ওয়ালিউল ইসলাম:
যে নামটি সবচেয়ে প্রিয়। যে নামে সব ভুলে যাই। যার জন্য সব পথ ফুরিয়ে আসে। যার বিচ্ছেদে হৃদয় ফেলে আসি। সে আমার মা। যার জন্য এগিয়ে চলি, যার জন্য ছুটে যাই, সে আমার মা। মায়ের কাছে শক্তি পাই, ভক্তি শিখি। মূল্য পাই, কাব্য লিখি। আবেগে মা, অনুরাগে মা। চেতনায় মা, প্রেরণায় মা। মা আমার হেঁটে চলার আস্থার আঙুল।
দৃষ্টি ও শ্রবণ-সীমানার বাইরে সন্তানের কিছু হলেই মায়ের মন অাঁতকে ওঠে। তখন একটি কথা আসে, মায়ের মন তো!! মা এমনই। মায়ের চোখ কিছু দেখে না। কান কিছু শোনে না। জিজ্ঞেস করে না মুখ। তবুও মা দেখতে পারে সন্তানের ভেতর-বাইর। শুনতে পারে ঘুম-জাগরণের সব ভাষা। বুঝতে পারে মা যে আমার অবলা সব গল্পকথা। অনুচ্চারিত সব হৃদয়ের অক্ষর।
ওই চোখের দৃষ্টি সবাইকে ভাগ করে দেয়া হলে সমাজে বিদ্বেষ মিটে যাবে। যে চোখ দিয়ে আমাকে দেখে মা। ওই হাতের জাদুর শক্তি সবাই পেলে সুষম বণ্টন হবে প্রতিজনে। যে হাত রাখে মা আমার মাথার ওপর। ওই মনের ভালোবাসা সবাইকে একটু একটু দিলেও হারিয়ে যাবে হিংসা। নির্মূল হবে অন্যায়। পাব নির্মল পরিবেশ। যে ভালোবাসা লুকিয়ে আছে আমার মায়ের অাঁচলে।
পৃথিবীর মহান কীর্তির বারান্দায় আমার মায়ের চেয়ার। মা আলো আশা দেয়, মা ভালোবাসা দেয়। মা বুকের প্রীতি দেয়, মা সুখের স্মৃতি দেয়। ওই একটা মনই পৃথিবীতে আছে, যেখানে কোনো খুঁত নেই। একটি অাঁচলই আছে, যেখানে কোনো অনাদর নেই। ওই একটা মুখই আছে, যেখানে কোনো তেতো নেই। পৃথিবীতে একটি অকৃত্রিম হাসি থাকলে, সেটিও আমার মায়ের মধুর হাসি। মায়ের কালো মুখ পৃথিবী ঢেকে দেয় অাঁধারে।
অস্তিত্বের শুরু থেকেই কষ্ট দেয়া শুরু করেছি মাকে। আবেগে, অনুরাগে, অনুযোগে, অভিমানে কষ্ট দিয়েছি মাকে। কষ্টের সকাল করেছি অভিমানের দুপুর। বেদনার বিকাল করেছি বিয়োগের রাত। কিন্তু পরের সকাল দেখেছি মধুর। দুপুর দেখেছি আনন্দের। এভাবেই অাঁচলে আগলে রাখে মা সন্তানকে। পৃথিবীতে মায়ের অাঁচলই মানুষের একমাত্র নিশ্চিত আশ্রয়স্থল।
পৃথিবীতে আসার একমাত্র মাধ্যম মা। সব আনন্দ-সুখ হেরে যায় মায়ের কাছে; অথচ মাকে অসহ যন্ত্রণা দিয়ে আমরা ভুবনে আসি। আমি বলতে পারিনি, আমার ক্ষুধা পেয়েছে_ মা আমাকে খাইয়ে দিয়েছে। আমি বলতে পারিনি ঘুমের কথা_ মা ঘুম পাড়িয়েছে। বলতে পারিনি অসুস্থতার কথা_ মা আমাকে সুস্থ করে তুলেছে। জীবনের মোড়ে মোড়ে বহু লোকের সঙ্গেই সাক্ষাৎ-সম্পর্ক হয়; কিন্তু ভিন্ন একটি জায়গা আছে যেখানে মা একা। কারও সঙ্গে মায়ের তুলনা নেই। কত রাত মাকে জাগ্রত বসিয়ে রেখেছি তার হিসাব নেই। কত বেলা মাকে উপোস রেখেছি তা জানি না। এরকম কতবার দাগা দিয়েছি মায়ের মনে তাও অজানা। কিন্তু মা তো মহান, মহীয়ান। সেই যে অাঁচলে বেঁধেছে, ছাড়বে না কোনো দিন। তাই তো মায়ের জন্য দোয়া করতে প্রভুই শিখেয়ে দিয়েছেন 'হে আমার মালিক, তাদের প্রতি ঠিক সেভাবে দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে লালন করেছিলেন।' (বনি ইসরাঈল : ২৪)। আল্লাহর রাসুল (সা.) এর কাছে গিয়ে এক সাহাবি জিজ্ঞেস করলেন, কার খেদমত সবচেয়ে বেশি করব। রাসুল বললেন, মায়ের। সাহাবি আবার জিজ্ঞেস করলেন, রাসুল বললেন, মায়ের। আবারও জিজ্ঞেস করলে রাসুল বললেন, মায়ের। অতঃপর জিজ্ঞেস করলে রাসুল বললেন, বাবার। (মুসলিম)।
মা। ছোট্ট এ শব্দের ভেতরে লুকিয়ে আছে সাত রাজার ধন। সাত সাগরের মুক্তা। নিঃস্বার্থ বিলিয়ে দেয়া মায়ের জন্যই এখনও দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবী। ছোট্ট এ শব্দটি বেঁধে রেখেছে প্রতিটি কদম। আগলে রেখেছে প্রতিটি মুহূর্ত। মায়ের এ ঋণ শোধ হওয়ার নয়। সন্তানের শত অন্যায়ের পরও মা যেমন কঠিন তার চেয়ে বেশি নরম। খানিকটা রেগে গেলেও কখনও রাগেন না মায়েরা। গর্জন তোলে কিন্তু বৃষ্টি নামায় না মায়েরা। তাই তো মা আমার মেঘ ছাড়া গর্জন।
সন্তান যত বড়ই হোক, মায়ের কাছে সে শুধুই সন্তান। যত বড় অপরাধই করুক, সে মায়ের সন্তানই। তাই তো কবি বলেছেন, তুমি ছিলে পৃথিবীর একমাত্র আদালত, যেখানে বিচারের আগেই আমি ছিলাম সম্পূর্ণ নির্দোষ।
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়