Monday, May 4

জনপ্রতিনিধির জনসেবা


আবদুল্লাহ মুকাররম: সেবা একটি মহৎ কাজ। ইসলাম এতে উৎসাহ জোগায় এবং সেবকের জন্য পুরস্কারের ঘোষণাও করেছে অনেক জায়গায়। সেবার পরিসর ছোট বা বড় যাই হোক না কেন, তা পুণ্যের কাজ। সেবক নিয়ত ও এখলাস অনুপাতে সওয়াবের ভাগী হয়। বাহ্যত পার্থিব কাজও অনেক সময় সৎ নিয়তের কারণে সওয়াবের কাজে পরিণত হয়। আবার অনেক ধর্মীয় কাজও নিয়তজনিত কারণে ভেস্তে যায়। জীবনে নানা সময়ে আনুকূল্য ও সেবার প্রয়োজনেই মানুষের সমাজবদ্ধ বসবাস। মানুষের লক্ষ্যে-অলক্ষ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা ও সেবায়ই সমাজ ব্যবস্থা সচল থাকে। সেবার মাধ্যমেই মানসিকতা লোপ পেলে সমাজ ব্যবস্থা ভেঙে যায়। সমাজে বিশৃঙ্খলা, নৈরাজ্য ও শোষণের মহামারী পরিলক্ষিত হয়। আমাদের ঘুণেধরা এ জীর্ণশীর্ণ সমাজকে ফলপ্রসূ, সুশৃঙ্খল ও কল্যাণমুখী করতে সেবকের প্রয়োজন, যারা নিজেদের পাশাপাশি অন্যদের নিয়েও ভাববে বরং অন্যদের বিষয়কেই প্রাধান্য দেবে। নবী করিম (সা.) এরশাদ করেন, ‘জাতির নেতা জাতির সেবক হয়ে থাকে।’ আমাদের সমাজ ও সরকার ব্যবস্থাকে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচলনার জন্য প্রচলিত ধারায় গণতান্ত্রিক নিয়মে কয়েকটি স্তরে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। তাদের প্রধান পরিচয় জনপ্রতিনিধি। বিধি মতে জনসেবা করাই তাদের কাজ। অন্য কথায় জনগণের সমস্যা সমাধান করা, তাদের সার্বিক কল্যাণের পথকে সুগম করার লক্ষ্যে সরকারের উচ্চমহলের দৃষ্টি আকর্ষণের মাধ্যমে সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। নির্বাচন-পূর্ব প্রচারণায় সবারই প্রতিশ্রুতি তাই প্রমাণ করে। ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন হয়ে গেল। সেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যারা সেবক হিসেবে নতুন নগরপিতা হতে যাচ্ছেন, তারা তাদের সেবাকে সুন্দর ও স্বার্থক করতে অতীতের সেসব মহামনীষীর সেবাকর্ম দেখে নিতে পারেন, অদ্যাবধি পৃথিবীবাসী যাদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। ১. হজরত আবু বকর (রা.)। ইসলামের প্রথম খলিফা। তিনি মক্কার বিশিষ্ট ধনাঢ্য ব্যক্তি ছিলেন। ইসলাম গ্রহণের পর তার সমুদয় সম্পদ দ্বীনি কাজে ব্যয় করেছেন। খলিফা হওয়ার পরও ইসলামী খেলাফতের এ বাদশা জীবিকার সন্ধানে কাপড়ের গাঁটরি মাথায় নিয়ে বাজারে ছুটছেন। পথে হজরত ওমরের সঙ্গে সাক্ষাৎ। জিজ্ঞেস করলেন কোথায় যাচ্ছেন? আপনি এখন রাষ্ট্রপ্রধান। ব্যবসার উদ্দেশে বাজারে যাওয়ার সুযোগ আর নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি মানুষের সব দায়িত্ব এখন আপনার। আপনি রাষ্ট্রের কাজে ব্যস্ত থাকবেন, আর রাষ্ট্র আপনার প্রয়োজন মেটাবে। এরপর তার যতসামান্য ভাতা নির্ধারণ করা হয়। এর ওপরই সন্তুষ্ট থেকে অবশিষ্ট জীবন পার করে দেন। অতঃপর মৃত্যুশয্যায় ওয়ারিশদের অসিয়ত করে গেলেন, বায়তুলমাল থেকে গৃহীত সমুদয় ভাতা আমার সম্পত্তি থেকে ফিরিয়ে দেবে। বাস্তবে হয়েছিলও তাই। ২. হজরত ওমর (রা.) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা। অর্ধ জাহানের সফল শাসক। তার সাধারণ নিয়ম ছিল, রাতের আঁধারে ছদ্মবেশে ঘুরে ঘুরে প্রজাদের প্রকৃত অবস্থা জানা। একদিন রাতে হাঁটছেন। দূরে খোলা ময়দানে কাতরকণ্ঠ শুনে এগিয়ে গেলেন। দেখেন, মুসাফির দম্পতি; স্ত্রী প্রসব ব্যথায় কাতরাচ্ছেন। তাদের সহযোগিতার কেউ নেই এবং ময়দানে অতীব প্রয়োজনীয় আসবাবও নেই। স্বামী এ অবস্থায় স্ত্রীকে একা রেখে কোথাও যেতে পারছেন না এবং কোনো কিছুর ব্যবস্থাও করতে পারছেন না। তাই কোনো ত্রাণকর্তার প্রতীক্ষায় কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পথ চেয়ে আছেন। হজরত ওমর (রা.) দৌড়ে বাড়িতে এসে স্ত্রীকে বললেন, চলো, আজ তোমার মহাপুণ্যের সুযোগ হয়েছে। অতঃপর খলিফার স্ত্রী ধাত্রীর কাজ সমাধা করলেন আর খলিফা নিজে বাইরে অন্যান্য কাজ আঞ্জাম দিলেন। আমাদের জনপ্রতিনিধিদের মনে রাখতে হবে, মহানবী (সা.) এরশাদ করেন, ‘তোমরা প্রত্যেকে দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই আপন দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বোখারি)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়