরি দিয়ে একটি ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরীতে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। এক্ষেত্রে প্যারালাল কম্পিউটিং ক্ষমতা থাকে ৩২টি কম্পিউটারের। কেউ চাইলে এর বেশি প্যারালাল কম্পিউটিং সক্ষমতা সম্পন্ন রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটারও তৈরী করা যাবে। তবে এক্ষেত্রে খরচটাও বাড়বে।’
নাবিলদের তৈরী করা রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটারটি বর্তমানে মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ইনোভেশন ল্যাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এখানেই থামছেন না তারা। বর্তমানে একটি পোর্টেবল রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরীর কাজ করছেন তারা। এটি তৈরী হলে যে কেউ ট্যাবের মতো হাতে নিয়ে ঘুরতে পারবে, ব্যবহার করতে পারবে। নাবিলদের এই প্রজেক্টেও পরামর্শ দিয়েছেন শাবির ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
স্বপ্ন পহৃরণের গল্প শোনাতে গিয়ে নাবিল জানান, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বাণিজ্যিকভাবে এই রাসবেরি পাই ক্লা¯দ্বার কম্পিউটার তৈরীতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবে এটা আমাদের বিশ^াস। তাতে করে আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষায় এবং গবেষণার কাজে সহজলভ্য হয়ে ওঠবে এই কম্পিউটার। আমরাও বিশে^র উšæত প্রযুক্তি ব্যবহারকারী দেশগুলোর সঙ্গে তখন সমান ভাবে লড়ে যেতে পারব। সেই দিন আর খুব বেশি দূরে নয়।
স্বপ্ন অনেক বড়: একেকটা সাফল্য ধরা দেয় নাবিলদের হাতের মুঠোয়, ভেসে যান উচ্ছাসে। কিন্তু থেমে যান না। সাফল্যের আনন্দকে আরো অনেকগুণ বাড়িয়ে নিতে নেমে পড়েন নতুন কোনো প্রজেক্ট হাতে নিয়ে। অজানা-অচেনাকে জয় করার রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা সঙ্গী হয় নাবিলদের। তাদের স্বপ্নের আকাশটা অনেক বড়। বাংলাদেশে সুপার কম্পিউটিংকে জনপ্রিয় করতে, ছড়িয়ে দিতে চেষ্টা চলছে তাদের। নিজেরা শিখছেন, শেখানোর চেষ্টা করছেন। অদূর ভবিষ্যতে নতুন কোনো চমক নিয়ে হয়তো ফের দৃশ্যপটে আগমন ঘটবে নাবিলদের!
সিলেটভিউ২৪ডটকম
খবর বিভাগঃ
তথ্য প্রযুক্তি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়