Saturday, May 2

ড্রয়েও জয়ের আনন্দ


ঢাকা: জয় তো জয়ই। জয়ের সঙ্গে কি অন্য কোন কিছুর তুলনা চলে? চলেনা, আবার চলেও। অনেক সময় ড্রয়েও জয়ের আবেদন স্পর্শ করে। বীরত্বপূর্ণ ড্র কখনও কখনও ছাপিয়ে যায় জয়ের আনন্দকেও। খুলনা টেস্টই যে তার ভালো উদাহরণ। প্রথম থেকে টানা ৮ টেস্টেই পাকিস্তানের কাছে হেরেছে বাংলাদেশ। এই কারণেই কি খুলনা টেস্ট ড্র করে ভিতরে ভিতরে আনন্দে ভেসেছে টাইগাররা? এটা একটা কারণ অবশ্যই। কিন্তু এক নম্বর কারণ নয়। পাকিস্তানের প্রথম ইনিংসে রানের হিমালয়ের চাপে পিষ্ট হয়েও যেভাবে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে স্বাগতিকরা, তার তুলনা নেই। এখানেই যতো গর্বের বিষয়। বিশ্বকাপে নজর কাড়ার পর পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা ৫ ম্যাচ জয়ের অর্থটা হলো, ( প্রস্তুতি ম্যাচটাসহ) বাংলাদেশ এখন আর দর্বল নয়, রীতিমত বড় দল। মুখে না বললেও মনে মনে নিন্দুকেরাও স্বীকার করে নিবেন এ সত্য কথাটা। কিন্তু টেস্টে? ৫ দিনের ম্যাচ নিয়ে আসলেই অনেক প্রশ্ন। দলে ম্যাচ উইনিং ফাস্ট বোলার নেই। স্পিন ডিপার্টমেন্টেরও একই অবস্থা। বিশ্বমানের অফ স্পিনার নেই। নেই এক ভালো মানে লেগ স্পিনারও। এই বোলিং নিয়ে বড় দলকে কিভাবে হারাবে বাংলাদেশ? খুলনা টেস্টে বোলিং নিয়ে এসব প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। তারপরেও একটা উত্তর ঠিকই বেরিয়ে এসেছে। এবং তা হলো- বোলিং সীমাবন্ধতা সত্বেও বাংলাদেশ ৫ দিনের ক্রিকেটেও বড় দল হয়ে ওঠেছে। বোলিং; সময়ের সঙ্গে সেটাও ঠিক হয়ে যাবে। ওয়ানডে এবং টি-টোয়েন্টিতে পাকিস্তানকে বিধ্বস্ত করার পর জিওফ বয়কট বলেছেন, বাংলাদেশকে এভাবেই বারবার জিততে হবে। বয়কট বরাবরই বাংলাদেশের সমালোচক। বাংলাদেশকে নিয়ে খুব একটা ইতিবাচক কথা বলেন না। বাংলাদেশ প্রশংসার ফাঁকে একটা খোঁচা মেরেছেন আর কি। সাবেক ক্রিকেটার নভজোৎ সিং সিধু আরও তিন ধাপ এগিয়ে। তিনি ভিসন বাংলাদেশ বিদ্বেষী। এই দলটা নিয়ে তার তাচ্ছিল্যের শেষ নেই। পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের সাড়া জাগানো পরফরম্যান্স তাকে নিশ্চয়ই হতাশ করেছে। কিন্তু হতাশ নন গৌরভ গাঙ্গুলী। তিনি সিধুর মতো নোংরা মনের মানুষ নন। তামিমের ডাবল সেঞ্চুরি এবং বাংলাদেশের দারুণ ব্যাটিংয়ে ঠিকই গর্বিত সৌরভ। বলেছেন,‘ সাবাশ, তামিম ইকবাল। বাংলাদেশ ভালো ক্রিকেট খেলছে দেখে ভালো লাগছে। তোমাদের সবার জন্য আমি গর্বিত।’ খুলনা টেস্টের প্রথম ইনিংসে একটু নেতিবাচক ব্যাটিং করে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ১২০ ওভারে রান ৩৩২। ওভার প্রতি মাত্র ২.