Monday, May 11

ভালোবাসাময় মা


তৌফিকুল ইসলাম: হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা উজাড় করে মা বলে কাউকে ডাকতে না পারার যে কষ্ট, তা শুধু মা হারা সন্তানই বুঝতে পারে। পৃথিবীতে ভালোবাসার জন্য কত মানুষই তো আছে; কিন্তু মায়ের মতো ভালোবাসা আর কেউ দিতে পারে না। মায়ের কাছ থেকেই আমরা বাঁচতে শিখি, সুন্দর পৃথিবীটায় অনেক বড় হওয়ার স্বপ্ন বুনি। যখন আমরা সফল হই, তখন মা-ই সবচেয়ে বেশি খুশি হন। অফুরন্ত ভালোলাগার আবেশে মায়ের মনটা আনন্দে আত্মহারা হয়ে ওঠে। মায়ের হাত ধরেই সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের পথে সন্তানের যাত্রা শুরু হয়। সন্তানের বুলিতে মা পরম মমতায় অ আ বর্ণগুলো তুলে দেন। সন্তান পড়তে শিখে, আর মা আনন্দে উদ্ভাসিত হন। রান্নাবান্নাসহ সাংসারিক কাজের ফাঁকে মা সন্তানকে গড়ে তোলেন মানুষের মতো করে। সন্তানের এক টুকরো মুখের হাসির জন্য মা তার সব সুখকে বিসর্জন দেন। মায়ের শুধু একটাই চাওয়া, আমার সন্তান অনেক বড় হবে। জায়নামাজে বসে মা যখন সন্তানের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, সে দোয়া কবুল হয়নি_ এমন কোনো দৃষ্টান্ত পাওয়া যায় না। মায়ের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার জন্য কোরআন-হাদিসে দৃঢ় নির্দেশনা এসেছে। ক্ষণিকের এ পৃথিবীতে মা সবচেয়ে আপনজন। স্রষ্টার সবচেয়ে মূল্যবান নেয়ামত। সন্তান যখন কষ্টে থাকে, মায়ের মন কেমন যেন অস্থির হয়ে ওঠে। সন্তান অসুখে পড়লে মা ঘুমাতে পারে না। সন্তানের মাথায় মা যেভাবে পরম মমতায় হাত বুলিয়ে দেন, পৃথিবীর কারও পক্ষে সম্ভব না ঠিক সে ধরনের মমতায় হাত বুলিয়ে দেয়া। এত কিছুর পরও যে সন্তান মায়ের মর্যাদা বুঝতে পারে না তার মানব জন্ম বৃথা। পৃথিবীর এপারে সে হয়তো পশুর মতো জৈবিক সুখ নিয়ে বেঁচে থাকতে পারে; কিন্তু জীবন নদীর ওপারে সর্বশক্তিমানের কাছে সে কিছুতেই জান্নাতের সুঘ্রাণ পাবে না। পৃথিবীর সব সম্পদ বিক্রি করেও সন্তানের পক্ষে মায়ের একফোঁটা দুধের দাম পরিশোধ করা সম্ভব নয়। মায়ের অবাধ্য হয়ে আজ পর্যন্ত কোনো সন্তান পৃথিবীর বুকে সাফল্য লাভ করতে পারেনি। যারা মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে, তাদের অবস্থান শুধু চার দেয়ালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কারণ মায়ের দোয়া ছাড়া জীবনে বড় হওয়া অসম্ভব। মায়ের বিকল্প কেউ হতে পারে না। আজকাল স্ত্রী-সন্তান পেয়ে অনেকেই তার মাকে ভুলে যায়। স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে সন্তান মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করে। এতে স্ত্রী হয়তো খুশি হয়; কিন্তু সন্তান ভুলে যায় তার স্রষ্টার আদেশের কথা। মাকে নিয়ে অনেক চলচ্চিত্র, গান ও বই রয়েছে। মাকে নিয়ে কিছু লিখলে সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। কারণ পৃথিবীতে মায়ের আদরের চেয়ে অধিক মমতার আর যে কিছু নেই! হাদিসের ভাষ্যমতে মা-বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে আল্লাহর সন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। তাই একজন মুসলমান কোনো কিছুর বিনিময়েই মায়ের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে পারে না। সংসারের প্রধান উপার্জনকারী হিসেবে বাবাকে মায়ের তুলনায় ঘরের বাইরে বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। তাই মায়ের আদর সন্তান সবচেয়ে বেশি পেয়ে থাকে। পৃথিবীব্যাপী বছরে একবার 'বিশ্ব মা দিবস' পালিত হয়। এদিন সন্তানরা মায়ের মুখে একটু হাসি ফোটানোর জন্য মাকে ছোট্ট একটি উপহার দিয়ে, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে, রান্না করে খাইয়ে, কোথাও বেড়াতে নিয়ে ইত্যাদি বিভিন্ন আয়োজন করে থাকে। আর যাদের মা নেই তারা সারা জীবনের জন্য মায়ের আদর হারিয়ে ফেলার কষ্টে নীরবে চোখের পানি ফেলে। বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে কবরস্থানে গিয়ে মার কবর জিয়ারত করে আসে। পরম করুণাময়ের কাছে অনুভূতির সবটুকু আকুলতা দিয়ে প্রার্থনা করে, হে সর্বশক্তিমান, জান্নাতে মায়ের সঙ্গে আমার দেখা করার ব্যবস্থা করে দাও। মা হারা সন্তান ঘুমের মধ্যে যখন মাকে স্বপ্নে দেখে, সে অনুভূতি তার পক্ষে ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। মা বেঁচে থাকা অবস্থায় যেমনি তার সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে হবে, তেমনিভাবে মা আল্লাহর কাছে চলে গেলে উভয় অবস্থায়ই তার জন্য রাব্বুল আলামিনের শিখিয়ে দেয়া দোয়া করতে হবে। 'হে আমাদের প্রতিপালক! আমার মা-বাবা শৈশবে যেরূপ মমতায় আমাকে লালন করেছেন, তুমিও তাদের ওপর সেরূপ করুণা বর্ষণ করো।' (সূরা বনি ইসরাইল : ২৪)। মায়ের প্রতি ভালোবাসা বছরের প্রত্যেক দিনের জন্যই। তারপরও আধুনিক যান্ত্রিক ব্যস্ত জীবনে মায়ের অমূল্য অবদানকে বিশেষভাবে মনে করার জন্যই একটি দিন বেছে নেয়া হয়েছে। মা দিবসে পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি শুভেচ্ছা রইল। বৃদ্ধাশ্রম যেন কোনো মায়ের ঠিকানা না হয়, মা দিবসে এ প্রত্যাশাই করছি।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়