Wednesday, April 15

নতুন বছরের শুরুতে ত্যাগ করুন ২০টি বদঅভ্যাস


কানাইঘাট নিউজ ডেস্ক: শেষ রাতের ক্ষুধা মেটানোর জন্য পিজা বা চকোলেট কেক খাওয়াটা হয়তো আপনাকে মানসিক তুষ্টি এনে দিতে পারে; কিন্তু এতে আপনার দেহের কোনো উপকার হবে বলে মনে হয় না। এতে আপনার সার্বিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতির উপর দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে। এভাবে প্রতিদিনই অপ্রত্যাশিত কিছু বদঅভ্যাসের মাধ্যমে আমরা নিজেদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে থাকি। চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এমনই ২০টি শীর্ষ বদঅভ্যাসের তালিকা করেছেন, যেগুলো আজই ত্যাগ করা উচিৎ। নতুন বছরের সূচনা উপলক্ষে নতুন প্রত্যয়ে আপনি আজ থেকেই বদঅভ্যাসগুলো ছেড়ে দেয়া শুরু করতে পারেন। ১. নাক বা মুখ খুটানো: এই বদঅভ্যাসটি শুধু ক্ষতিকরই নয় সামাজিকভাবে অশোভনও বটে। নাক খুটলে আপনার দেহে ঠাণ্ডা ও ফ্লুসহ বিভিন্ন ধরণের ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। কারণ বিভিন্ন জিনিস ধরা ও ছোঁয়ার ফলে হাতের আঙ্গুলে মারাত্মক সব জীবাণু লেগে থাকে। সূতরাং আজই আঙ্গুল দিয়ে নাক খুটানো বা মুখ থেকে খাবারের অবশিষ্ট বের করার মতো মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস ত্যাগ করুন। ২. অনিয়ন্ত্রিত মদ্যপান: এর ফলে লিভারের কার্যকারীতা নষ্ট হওয়ার মতো দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা থেকে শুরু করে ওজন বেড়ে যাওয়া, মাথা ঘোরা ও অবসাদগ্রস্ততায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে। ৩. রাতজাগা: আমাদের অনেকেই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রায়ই রাত জাগি। কিন্তু এটা যদি আপনার নিয়মিত রুটিন হয়ে দাঁড়ায় তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতি হবে। সুস্থ থাকার জন্য প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘন্টা ঘুম দরকার। ৪. নিঃসঙ্গতা: দৈহিক স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য মনকেও স্বাস্থ্যবান ও তরতাজা রাখা দরকার। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে নিঃসঙ্গ মনে করেন এবং যে কোনো সামাজিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় মনোকষ্টে থাকেন অথবা সারাক্ষণ হতাশা ও বিষাদগ্রস্ততায় ভোগেন তাহলে আপনি নিজেকে লোকের কাছ থেকে আরো দূরে সরিয়ে নিবেন যা আপনার শরীর ও মনের উপর ভয়ানক ক্ষতিকর চাপ ফেলবে। ৫. দীর্ঘসময় ধরে হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে রাখা: এতে আপনার শ্রবণশক্তি কমে যেতে পারে। কারণ হেডফোন বা ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনলে বা কথা বললে অনেক উচ্চ আওয়াজ কানের পর্দায় আঘাত করে। ৬. দীর্ঘসময় টিভির সামনে বসে থাকা: এতে হৃদরোগ ও চোখের জ্যোতি কমে যাওয়ার মতো রোগ দেখা দিতে পারে। এর ফলে শরীরে চর্বি ও রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যাওয়া এবং স্থূলতায় আক্রান্ত হওয়ার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে। এতে এমনকি ব্রেন স্ট্রোক করার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। ৭. হিল জুতা পরা: এতে নারীরা দেহভঙ্গি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং শরীরের জয়েন্টগুলোর উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ার মতো সমস্যায়ও আক্রান্ত হতে পারেন। যার ফলে আথ্রাইটিস, পিঠে ব্যাথা ও পায়ের মাংসপেশীর টিস্যু ছিড়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। ৮. ভারী ব্যাগ বহন করা: পিঠে বা কাঁধে সবময়ই ভারী ব্যাগ বহন করলে তা আপনার স্বাস্থ্যের অনেক ধরণের ক্ষতি সাধন করবে। এর ফলে দীর্ঘ মেয়াদি পিঠ ব্যাথা, ঘাড় ব্যাথা এবং শরীরের অঙ্গ সঞ্চালন দূর্বল হয়ে পড়ার মতো মারাত্মক সব স্বাস্থ্যগত সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন আপনি। ৯. মেকআপ নিয়ে ঘুমানো: এতে ত্বক মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। লোমকুপে পানি জমে যাওয়া, ত্বক খসখসে হওয়া এবং দাগ পড়ে যাওয়ার