ঢাকা: ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের যাত্রা শুরু।
টানা আন্দোলন থেকে নির্বাচনী মাঠে বিএনপিকে নিয়ে আসার পেছনে এই সংগঠনটির হাতই সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীনের নেতৃত্বে এই সংগঠনের নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করে খালেদা জিয়া ও তার লন্ডন প্রবাসী ছেলের মত আদায় করে নেন।
মামলা-হামলায় জর্জরিত বিএনপি নেতারা তখনই নির্বাচনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন। বলেছিলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচনে গিয়ে লাভ নেই।
তাছাড়া বিএনপিকে আগে সাংগঠনিকভাবে শক্তি অর্জন করতে হবে। তখন এমাজউদ্দীনরা নির্বাচনে যাওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দাঁড় করিয়েছিলো।বলেছিলো নির্বাচনে হারলেও লাভ, জিতলেও লাভ।
কিন্তু নির্বাচনী প্রচার শেষে ভোটের দিন হঠাৎ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা এবং ভোটের দুই দিন আগে নির্বাচন বর্জন করার ব্যাপারে বিএনপির ভেতরের তৎপরতা ফাঁস এবং “বর্জন নিয়ে ফোনালাপ” ফাঁস নিয়ে নানামুখী আলোচনা সমালোচনা চলছে এখন দেশজুড়ে।
সর্বশেষ নির্বাচনে বিএনপির ফল বিপর্যয় নিয়ে একটি পক্ষ সরাসরি এমাজউদ্দীনদের দায়ি করছেন।তারা বলছেন ফল বিপর্যয়ের পর বিএনপি বড় ধাক্কায় খেয়েছে। এসব নিয়ে নানামুখী সমালোচনায় রীতিমতো চাপের মুখে রয়েছে এমাজউদ্দীনরা।
তবে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারা বলছেন, সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন ও বর্জনের ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ওপর কোনো চাপ নেই। সার্বিক দিক বিবেচনা করে বিএনপি প্রধানের সিগন্যাল পাওয়ার পরই সব বিষয় সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ঢাকাসহ তিন সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর ৮ এপ্রিল ঘোষণা করা হয় আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের স্টিয়ারিং কমিটি। যার নেতৃত্বে রাখা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি ড. এমাজউদ্দীন আহমেদ এবং বিএফইউজের (একাংশ)সভাপতি শওকত মাহমুদকে।
কমিটির অন্য সদস্যরাও বিএনপিপন্থি বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতা।আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সিনিয়র সাংবাদিক।
স্থানীয় নির্বাচনে দলীয়ভাবে অংশ নেয়ার সুযোগ না থাকায় ঢাকায় আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের ব্যানারে নির্বাচনে অংশ নেয় বিএনপি। শুরুতে সংগঠনের নেতাদের মধ্যে পদ পদবি নিয়ে কিছুটা ঝামেলা থাকলেও পরে তা সমাধান হয়ে যায়।
প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার আগে মতামত দেয়া, বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ ও দাবি-দাওয়া তুলে ধরা, সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলা, প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগসহ সবকিছুতেই সম্মুখভাবে ছিলো আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের নেতারা।
আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপির ভোটবর্জনের পরের দিন সংগঠনের পক্ষ থেকে ভোট নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। এসময় নির্বাচন কমিশনের পদত্যাগের দাবি করা হয়। একইসঙ্গে নতুন করে নির্বাচন চাওয়া হয়।তবে কোনো কর্মসূচি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন সংগঠনের আহ্বায়ক ড. এমাজ উদ্দিন আহমেদ।
নির্বাচনের আগে সংগঠনটির কর্তাব্যক্তিদের কর্মতৎপরতায় মনে হয়েছে বিএনপি নয় এমাজউদ্দীনরাই মূখ্য ভূমিকায়।
নির্বাচনের আগে বিএনপি ও জোটের নেতাদের নিয়ে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তরে সমন্বয় কমিটি হলেও তাদের খুব বেশি তৎপরতা চোখে পড়েনি। অন্যদিকে গোটা সময়জুড়ে বিএনপি নেতাদের চেয়ে ব্যস্ত ছিলেন সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আদর্শ ঢাকা আন্দোলনের আহ্বায়ক অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিএনপিকে নির্বাচনে নিয়ে গেছি, এ কথা বলা পুরোপুরি ঠিক হবে না। আমরা দেশে শান্তি ও স্বস্তি চেয়েছি বলেই তাদের নির্বাচনে যাওয়ার ব্যাপারে সহায়তা করেছি।'
তার দাবি, “বর্জন করা সত্ত্বেও নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিএনপির লাভ হয়েছে। অন্যদিকে যারা ভোট নষ্ট করেছে তাদের ক্ষতি হয়েছে।”
আর সংগঠনটির স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য কবি আবদুল হাই শিকদার চাপের কথা ভিত্তীহীন দাবি করে ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও বর্জনে ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। এখানে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি।সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে বেগম খালেদা জিয়া যে নির্দেশনা দিয়েছেন আমরা সেই অনুযায়ী কথা বলেছি।ভোট বর্জনের সময় যা বলা হয়েছে তাও তার কাছ থেকে অনুমোদিত ছিল।”
ভোট বর্জনের জন্য আরো অপেক্ষা করা যেত- সমালোচকদের এমন বক্তব্যের বিষয়ে তিনি বলেন, “যেভাবে ভোট ডাকাতি হয়েছে, তাতে আরো পরে বর্জন করলে কি হতো?”
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়