Saturday, May 2

বিপদাপদের কারণ ও করণীয়


ড. হুসাইন বিন আবদুল আজিজ আলে শায়খ: পার্থিব বিপর্যয় ও বালা-মুসিবতের প্রধান কারণ হচ্ছে মহান আল্লাহর অবাধ্যতা ও নাফরমানি। পবিত্র কোরআন বলছে, 'তোমাদের ওপর যেসব বিপদাপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ মোচন করে দেন।' (সূরা শূরা : ৩০)। হাসান (রা.) থেকে বর্ণিত আছে, এ আয়াত অবতীর্ণ হলে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'সে সত্তার কসম, যার নিয়ন্ত্রণে আমার প্রাণ, কারও গায়ে যে কাঠের অাঁচড় লাগে অথবা শিরা ধড়ফড় করে কিংবা পা পিছলে যায়, এসবই তার গোনাহের কারণে হয়ে থাকে। দয়াময় আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে রক্ষা করার জন্য তার সঙ্গে হেফাজতকারী ফেরেশতা নিয়োজিত রেখেছেন। কিন্তু সে যখন কুকর্ম ও পাপাচারে লিপ্ত হয়, তখন আল্লাহর নির্দেশে সে ফেরেশতা তার থেকে সরে যায়।' এরশাদ হয়েছে, 'আল্লাহ কোনো জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।' (সূরা রাদ : ১১)। আল্লাহর অবাধ্যতা ও পাপাচারের দরুন মুসলিম জাতি আজ বিভিন্ন সঙ্কট ও দুর্দশায় জর্জরিত। ইবাদত ও আনুগত্যের ফলে আল্লাহ জীবনে শান্তি ও নিরাপত্তা দান করেন। এরশাদ হয়েছে, 'তারা যেন এ ঘরের মালিকের (আল্লাহ) ইবাদত করে। যিনি তাদের ক্ষুধায় আহার দিয়েছেন এবং যুদ্ধভীতি থেকে নিরাপদ রেখেছেন।' (সূরা কোরাইশ : ৩-৪)। মুসলমানদের জীবনের নিরাপত্তার জন্য আল্লাহ কিছু নীতি দিয়েছেন, যা লঙ্ঘন করলে বিপদ আসতে পারে। যেমন_ পারস্পরিক ঐক্য ও সহযোগিতার ভিত সুদৃঢ় করা। আল্লাহ বলেন, 'তোমরা মতবিরোধে লিপ্ত হবে না, তাহলে তোমরা সাহস হারিয়ে ফেলবে, তোমাদের শক্তি বিনষ্ট হয়ে যাবে।' (সূরা আনফাল : ৬৯)। এমনিভাবে সাধ্যানুযায়ী শত্রুকে ঠেকানোর মতো অস্ত্রশস্ত্র ও সমর প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরশাদ হয়েছে, 'শত্রুদের মোকাবিলার জন্য সামর্থ্য অনুযায়ী শক্তি অর্জন করো ও ঘোড়া প্রতিপালিত করো, যা দ্বারা আল্লাহর ও তোমাদের দুশমনদের ভয় প্রদর্শন করবে।' (সূরা আনফাল : ৬০)। সম্পদের প্রাচুর্যে মুসলিম জাতি আজ আত্মবিস্মৃত হয়ে পড়েছে। অথচ ঐশ্বর্যের প্রাচুর্যও বিপদাপদের কারণ হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন, 'অতঃপর তারা যখন সে উপদেশ ভুলে গেল, যা তাদের দেয়া হয়েছিল, তখন আমি তাদের সামনে সবকিছুর দ্বার উন্মুক্ত করে দিলাম। এমনকি তারা যখন প্রদত্ত বিষয়াদির জন্য গর্ব করতে শুরু করল, তখন আমি অকস্মাৎ তাদের পাকড়াও করলাম। আর তারা নিরাশ হয়ে গেল।' (সূরা আনআম : ৪৪)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, 'আমার জন্য আল্লাহ তায়ালা মক্কার বাতহা নামক উপত্যকা স্বর্ণ বানিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি বললাম, না, হে আমার রব। আমি বরং একদিন পেট পুরে আহার করব এবং একদিন উপোস থাকব। যেদিন উপোস থাকব সেদিন তোমাকে স্মরণ করব এবং তোমার কাছে কাকুতি-মিনতি করব। আর যেদিন তৃপ্ত থাকব সেদিন তোমার প্রশংসা করব এবং তোমাকে ডাকব।' (মুসনাদ আহমাদ)। