Thursday, April 30

সিটি নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সমর্থকেরা বিব্রত


মহিউদ্দিন মাহী: ঢাকা: ‘কি বলব ভাই লজ্জা লাগতেছে। আমি আওয়ামী লীগের একজন একনিষ্ঠ কর্মী। কিন্তু এসব আমি গণমানুষের এই দল থেকে প্রত্যাশা করি না। এসব করে আসছে বিএনপি।’ রাগে-ক্ষোভে কথাগুলো বললেন রাজধানী মহাখালীর বাসিন্দা আব্দুল মালেক। তিনি আওয়ামী লীগের একজন নিষ্ঠাবান কর্মী। ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হকের দেয়াল ঘড়ি মার্কায়। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, ‘আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগ করে আসছি। আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রের জন্য শুরু থেকেই লড়াই সংগ্রাম করে আসছে। জাল ভোট আর কারচুপির ভোটের শুরু হয়েছে বিএনপির আমলে। আমরা এটা গর্ব করে বলে আসছি যে- আওয়ামী লীগ হারলেও ভোট জালিয়াতি করে না। কিন্তু এবার যা হল আমাদের তো আর মান-সম্মান থাকল না।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বনানী থানা ছাত্রলীগের এক যুগ্ম সম্পাদক ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ করি। কিন্তু সিটি নির্বাচনে যা হল তাকে সমর্থন করতে পারি না। বিবেকে নাড়া দেয়। বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরানো এবং সর্ববৃহৎ একটি দলের কি এসব করা লাগে? ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় এক নেতা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বরাবরই ভোট জালিয়াতির শিকার হয়েছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই সংগ্রাম করেছে। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির জালিয়াতির নির্বাচনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে বিএনপি সরকারের পতন ঘটিয়েছে। আওয়ামী লীগ বরাবরই এসব কিছুর বিরুদ্ধে সোচ্চার। কিন্তু সিটি নির্বাচনে যা হল তা আসলেই অসমর্থনযোগ্য।’ তবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সিটি নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হয়নি। বিএনপি পরিকল্পিতভাবেই নির্বাচন বয়কট করে দোষ আওয়ামী লীগের ওপর চাপাচ্ছে। এটা বিএনপির রাজনৈতিক কূটকৌশল। তারা যে নির্বাচন বর্জন করেছে সেটা নেতাদের বক্তব্যেই প্রমাণ হয়েছে’। গত ২৮ এপ্রিল সিটি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম-জালিয়াতি ও ভোট কারচুপির ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ কেন্দ্রেই সরকার বিরোধী পক্ষ ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। কেউ কেউ গেলেও তাদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া অনেকের ভোটই আগেই দেয়া হয়েছে। ভোটগ্রহণ শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রগুলো দখল করা শুরু হলে ভোটকেন্দ্রগুলো ফাঁকা হয়ে যায়৷ নির্বাচনি কর্মকর্তাদের সামনেই চলে ব্যালটে সিল মারা। ঢাকায় পুলিশ ও নির্বাচনি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধেও সরাসরি জালভোটে অংশ নেয়ার অভিযোগ শোনা যায়৷ এসব ঘটনায় ভোটের দিন ১২টার দিকে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তরের মেয়র প্রার্থীর পক্ষে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ৷ মওদুদ আহমদ বলেন, ‘পুরো নির্বাচনকেই অর্থহীন করে দিয়েছেন সরকার ও নির্বাচনি কর্মকর্তারা। নির্বাচন কমিশন পুলিশ ও ব়্যাব নিয়ে সরকারের ইচ্ছাপূরণ করতেই আমাদের এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়েছে’৷ এমন ভোট নিয়ে বিদেশি কূটনীতিকরাও প্রশ্ন তুলেছেন। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত মার্সিয়া বার্নিকাট বান টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘যে কোনোভাবে জয়লাভ করা আসলে কোনো জয় নয়। যুক্তরাজ্য, সুইডেনসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিদেশি কূটনীতিকরা এ নির্বাচন নিয়ে হতাশা জানিয়েছেন। জাতিসংঘ, ইউরোপিয়ান ইউনিয়নসহ বিদেশি সংস্থাগুলো ভোটে অনিয়ম নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়েছেন। এসব বিষয় নিয়ে জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিক- সজুনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই ধরনের ভোটের মধ্যদিয়ে ক্ষমতাসীনরা গ্রহণযোগ্যতা হারাল। এসব ঘটনা ভবিষ্যতে দৃষ্টান্ত হতে পারে।’ জানতে চাইলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশে (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘এই ধরনের নির্বাচন আমরা আশা করেনি। আমি হতাশ হয়েছি’। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে বঙ্গবন্ধুর কথা চিন্তা করলে তো এসব কল্পনাই করা যায় না। এসব তো কোনো দিন তিনি সমর্থন করতেন না। আর তার দল হিসেবে আওয়ামী লীগও এসব করতে পারে না।’ -----ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়