মতো ক্ষতি হতে পারে। ১০. ক্ষুধা না লাগলেও খাবার খাওয়া: খাবারের নিয়মিত রুটিন ভেঙ্গে ফেললে ক্ষুধা লাগলেও আপনি আর তা টের পাবেন না। রুটিনের বাইরে অতিরিক্ত খাবার খেলে ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও পাকস্থলীতে অ্যাসিডিটির মতো ভয়ানক সব সমস্যা দেখা দিবে। ১১. ধুমপান: দিনে সর্বনিম্ন একটি সিগারেট পান করলেও রক্ত জমাট বেঁধে যাওয়া, রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি হওয়া, ধমনি ও রক্তের শিরা উপশিরায় ক্ষতিকর উপাদান সৃষ্টি হতে পারে। ১২. অনবরত মিথ্যা কথা বলা: অনবরত মিথ্যা কথা বললে একসময় আপনি সত্য প্রকাশিত হয়ে যাওয়ার ভয়ে আক্রান্ত হবেন যার ফলে আপনার মানসিক চাপও বাড়বে। আর অতিরিক্ত মানসিক চাপই মানবদেহের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ স্ট্রেস হরমোনের নির্গমন ঘটে। এছাড়া এতে মাথা ব্যাথা ও উদ্বিগ্নতার মতো উপসর্গও দেখা দিতে পারে। ১৩. বেশি বেশি ওষুধ খাওয়া: ছোটখাটো রোগ-বালাই হলেই যদি আপনার ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস থেকে থাকে তাহলে তা আজই ত্যাগ করুন। নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার খেলে আপনার ওষুধ খাওয়ার প্রয়োজনই হবে না। আর ওষুধ খাওয়ার আগে সবসময়ই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিবেন। ১৪. সকালের নাস্তা না খাওয়া: আপনি যদি সকালের নাস্তায় শুধুমাত্র এক কাপ চা আর একটি টোস্ট খেতে অভ্যস্ত হয়ে থাকেন তাহলে আপনি আপনার ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য পরিস্থিতির জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনছেন। এতে আপনার হজমপক্রিয়া ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া দেহের শক্তি সঞ্চয়ী ক্ষমতা ও পরিপাকতন্ত্রও ক্ষতিগ্রস্ত হয় এতে। ১৫. বেশি বেশি জাঙ্কফুড খাওয়া: বেশি বেশি ফাস্ট ফুড খেলে পরিণতিতে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগের মতো মারাত্মক সব রোগ-বালাই হতে পারে। ফাস্ট ফুডে ক্ষতিকর কোলোস্টেরলের পরিমাণ বেশি থাকে। এতে রক্ত জামাটবদ্ধ হয়ে শিরা-উপশিরাগুলোতে ব্লক সৃষ্টি হওয়া এবং স্থুলতায় আক্রান্ত হওয়ার মতো মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দিতে পারে। ১৬. নখ কামড়ানো: এতে দেহে ক্ষতিকর সব জীবাণু প্রবেশ করে। ১৭. যৌনতায় অবহেলা করা: ব্যস্ততা বা মানসিক চাপ যে কারণেই হোক না কেন একনাগাড়ে মাসখানেক বা তার বেশি দিন যৌন সহবাস না করাটা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে। নিয়মিত যৌন মিলনে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি এবং দাম্পত্য সম্পর্ক আরো গাঢ় হয়। সূতরাং আপনার যদি যৌন মিলনে সবসময়ই আগ্রহ কম থাকে তাহলে আজই ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। কারণ হরমোণের ভারসাম্যহীনতাসহ মারাত্মক কোনো শারীরিক সমস্যার কারণেও এমনটা হতে পারে। ১৮. খাওয়ার সময় তাড়াহুড়ো করা: কাজের চাপ বা সময়ের অভাবে তাড়াহুড়ো করে খাওয়া-দাওয়া শেষ করার বদঅভ্যাসের ফলে হজমপ্রক্রিয়া মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্রতিবেলা খাবারের জন্য অন্তত ২০ মিনিট সময় ব্যায় করা উচিৎ। তৃপ্তি সহকারে ও ভালো মতো চিবিয়ে খাবার খেতে হবে। নয়তো অ্যাসিডিটি, পেট ফোলা এবং অতিরিক্ত গ্যাস নির্গমণের মতো সমস্যা হতে পারে। ১৯. সুখহীন দাম্পত্য সম্পর্ক: আপনি যদি নিরানন্দ দাম্পত্য সম্পর্কে জড়িয়ে থাকেন তাহলে আজই বেরিয়ে আসুন। কারণ দীর্ঘমেয়াদে মৌখিক বা শারীরিকভাবে নিপীড়নমূলক সম্পর্ক বা অস্বাস্থ্যকর তৎপরতায় উৎসাহিত করে এমন সম্পর্ক স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কারণ এতে যে অতিরিক্ত মানসিক চাপ সৃষ্টি হয় তা দেহের রক্তচাপ, রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও হজমপ্রক্রিয়ার ক্ষতি করে। ২০. ত্বক খুটানো: আপনি যদি চেহারার খুঁত নিয়ে দুশ্চিন্তায় ভোগেন তাহলে আজই তা ত্যাগ করুন। কারণ আপনি যদি মুখের ব্রণ নিয়ে সারাক্ষণই খোটাখুটি করেন তাহলে তা মহামারি আকার ধারণ করবে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়