Wednesday, March 11

বাচ্চাদের `না' বলবেন না


অমৃত মলঙ্গী: ‘তুমি এখন খেলতে যাবে না অথবা পরে খেলতে যেও।’ এই দুটি বাক্য আরেকবার করে পড়–ন। দেখবেন আপনার নিজের ভেতরেই আলাদা অনুভূতি হচ্ছে। প্রথমটা সরাসরি ‘না’-বোধক। দ্বিতীয়টিও ‘না’-বোধক তবে একটু ঘুরিয়ে। বাড়িতে বাচ্চা থাকলে দ্বিতীয় বাক্যটি ব্যবহার করবেন। প্রথমটির মতো সরাসরি ‘না’-বোধক বাক্যকে সবসময় বিনয়ের সঙ্গে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন। যাদের বাড়িতে ছোট ছেলেমেয়ে আছে, তারা অনেক সময় এদের সামলাতে হিমশিম খান। কখনো কখনো রাগারাগি করেন। গায়ে হাতও তোলেন। সর্বনাশ! এই কাজ বারবার করবেন না। এটা চলতে থাকলে আপনার বাচ্চা তার নিজের অজান্তেই অবাধ্য হতে থাকবে। তাই তাকে ‘না’ বলুন হ্যাঁ শব্দের মোড়কে। মনে রাখবেন ‘না’ বলাটাও একটা আর্ট। সবাই কিন্তু গুছিয়ে ‘না’ বলতে পারেন না। বিশেষ করে, সন্তানের মুখের ওপর ‘না’ বলা একেক সময় মায়ের ক্ষেত্রে বেশ ‘চাপ’ হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে সন্তানকে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দিন। দেখবেন ‘না’ শব্দটা আপনার মুখ থেকে কম বের হচ্ছে। অথচ আপনি যেমনটি চাইছেন, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সেটাই হচ্ছে। এতে আপনার সন্তানও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে শিখবে। বাচ্চাদের মন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে বিশেষজ্ঞরা দেখেছেন, ছেলে বাচ্চাদের যদি বলা হয় কাঁদছ কেন, তুমি কী মেয়ে? ছেলেদের কাঁদতে হয় না বাবু, তাহলে তাদের মনের ওপর মেয়ে সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করে। তাই কোনো ছেলে শিশুকে এ ধরনের কথা বলতে মানা করেন বিশেষজ্ঞরা। ‘ছেলেরা কাঁদে না’ এই শিক্ষাটি লিঙ্গভিত্তিক। এর মাধ্যমে দুর্বল হিসেবে মেয়েদের উপস্থাপন করা হয়। আর দুর্বল হিসেবে মেয়েরাই কাঁদেÑএ ধারণা শিশুকাল থেকে মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এ ধরনের কথাবার্তা পরবর্তী সময়ে গৃহনির্যাতনের জন্ম দেয়। কারণ মেয়েরা দুর্বল হয় এবং এই শিক্ষাটি নিয়ে শিশুকাল থেকেই বড় হয় ছেলেরা। তাই গৃহনির্যাতনের ঘটনা এড়াতে শিশুদের এ শিক্ষা থেকে দূরে রাখতে হবে। মনোবিজ্ঞানীদের মতে, শাসন জিনিসটা বাচ্চাদের মন সহজভাবে নিতে পারে না। তাই তারা আদর-স্নেহের মাধ্যমে সন্তান লালন করার কথা বলেন। তার মানে কিন্তু এই নয় যে, আপনি সন্তানকে শাসন করবেন না। করবেন, তবে ধরনটা হবে একটু আলাদা। শত কর্মব্যস্ততার মধ্যেও সন্তানের জন্য আমরা অনেক কিছুই করি। কিন্তু সন্তান যেভাবে চায় সেভাবে কি আমরা সময় দেই? এই প্রশ্ন নিজের কাছে রাখতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তানের প্রতি অনুপযোগী মনোযোগের কারণেই সে নেতিবাচক আচরণ করে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ মিনিট সন্তানের সঙ্গে সময় কাটান। তার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। ছোট শিশুদের আত্মসম্মানবোধ প্রখর থাকে। মারধর তার আত্মসম্মানে আঘাত করে ও আত্মমর্যাদাকে কমিয়ে দেয়। তাই চিৎকার ও মারধর না করে বুঝিয়ে বলুন। কেন কাজটি করা যাবে না তার ব্যাখ্যা দিন। সন্তানের ইতিবাচক আচরণ বৃদ্ধি হলে নেতিবাচক আচরণ কমে যায়। ইতিবাচক কাজ করার পরপরই প্রশংসা, আদর বা পুরস্কার প্রদান করুন। সন্তানকে ইতিবাচক কাজে ব্যস্ত রাখুন, নেতিবাচক কাজ করার প্রবণতা কমে যাবে। বাসার নিয়ম সুনির্দিষ্ট করুন। দৃঢ় ও পরিষ্কারভাবে সবাইকে তা জানিয়ে দিন এবং সবার জন্য একই রকম নিয়ম বজায় রাখুন। ওপরের কাজগুলো করার পরও যদি নেতিবাচক আচরণ করে তাহলে টাইম আউট কৌশলটি ব্যবহার করুন। যে পরিস্থিতিতে সন্তান কাজটি করছে তাকে সে পরিস্থিতি থেকে সরিয়ে যেখানে তার কিছুই করার নেই, সেখানে রাখুন। তবে সেখানে নেওয়ার আগে তাকে সতর্ক করুন। মুখভঙ্গিতে রাগ না রেখে এমন ভাব রাখুন যে, তার ‘টাইম আউট’ আপনি তাকে দিচ্ছেন না তার নিজের ভালোর জন্য। তবে ক্ষতি হতে পারে এমন স্থানে রাখবেন না। সব কথার শেষ কথা হলো, সন্তানের প্রতি নজর রাখুন। তার বেড়ে ওঠার দিনগুলোতে সঙ্গে থাকুন। আচার- আচরণ বিশ্লেষণ করুন। ভালো-মন্দ সম্পর্কে অবহিত করুন। সে কখনো বিপথে যাবে না।-সাপ্তাহিক এই সময়-এর সৌজন্যে।

শেয়ার করুন

0 comments:

পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়