Monday, March 2

ফারাবীকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব


ঢাকা: মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশি লেখক অভিজিৎ রায় হত্যা মামলার গ্রেপ্তারকৃত প্রধান সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবীকে সোমবার সন্ধ্যায় ডিবির কাছে হস্তান্তর করেছে র‌্যাব। র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের সহকারী পরিচালক মেজর মাকসুদুল আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর আগে সোমবার সকালে ঢাকা ছাড়ার চেষ্টা করলে যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে ফারাবীকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুপুরে র‌্যাবের সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ফারাবী অভিজিৎ হত্যার হুমকির দায় স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, অভিজিৎ হত্যকাণ্ডের দুই ঘণ্টার মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম টুইটারে খুনের দায় স্বীকার করে নেয় আনছারুল্লাহ বাংলা সেভেন নামক সংগঠন। নিহত অভিজিতের ফেসবুক পর্যালোচনা করে দেখা যায়, শফিউর রহমান ফারাবী নামক এক যুবক তাকে বিভিন্ন সময়ে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে আসছিল। অভিজিতের বাবা ড. অজয় রায়ও দাবি করেন যে, দেড় বছর ধরে ফেসবুকে তার সন্তানকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল শফিউর রহমান ফারাবী। গত এক বছর পূর্বের ফারাবীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দেখা যায়, ফারাবী তার মান্নান রাহী নামক এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে বলেছে, “অভিজিৎ রায় আমেরিকা থাকে। তাকে এখন হত্যা করা সম্ভব না। তবে সে যখন দেশে আসবে তখন তাকে হত্যা করা হবে।” এছাড়াও সে তার অন্য এক ফেসবুক ফ্রেন্ডকে অভিজিৎ রায়ের স্ত্রী ও কন্যাসহ একটি ছবি পোস্ট করে তাদের পরিচয় করিয়ে দিয়ে লেখে যে, “এটাই হলো অভিজিৎ রায়, তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ ও তার মেয়ের ছবি, এরা সবাই আমেরিকায় থাকে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের পর পরই ফারাবীকে তার এক ফেসবুক ফ্রেন্ড অভিজিতের রক্তাক্ত ছবি পাঠিয়ে বলে যে, “ছবি পাইছেন কি” উত্তরে ফারাবী ছবি পেয়েছে বলে জানায়। এরপর ওই ফেসবুক ফ্রেন্ড ফারাবীর অনুভূতি জানতে চাইলে সে বলে যে, “আমি গ্রেপ্তার হবো কাল পরশুর মধ্যে।” এতে প্রমাণিত হয় যে, ব্লগার শফিউর রহমান ফারাবী, অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি রাত নয়টার সময় মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ব্লগার ও লেখক প্রকৌশলী ড. অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী ব্লগার রাফিদা আহমেদ বন্যাকে টিএসসির পাশে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ৩ নম্বর গেটের সামনে দুর্বৃত্তরা কুপিয়ে জখম করে। গুরুতর আহতবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর রাত ১০.২৫ মিনিটের সময় মারা যান অভিজিৎ রায়। এই ব্লগার ও লেখক হত্যার পর থেকেই বিভিন্ন মহল নিন্দা ও উদ্বেগ জানায়। র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তারকৃত ফারাবী একসময় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হলেও বিভিন্ন কারণে লেখাপড়া সম্পন্ন করতে পারে নাই। ফারাবী ২০১০ সালের দিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীরে যোগদান করে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের অপরাধে সিলেট থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়। পরে জামিনে বের হয়ে অনলাইনে উগ্র মতাদর্শ প্রচারে লিপ্ত হন। বেকার ফারাবীর কর্ম তৎপরতা ক্রমেই সীমাতিক্রম করে। বিশেষ করে মুক্তমনা ব্লগারদের সঙ্গে ধর্ম বিষয়ক আলোচনা নিয়ে বিতর্ক তৈরি করে এবং অনেককে প্রাণনাশের হুমকি দিতে থাকে। তিনি জানান, ২০১৩ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুরের পল্লবীতে ব্লগার রাজীব হায়দার খুন হলে ২৪ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার করা হয় ফারাবীকে। ওই সময় সে অনলাইনে স্ট্যাটাস দিয়ে রাজীবের জানাজায় যিনি ইমামতি করেন তাকে কুপিয়ে হত্যার হুমকি দেয়। অভিজিতের হত্যাকাণ্ডটি সম্পূর্ণ সুপরিকল্পিত বিধায় হত্যাকারীরা কৌশলে বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপন করে। কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান বলেন, ইতোমধ্যে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ব্যাপক অনুসন্ধান ও বিশ্লেষণ কার্যক্রম শেষে নিশ্চিত হয় যে, প্রগতিশীল ব্লগার অভিজিৎ রায়কে হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন শফিউর রহমান ফারাবী ঢাকা ছেড়ে যাত্রাবাড়ী হয়ে চট্টগ্রাম এলাকায় রওনা দেবে। এমন গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর সদস্যরা সোমবার ভোর সাড়ে পাঁচটার সময় যাত্রাবাড়ী এলাকা হতে সুকৌশলে তাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়