Monday, May 11

মায়ের সেবার অপূর্ব নিদর্শন


মাওলানা নজরুল ইসলাম সিদ্দীক: ইসলাম মা-বাবার যে সম্মান ও অধিকার দিয়েছে, পৃথিবীর ইতিহাসে অন্য কোনো ধর্ম বা মতবাদ তা দিতে পারেনি এবং কেয়ামত পর্যন্ত পারবেও না। ইসলামের বিধান মতে, আল্লাহ তায়ালার পরই মা-বাবার স্থান। এ প্রসঙ্গে মহাগ্রন্থ আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘তোমার প্রতিপালক আদেশ দিয়েছেন তিনি ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত না করতে এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করতে। তাদের একজন অথবা উভয় তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের উফ্ (বিরক্তি ও অবজ্ঞাসূচক কথা) বলিও না এবং তাদের ধমক দিও না; তাদের সঙ্গে সম্মানসূচক কথা বলিও। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার ডানা প্রসারিত করো এবং বলো হে আমার প্রতিপালক! তাদের প্রতি দয়া করো যেভাবে শৈশবে তারা আমাকে প্রতিপালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩-২৪)। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনের অন্যত্র এরশাদ করেন, ‘আমি তো মানুষকে তার মা-বাবার প্রতি সদাচরণের নির্দেশ দিয়েছি। জননী সন্তানকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেন এবং তার দুধ ছাড়ানো হয় দুই বছরে। সুতরাং আমার প্রতি এবং তোমার মা-বাবার প্রতি কৃতজ্ঞ হও। প্রত্যাবর্তন তো আমারই কাছে।’ (সূরা লুকমান : ১৪)। উল্লিখিত আয়াতগুলোতে স্পষ্ট ভাষায় বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালার পরই মা-বাবার অধিকার। সেই অধিকার কীভাবে আদায় করবে সেটাও বলা হয়েছে। মা-বাবার অধিকার সম্পর্কে হাদিসের বহু জায়গায় বর্ণনা এসেছে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে জিজ্ঞেস করল; হে আল্লাহর রাসুল! কে আমার উত্তম আচরণ পাওয়ার বেশি হকদার? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে বলল তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে আবারও বলল, তারপর কে? তিনি বললেন, ‘তোমার মা’। সে আবারও বলল এরপর কে? তিনি বললেন তোমার বাবা। (বোখারি-মুসলিম)। প্রিয়নবী (সা.) আরও এরশাদ করেন, ‘জান্নাত মায়েদের (অর্থাৎ মাতা-পিতার) পদতলে’। মা-বাবার খেদমত না করার কারণে যারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হলো, রাসুল (সা.) তাদের অভিসম্পাত করেছেন। রাসুল (সা.) এর যুগে বিখ্যাত এক আশেকে রাসুলের ঘটনা আমরা জানি। যিনি প্রিয় নবীজি (সা.) কে দেখেননি, সেই আশেকে রাসুলের নাম হজরত ওয়াইস আল করনি (রহ.)। প্রিয়নবীর যুগে থেকেও তিনি সাহাবি হতে পারেননি মায়ের সেবা করার কারণে। তবে সেবা করে তার মর্যাদা কমেনি। তিনি সম্মানিত হয়েছেন। একবার ওয়াইস করনি (রহ.) প্রিয় নবীর কাছে এ মর্মে খবর পাঠালেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনার সঙ্গে আমার দেখা করতে মন চায়; কিন্তু আমার মা অসুস্থ, এখন আমি কী করতে পারি? প্রিয়নবী (সা.) উত্তর পাঠালেন, আমার কাছে আসতে হবে না। আমার সাক্ষাতের চেয়ে তোমার মায়ের খেদমত করা বেশি জরুরি। শুধু তাই নয়, প্রিয়নবী (সা.) তাঁর পবিত্র গায়ের একটি জামা তার জন্য রেখে যান এবং বলেন, মায়ের খেদমতের কারণে সে আমার কাছে আসতে পারেনি। আমার ইন্তেকালের পর সে এলে তাকে আমার এ জামাটি উপহার দেবে। জামাটি রেখে যান হজরত ওমর (রা.) এর কাছে এবং প্রিয়নবী (সা.) বলেন, হে ওমর, ওয়াইস করনির কাছ থেকে তুমি দোয়া নিও!

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়