Monday, March 23

হাজী সেলিমের পক্ষে মন্ত্রীদের সুপারিশ


হাবিবুর রহমান: ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থী হিসেবে হাজী সেলিমকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার জন্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তদবির করেছেন একাধিক মন্ত্রী। তারা বলেছেন, সাঈদ খোকনের চেয়ে প্রার্থী হিসেবে হাজী সেলিম মন্দ নয়। একই সাথে ঢাকা ও চট্রগ্রামের কাউন্সিলার পদে বাছাই করার জন্য পাঁচ মন্ত্রীকে দায়িত্ব দিযেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসব মন্ত্রী হলেন, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম এবং দুযোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জাল হোসেন চৌধুরী মায়া। সোমবার সচিবালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে অনির্ধারিত আলোচনায় এসব বিষয়ে কথা হয়েছে বলে বেশ কয়েকজন মন্ত্রী ঢাকাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রীরা জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, মানুষ নির্বাচন চায় কি না তা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দেখা যাবে। তবে বিএনপি তাদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য এ নির্বাচনে আসবে। সূত্র জানায়, মন্ত্রিসভায় বৈঠকে আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়। বিশেষ করে ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র পদে দলীয় প্রার্থীর মনোনয়ন নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মত দেন একাধিক মন্ত্রী। তবে অধিকাংশ মন্ত্রী সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিমকে মনোনয়ন দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। মন্ত্রিসভার বৈঠকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রার্থী নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানা গেছে। হাজী সেলিমকে মনোয়ননয় দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয় মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তারা ঢাকা সিটি করপোরেশন দক্ষিণ যাতে হাতছাড়া না হয় সেজন্য হাজী সেলিমকে মনোনয়ন নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি বলে জানা গেছে। এদিকে, ঢাকা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিল পদে দলীয় প্রার্থীদের চূড়ান্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী মন্ত্রিসভার বৈঠকে বলেন, সব দল (বিএনপিসহ) আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেবে। এর আগে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে কাজ শুরু করার জন্য সাঈদ খোকন ও আনিসুল হককে নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওইদিন রাতে সাঈদ খোকন ও আনিসুল হক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে দেখা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হয়ে লড়াই করার জন্য নির্দেশ দেন। এর পরই প্রচারে নেমে পড়েন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন এবং এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন সভাপতি আনিসুল হক। এরপর থেকে ঢাকার সিটি করপোরেশন দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন সংসদ সদস্য ও ঢাকা মহানগনর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক হাজী সেলিম। এদিকে ঋণখেলাপী ইস্যুতে দলীয় সমর্থন হারাতে পারেন সাঈদ খোকন। গত ২০ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে শেখ হাসিনার বৈঠকে এ রকম সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলীয় সূত্র নিশ্চিত করে। তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সভানেত্রীর একান্ত ইচ্ছায় এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে ইসির তফসিল ঘোষণার পর দলীয় সমর্থিত প্রার্থীদের পরোক্ষ সমর্থন ও বিভিন্ন কৌশল নিয়ে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে পূর্বেই দলীয় সমর্থন পেয়েছিলেন সাঈদ খোকন। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন গণমাধ্যমে ডিসিসির প্রথম মেয়র মোহাম্মদ হানিফের পুত্র সাঈদ খোকনের ঋণখেলাপী নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ঘটনাটি আগেই প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রীর নজরে আনেন নেতারা। তিনি বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের চিন্তা-ভাবনা করার পরামর্শ দেন। গত ২০ মার্চ বৈঠকে সাঈদ খোকনের ঋণখেলাপির বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা ও খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম। তার সঙ্গে সিনিয়ির আওয়ামী লীগ নেতারাও বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। এতে দলীয় সভানেত্রী বলেন, ‘সে (সাঈদ খোকন) ঋণখেলাপি হলে সেটা তো দল দায়িত্ব নেবে না। এর মধ্যে সে যদি ঋণখেলাপির বিষয়ে সমাধান করতে না পারে তাহলে দল বিকল্প সিদ্ধান্ত নেবে।’ গত ১৮ মার্চ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে ইসি। তার এক সপ্তাহ আগে গত বৃহস্পতিবার সাঈদ খোকনের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকের নালিশ নির্বাচন কমিশনে (ইসি)আসে। ইসিতে পাঠানো চিঠিতে প্রিমিয়ার ব্যাংক অভিযোগ করে, তারা সাঈদ খোকনের কাছে ১১৮ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর জাতীয় সংসদে আইন পাসের মাধ্যমে ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগ করা হয়। অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ নির্বাচন হয় ২০০২ সালের এপ্রিলে। এরপর টানা প্রায় ১০ বছর মেয়রের দায়িত্ব পালন করেন বিএনপির নেতা সাদেক হোসেন খোকা। ২০০৭ সালের ১৫ মে মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও তিনি দীর্ঘদিন মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। পরে সরকার সিটি করপোরেশনে প্রশাসক নিয়োগ করে। এরপর ২০১২ সালের ২৯ এপ্রিল নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করে ২৪ মে নির্বাচনের দিন ধার্য করে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকা ও সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতা থাকায় নির্বাচনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন আদালত। এরপর ২০১৩ সালের ১৩ মে আদালত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেন। একই বছরের অক্টোবর-নভেম্বরের মধ্যে আবারো নির্বাচনের ঘোষণা দেয় কমিশন। কিন্তু ঢাকার সুলতানগঞ্জ ইউনিয়ন ঢাকা সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত না হওয়ায় আবারও দেখা দেয় জটিলতা। সম্প্রতি স্থানীয় সরকার বিভাগ নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে জটিলতা নিরসন করে।
----
ঢাকাটাইমস

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়