৭৬। সর্বোচ্চ ৮০ রান করা মমিনুল বলেছিলেন, উইকেট এতোটাই কঠিন, দ্রুত রান করতে গেলেই আউট হয়ে যেতে হয়।’ কিন্তু পাকিস্তানের প্রথম ইনিংস যখন ৬২৮ রানের হিমালয়ে চড়লো, তখন মমিনুলের কথাটা অসার প্রমাণিত হলো। পাকিস্তান ওভার প্রতি রান তুললো ৩.৭২ করে। মানে বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে প্রায় ১০০ রান কম করেছে। আরও একশ রান বেশী হলে ম্যাচটা জমে উঠতো। দুটো চাপ বাংলাদেশের উপর তখন থাকতো না। এক. ইনিংস হার এড়ানোর চাপ এবং দুই. পৌনে দুই দিন উইকেটে টিকে থেকে ড্র করার চাপ। এসব চাপ মাথায় নিয়ে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করা খুবই কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের জন্য। বাংলাদেশ বড় দল হওয়ার প্রমাণ দিয়ে সেই চ্যালেঞ্জে যেভাবে জিতে গেলে, তাতে বিস্মত সবাই। খোদ বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টও ভাবেনি, এতোটা ভালো করে বসবে দল। চতুর্থ দিন শেষে বিনা উইকেটে ২৭৩। ওভার প্রতি রান প্রায় সাড়ে চার। ১৩৮ তামিম এবং ইমরুল কায়েস অপরাজিত ১৩২। স্বপ্নেও ভাবেনি বাংলাদেশ। জয়ের অপেক্ষায় থাকা পাকিস্তান হতভম্ব। চতুর্থ দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসা বিস্মিত পাকিস্তান ব্যাটসম্যান আসাদ শফিকের কথা,‘ আমরা চিন্তাই করেনি বাংলাদেশ এভাবে ব্যাট করবে।’ চতুর্থ দিনেই ম্যাচের ভাগ্য বদলে দেন দুই ওপেনার তামিম ও ইমরুল। তারপরেও পঞ্চম দিনের সকালটার দিকে তাকিয়ে ছিলেন মিসবাহ। প্রথমে স্পিন এবং পরে নতুন বলে পেসাররা যদি বাংলাদেশকে ঝটপট অল আউট করে দিতে পারে তাহলে...। কিন্তু বৃষ্টিবিঘিœত পঞ্চম দিনের সকালটাও ছিল বাংলাদেশের। ২৭৩ করে আগের দিনেই বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম উইকেটের নতুন রেকর্ড গড়া হয়ে গেছে। তামিম- ইমরুল পঞ্চম দিনে গড়লেন নয়া ইতিহাস। ৩১২ করে ভাঙ্গলেন যে কোনো জুটির আগের বিশ্বরেকর্ড( তৃতীয় বা চতুর্থ ইনিংসে)। দু’জনই হাঁকালেন (ইমরুল কায়েস ১৫০) ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস। তামিমের ২০৬ রানের ইনিংসটা ব্যক্তিগত সেরা তো বটেই, বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ। সময় হাতে থাকলে সেঞ্চুরিটা পেয়ে যেতে পারতেন সাকিব আল হাসানও (৭৬ *) । সময় থাকলে পাকিস্তানের মতো বাংলাদেশও ছয়শ’র ঘরে যেতে পারত। ৫ উইকেটে ৫৫৫ ( দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড)। ওভার প্রতি রান চারের উপরে। কঠিন সময়ে দ্বিতীয় ইনিংসে এমন নজীর খুব বেশী নেই বিশ্ব ক্রিকেটে। বাংলাদেশ তো সেই দলই হয়ে ওঠেছে , যারা এমন অনেক রেকর্ডই গড়ে যাবে এখন থেকে। ------ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়