Tuesday, April 21

পুরুষের পর্দা


মাওলানা মুনীরুল ইসলাম: পর্দা পালনের মাধ্যমে ইহ ও পরকালীন কল্যাণ লাভ করা যায়। আর তা লঙ্ঘনে ধর্মীয়, আত্মিক, পারিবারিক ও সামাজিক পর্যায়ে বিভিন্ন বিপর্যয় ডেকে আনে। পর্দাহীনতার কারণে সমাজে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে এবং চারিত্রিক অবক্ষয় ঘটে। পারিবারিক বন্ধন ছিন্ন হয়। পরকীয়ার সৃষ্টি হয়ে তালাকের মতো নিকৃষ্ট ঘটনাও ঘটে। নারীদের জন্য যেমন পর্দা পালন ফরজ, পুরুষের জন্যও তেমনই ফরজ। অনেকে বলেন, ‘পর্দা তো শুধু নারীরা পালন করবে, পুরুষের আবার পর্দা কিসের...?’ তাদের ধারণা ভুল। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে নারী-পুরুষ উভয়ের প্রতিই পর্দা পালনের নির্দেশ দিয়েছেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে অবগত। আর ঈমানদার নারীদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সূরা নূর : ৩০)। উম্মুল মোমিনিন হজরত উম্মে সালামা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন আমি এবং মাইমুনা (রা.) [রাসুল (সা.) এর পত্নীদ্বয়] রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে বসা ছিলাম। ইত্যবসরে অন্ধ সাহাবি আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম (রা.) সেখানে এসেছিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের বললেন, তোমরা আবদুল্লাহ বিন উম্মে মাকতুম থেকে পর্দা করো। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসুলুল্লাহ! তিনি কি অন্ধ নন? তিনি তো আমাদের দেখতে পাবেন না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা দুজনও কি অন্ধ? তোমরা কি তাকে দেখতে পাবে না?।’ (তিরমিজি, আবু দাউদ)। নারীর পর্দার বিষয়টি জোরেশোরে আলোচিত হলেও পুরুষের বিষয়টি তেমন আলোচিত নয়। পর্দা ফরজ হওয়ার মূল কারণ নারী ও পুরুষ নামের বিপরীত লিঙ্গের উপস্থিতি। নারী-পুরুষ পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ বোধ করা প্রাকৃতিক নিয়ম। তাই প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষকে বেপর্দা অবস্থায় একে অপরের সামনে না যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। পর্দা পালনের এ বিধান উভয় শ্রেণীর সমন্বিত প্রয়াসেই কার্যকর করা সম্ভব। নারীর পুরো শরীর আর পুরুষের কমপক্ষে নাভি থেকে হাঁটুর নিচ পর্যন্ত ঢেকে রাখা আবশ্যক। সৃষ্টিগত কারণে পোশাকের পর্দার ক্ষেত্রে নারীদের প্রতি ইসলাম কঠোর নির্দেশ দিয়েছে; কিন্তু দৃষ্টিগত ও হৃদয়গত পর্দায় পুরুষকে কঠোরভাবে সতর্ক করা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো বেগানা নারীর সৌন্দর্যের প্রতি যৌন লালসা নিয়ে তাকাবে, কেয়ামতের দিন তার চোখে সিসা ঢেলে দেয়া হবে।’ (ফাতহুল কাদির)। হজরত বুরায়দা ইবনে আল-হাসিব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) আলি (রা.) কে বলেন, ‘হে আলি! দৃষ্টির পর দৃষ্টি ফেল না। অনিচ্ছাকৃত যে দৃষ্টি পড়ে এর জন্য তুমি ক্ষমা পাবে; কিন্তু পরবর্তী দৃষ্টির জন্য ক্ষমা পাবে না।’ (আবু দাউদ)। তিনি পুরুষের উদ্দেশে বলেছেন, ‘পথের হকগুলোর একটি অন্যতম হক হলো দৃষ্টিকে সংযত রাখা।’ (বোখারি)। তিনি আরও বলেছেন, ‘নারীদের সঙ্গে নির্জনে অবস্থান করো না। ওই সত্তার শপথ- যার হাতে আমার প্রাণ, যখনই কোনো পুরুষ কোনো নারীর সঙ্গে একান্তে থাকে, তখনই তাদের মধ্যে তৃতীয় হিসেবে শয়তান এসে অনুপ্রবেশ করে এবং তার জাল বিস্তার করতে থাকে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘কোনো পুরুষও কোনো পুরুষকে এবং কোনো নারীও কোনো নারীকে যেন উলঙ্গ অবস্থায় না দেখে।’ (মুসলিম)।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়