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে বিপদাপদে পতিত করে তাদের সতর্ক করেন, যাতে তারা গোনাহ থেকে তওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসে। এরশাদ হয়েছে, 'স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের কারণে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।' (সূরা রোম : ৪১)। আয়াতে পার্থিব বিপদাপদের কারণ ও করণীয় ব্যক্ত করা হয়েছে। যে কোনো বিপদে আল্লাহর শরণাপন্ন হওয়া এবং তাঁর কাছে প্রার্থনা করা মানবের কর্তব্য। বরং এটাই বিপদ মুক্তির সবচেয়ে বড় উসিলা। জাগতিক ব্যবস্থাপনা আল্লাহর আজাব প্রতিহত করতে পারে না। পবিত্র কোরআন বলছে, 'আল্লাহ যখন কোনো জাতির বিপদ চান, তখন কেউ তা প্রতিহত করতে পারে না এবং তিনি ব্যতীত কেউ তাদের সাহায্যকারী নেই।' (সূরা রাদ : ১১)। বিপদে রক্ষাকর্তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালা। তিনি বলেন, 'বলো তো, কে নিঃসহায়ের ডাকে সাড়া দেন এবং কষ্ট দূরীভূত করেন আর তোমাদের পৃথিবীতে স্থলাভিষিক্ত করেন। আল্লাহর সঙ্গে কোনো উপাস্য আছে কি? তোমরা সামান্যই উপদেশ গ্রহণ করো।' (সূরা নামল : ৬২)। আল্লাহ চান মানুষ যেন সর্বদা তাঁকে ডাকে ও স্মরণ করে। কিন্তু মানুষ যখন আল্লাহকে ভুলে পাপ সাগরে ডুবে যায় তখন তিনি বিপদাপদে ফেলে তাকে সাবধান করেন। তিনি এরশাদ করেছেন, 'আমি আপনার পূর্ববর্তী উম্মতদের কাছে পয়গম্বর প্রেরণ করেছিলাম। অতঃপর আমি তাদের অভাব-অনটন ও রোগব্যাধি দিয়ে পাকড়াও করেছিলাম যাতে তারা কাকুতি-মিনতি করে।' (সূরা আনআম : ৪২)। ওলামায়ে কেরাম বলেন, যে বিপদের কারণে মানুষ সতর্ক হয়ে তাওবা-এস্তেগফার করে আল্লাহর প্রতি অধিক মনোযোগী হয় তা তার জন্য কৃপা ও উপকারপ্রদ। পক্ষান্তরে যার অবস্থা এরূপ হয় না বরং পাপকার্যে আরও বেশি উৎসাহী হয়, তার বিপদ আল্লাহর আজাবের আলামত। আল্লাহ বলেন, 'অতঃপর তাদের কাছে যখন আমার আজাব এলো, কেন তারা প্রার্থনায় রত হলো না? বস্তুত তাদের অন্তর কঠোর হয়ে গেছে এবং শয়তান তাদের কাছে তাদের কর্ম সুশোভিত করে দেখিয়েছে।' (সূরা আনআম : ৪৩)। বিপদাপদ আল্লাহর পয়গম্বরদের ওপরও এসেছে। বরং তাদের বিপদের মাত্রা ছিল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু তা পাপের কারণে নয়। বরং তাদের মর্যাদা বুলন্দ করার উদ্দেশ্যে। তারা বিপদে পতিত হয়ে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। হজরত আইয়ুব (আ.) ও ইউনুস (আ.) এর ঘটনা সবার জানা। আমাদের প্রিয় নবীও (সা.) বদরের প্রান্তরে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতির সঙ্গে সাহায্য প্রার্থনা করেছিলেন। বিপদাপদ কখনও কখনও আল্লাহর পক্ষ থেকে পরীক্ষাস্বরূপ এসে থাকে। তিনি এরশাদ করেছেন, 'আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, সম্পদ ও জানের ক্ষতি এবং ফল-ফসলের বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের। যারা বিপদে পতিত হলে বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই কাছে ফিরে যাব।' (সূরা বাকারা : ১৫৫-১৫৬)। ৫ রজব মসজিদে নববিতে প্রদত্ত জুমার খুতবার সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর মাহবুবুর রহমান নোমানি

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়