কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক:গেল প্রায় এক মাস স্থবির ছিল গুলশানস্থ ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী নগর ভবন। মেয়রের টেবিলে জমেছে কাজের পাহাড়। নির্বাচন পরবর্তী ১২ দিনের মাথায় আনুষ্ঠানিকভাবে নিজ কার্যালয়ে অফিস করলেন নবনির্বাচিত মেয়র আনিসুল হক। গতকাল বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে তিনি অফিসে এলেও সকাল থেকে নগর ভবনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছিল ফাইলকেন্দ্রিক কর্মচঞ্চলতা।
সকাল ১০টার মধ্যেই অফিসে হাজির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থেকে শুরু করে নগর ভবনের প্রায় সবাই। উত্তর সিটির যাবতীয় হিসাব হালনাগাদ করতেই হিমশিম খাচ্ছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গাদা গাদা ফাইল বগলদাবা করে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ঢুকেছেন প্রধান নির্বাহী বিএম এনামুল হকের রুমে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, এতদিনের যাবতীয় হিসাব মেলাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্মকর্তাদের। তাই সকাল থেকেই চলেছে সব হিসাবের হালনাগাদ প্রক্রিয়া। নগর ভবন সূত্রে জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যখন ফাইলপত্র গোছাতে গলদঘর্ম, তখনই (দুপুরে) আনিসুল হক রাওয়া ক্লাবে সংবর্ধিত হচ্ছেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষ থেকে। সেখান থেকে আসবেন নগরভবনে। এদিন বেলা আড়াইটা থেকে তিনটা নাগাদ প্রধান নির্বাহীর রুমে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করতে দেখা যায় উত্তর সিটি করপোরেশনের সকল বিভাগের প্রধানদের।
বৈঠক শেষে রুম থেকে বেরিয়ে প্রধান নির্বাহী বেশ বিরক্তি প্রকাশ করেন উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে। এ সময় এক টিভি প্রতিবেদককে বিএম এনামুল হক তুচ্ছতাচ্ছিল্যের সুরে বলেন, ‘এখানে কি? আজ ঢাকা শহরে অ্যাসাইনমেন্ট কম নাকি!’ এদিকে দুপুরের পর থেকে বিভিন্ন নেতাকর্মী-কমিশনাররা দলে দলে নগর ভবনে এসেছেন ফুলের তোড়া নিয়ে। করপোরেশনের এক কর্মচারীর এই সময় আগত অতিথিদের উদ্দেশে অস্ফুট স্বরে বলতে শোনা গেছে, ‘মৌমাছিরা জানতাম শুধু ফুলের পেছনে ছোটে। এখন দেখছি, মৌমাছিরা স্বয়ং ফুলের তোড়া নিয়াই হাজির মধুর সন্ধানে! আরও কত কি দেখুম!!’
আনুমানিক আড়াইটার দিকে আনিসুল হকের আসার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পৌঁছেন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে। তারও প্রায় আধা ঘণ্টা আগে নগরভবনের ফটকে সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী অপেক্ষা করছিলেন মেয়রকে অভ্যর্থনা জানাতে। যার নেতৃত্বে ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। যদিও অতিউৎসাহী এই অভ্যর্থনাকে ভালভাবে নেননি আনিসুল হক। নবনির্বাচিত এই মেয়র গাড়ি থেকে নেমেই কড়া কণ্ঠে প্রধান নির্বাহীকে বললেন, ‘নেক্সট টাইম ডোন্ট ডু দিস। ডোন্ট কাম ডাউন।’ মেয়রের এমন মন্তব্যে বিব্রত হন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। কর্মচারীদের মধ্যে ফিস-ফাঁস শব্দে গুঞ্জন চলে, ‘স্যার ঠিকই বলছেন। উনার অফিসে উনি আসবেন-যাবেন। উনাকে রিসিভ করার জন্য সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে কেন?’
এদিকে নির্বাচিত হয়ে শপথ গ্রহণের পর এটি ছিল আনিসুল হকের ২য় কার্যদিবস। এদিন বিকাল চারটা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত অফিসে ছিলেন তিনি। এসময় কর্মকর্তাদের সঙ্গে লম্বা বৈঠক করেন। কর্মকর্তারা পুরানো হিসাবনিকাশ তুলে ধরেন মেয়রের টেবিলে। এর ফাঁকে কথা হয় গণমাধ্যমের সঙ্গে। মেয়রের চেয়ারে বসার অনূভূতি কেমন জানতে চাইলে বলেন, এসব অনুভূতি টাইপ বানানো কথা শুনলে মানুষ হাসে। অফিসিয়ালি আজ আমার ২য় দিন। অনেক চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতে হবে, অনুমান করতে পারছি। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আমার ওপর ভরসা রাখুন। কেমন চ্যালেঞ্জ? অথবা কেমন প্রতিবন্ধকতা অনুভব করছেন? এমন জিজ্ঞাসায় মেয়র বলেন, নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সবাই শুধু জুজুর ভয় দেখাচ্ছে। এটাই আপাতত বড় চ্যালেঞ্জ। জুজুর ভয়টাকে জয় করতে চাই।
কথা প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, আমি আসলে এখানে নতুন মানুষ। সবকিছু বুঝে উঠতে একটু সময় লাগবে। এখানে লোকবলের খুব অভাব। সেগুলো নিয়ে ভাবছি। তবে প্রাথমিকভাবে আমার টার্গেট শহরটাকে আলোকিত এবং পরিষ্কার রাখার। শুরুতে আরেকটা উল্লেখযোগ্য কাজ করতে চাই শহরের বিলবোর্ড নিয়ে। অপরিকল্পিত বিলবোর্ড বাণিজ্যের একটা ব্যবস্থা করবো।
এদিকে শপথ নেয়ার পর থেকে গতকাল পর্যন্ত নগরভবনে খানিক অনিয়মিত আগমন প্রসঙ্গ তুলতেই আনিসুল হক বলেন, দেখুন আমি বাইরে থাকলেও অফিসের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ আছে। অফিসের প্রয়োজনে আমি রাত ১২টা বাজেও আসতে পারি। ইটস ডিপেন্ড। এদিকে নতুন মেয়র আনিসুল হকের আনুষ্ঠানিক অফিসের প্রথম দিনেই নগরভবন প্রাঙ্গণে চোখে পড়েছে কর্মচারী লীগসহ বিভিন্ন দলীয় সমর্থিত বিভিন্ন সমিতি-সংগঠনের নতুন অফিস ও সাইনবোর্ড সংস্করণের কাজ। যেমনটা ছিল না সদ্য সমাপ্ত প্রশাসক জমানায়।
সূত্র: মানবজমিন
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়