Saturday, June 13

গৃহিণীদের রমজান পরিকল্পনা


রোমানা আক্তার: রমজান দুয়ারে কড়া নাড়ছে। রমজান যেহেতু আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ রহমত পাওয়ার মাস তাই পুরো রমজান কীভাবে পালন করে অর্থবহ করে তোলা যায়, এজন্য গৃহিণীদের বিশেষ কিছু পরিকল্পনা থাকা চাই। যাতে রমজান এবং ঈদের আনন্দ- দুই-ই পুরোপুরি উপভোগ করার পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি ও আখেরাতের শাস্তি থেকে পরিত্রাণ মেলে। রমজান শুরুর আগে পরিকল্পনা ১. রমজান শুরুর আগেই ঘরবাড়ি পরিচ্ছন্নতার কাজ সেরে রাখুন। যেমন- ঘরে সাজিয়ে রাখা শোপিস, ফুল, পর্দা, রান্নাঘরের কেবিনেট, রেফ্রিজারেটর, ওভেন ইত্যাদি। ২. রমজানের আগেই মুদি দোকানের প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে নিন। সব গুছিয়ে রাখুন। প্রয়োজনে কৌটার গায়ে জিনিসপত্রের নাম লিখে রাখুন যেন দরকারের সময় অযথা খোঁজাখুঁজি করে সময় নষ্ট না করতে হয়। ৩. যে জামা-কাপড়গুলো অনেক দিন জমিয়ে রেখেছেন লন্ড্রিতে দেবেন বা বাসায় ধুয়ে নেবেন সেগুলো ধুয়ে ইস্ত্রি করে আলমারিতে তুলে রাখুন। নয়তো এগুলোর জন্য আপনাকে পরিশ্রম ও টেনশন দুইটিই করতে হবে। ৫. মাসজুড়ে চলে ঈদের কেনাকাটার ব্যস্ততা। এ ঝামেলা থেকে মুক্তির জন্য রমজান শুরুর আগেই পরিবারের সবার জন্য তালিকা করে ঈদের কেনাকাটা সেরে ফেলতে বা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনতে পারেন। এতে একদিকে যেমন সময় সুস্থভাবে কাজে লাগাতে পারবেন তেমনি বাড়তি খরচ থেকেও মুক্তি পাবেন। রমজানের দিনগুলোর পরিকল্পনা ১. প্রতি ওয়াক্তের ফরজ নামাজ নিয়মিত আদায় করার চেষ্টা করুন, সুন্নত এবং নফল ইবাদত আপনার পক্ষে যতটা সম্ভব বাড়িয়ে দিন। সন্তানদের মাঝেও ইবাদতের অভ্যাস গড়ে তুলুন। ২. রমজানে একবার কোরআন মাজিদ খতম করার পরিকল্পনা নিতে পারেন। তবে শুধু কোরআন খতমের দিকে লক্ষ্য না রেখে কোরআন অর্থ বুঝে পড়ার চেষ্টা করবেন। ৩. সন্তানকে রোজা রাখতে উদ্বুদ্ধ করুন। কম্পিউটার গেমস ইত্যাদি থেকে তাদের বিরত রেখে কোরআন পড়তে উৎসাহ দিন। ৪. আমরা কেউ ভুল-ভ্রান্তির ঊর্ধ্বে নয়, তাই নিজের দোষগুলো খুঁজে বের করুন, অন্যের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তুলুন এবং অন্যকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন। গিবত চোগলখোরি আর ঝগড়া-বিবাদ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখুন। ৫. খাবার-দাবারের কাজে নিজেকে এতটা ব্যস্ত রাখবেন না যাতে আপনি ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং রাতের তারাবি নামাজ পড়তে অলসতা বোধ করেন। ৬. সাহরি খাওয়া সুন্নত। তাই রাতের একটা নির্দিষ্ট সময় ঘুমিয়ে ক্লান্তি দূর করুন এবং সবাইকে সাহরি খেতে উৎসাহিত করুন। ৭. অযথা সারা রাত জেগে থেকে দিনের অধিকাংশ সময় ঘুমিয়ে কাটানোর পরিকল্পনা বাদ দিন। ৮. নিজেদের ইফতার থেকে প্রতিদিন অন্তত একজন রোজাদারকে ইফতারি করানোর চেষ্টা করুন। এক্ষেত্রে অবশ্যই নিজেদের গরিব আত্মীয়স্বজনকে আগে নির্বাচন করুন। যতটা সম্ভব গরিব আত্মীয়স্বজনকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করুন। ৯. ইফতারির সময় কিছুটা সময় হাতে রেখে ইফতারি তৈরির কাজ শেষ করবেন যেন পরিবারের সবার সঙ্গে বসে একসঙ্গে ইফতারি করতে পারেন। মনে রাখবেন, ইফতারের সময় দোয়া কবুল হয়। ১০. আত্মসমালোচনা করে নিজের সব গোনাহ, ভুল-ত্রুটির জন্য আল্লাহর কাছে খাঁটি মনে তওবা করুন এবং শিরক বিদআত থেকে মুক্ত থাকার জন্য আল্লাহর কাছে হেদায়েত প্রার্থনা করুন। ১১. নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী এ মাসে দান-সাদাকা করার চেষ্টা করুন। জাকাত-ফিতরা আদায় করুন। ১২. ঘরের বিভিন্ন কাজের ফাঁকে ফাঁকে অন্তরে আল্লাহকে স্মরণ ও মুখে জিকির-আজকার করে আপনার নেকির পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করুন। ১৩. একজন মুসলিম মহিলার প্রাত্যহিক জীবন কেমন হওয়া উচিত? দিনের একটা অবসর সময় বেছে নিয়ে আপনার কাছের বান্ধবীদের সঙ্গে নিয়ে বসে আলোচনা-সমালোচনা করুন এবং নিজেদের একজন উন্নত মুসলিমাহ হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একে অন্যকে অনুপ্রেরণা দিন। ১৪. সহিহ-শুদ্ধভাবে দ্বীনের জ্ঞান লাভের চেষ্টা করুন। দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার কোনো সুযোগ পেলে সেটা হাতছাড়া করবেন না। ১৫. রোজা থাকা অবস্থায় দোয়া কবুল হয় তাই এ সময় বেশি করে দোয়া করুন, নিজের জন্য, পরিবারের জন্য, বাবা-মায়ের জন্য, দেশের জন্য, সব মোমিন মুসলিমের জন্য।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়