জাকিয়া সুলতানা:
তবে কী ভারতের সবচেয়ে পুরনো ঐতিহ্যবাহী কংগ্রেস দলের সভাপতি পদে তরুণ রাহুল গান্ধীকেই মনোনীত করা হচ্ছে? এই নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে কংগ্রেসের রাজনীতি সরগরম। বেশকিছু দিন ধরেই রাহুলকে দলের সর্বোচ্চ পদে বসানো নিয়ে কংগ্রেসের একটি অংশ থেকে দাবি তোলা হচ্ছে। তবে জনার্দন দ্বিবেদী, আহমেদ প্যাটেল, সি পি যোশীর মতো কংগ্রেসের প্রবীণ নেতাদের অনেকেই প্রকাশ্যেই রাহুলের নেতৃত্বের বিরোধিতা করছেন। তাদের মতে, সোনিয়া গান্ধীর নেতৃত্বেই আবার ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব। এছাড়া রাহুলের পক্ষে দল ও দলের বাইরে সম্ভাব্য শরিকদের নিয়ে পথচলাও সম্ভব নয়। বরং ২০০৩ সালের মতো আরো একবার জাতীয় স্তরে ধর্মনিরপেক্ষ জোট গড়ার ক্ষমতা আছে একমাত্র সোনিয়া গান্ধীরই। নতুবা দলের নেতৃত্বে আসতে পারে প্রিয়াঙ্কা ভদ্র।
তবে দিগি¦জয় সিংয়ের মতো অনেক প্রবীণ নেতা অবশ্য দলের ব্যাটন মা সোনিয়া গান্ধীর হাত থেকে রাহুলের হাতে যাওয়া নিয়ে একরকম নিশ্চিত। তার মতে, সোনিয়া গান্ধী ও রাহুল দুজনই দলের সম্মানীয় নেতা। তবে রাহুলকে দলের সভাপতি করা উচিত। আমি দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি যে, রাহুল সহসভাপতির দায়িত্ব ভালোভাবেই পালন করেছেন। তাই আমার বিনীত অনুরোধ যে, কংগ্রেস নেতৃত্ব এবং সোনিয়া গান্ধী ওয়ার্কিং কমিটির দায়িত্ব রাহুলের হাতে তুলে দিন।’
সেই সঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, কংগ্রেস সবসময়ই তরুণদের নেতৃত্বে আনতে উৎসাহ দিয়ে এসেছে। জওহরলাল নেহেরু ৩৮ বছর বয়সে দলের সভাপতি হয়েছিলেন। আর মাওলানা আজাদ দায়িত্ব নিয়েছিলেন ৩৫ বছর বয়সে। ৬৮ বছরের সোনিয়া গান্ধী দীর্ঘ সময় ধরেই দলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৮ সালের মার্চে তিনি এই দায়িত্ব নিয়েছিলেন। তবে গত কিছুদিন ধরেই তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে ৪৪ বছরের রাহুল গান্ধীকে ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে কংগ্রেসের সহসভাপতি করা হয়েছিল। তার পর থেকেই কংগ্রেসের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব তিনি পালন করে আসছেন।
ভারতের জাতীয় কংগ্রেস দলের সভাপতি সোনিয়া গান্ধী ও তার ছেলে দলের সহসভাপতি রাহুল গান্ধীর মধ্যে চমৎকার বন্ধন রয়েছে। কিন্তু প্রজন্মগত ব্যবধানের কারণে তারা সব সময় একই পথে চলেন না বলে মন্তব্য করেছেন দিগি¦জয় সিং।
তবে নির্বাচনে সাফল্য আনতে না পারায় কংগ্রেসের একটি অংশ তার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্নও তুলেছেন। উল্লেখ্য, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত কমপক্ষে দশটি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছে ভারতের সবচেয়ে প্রাচীন দল কংগ্রেস।
ওই অংশটি অবশ্য দলের নেতৃত্বে প্রিয়াঙ্কাকেই দেখতে চান। কিন্তু প্রিয়াঙ্কা যে এ ব্যাপারে আগ্রহী নয় সেটা বারবার জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপির কাছে নির্বাচনে শোচনীয় পরাজয়ের পর কংগ্রেসের সহ-সভাপতির দায়িত্ব থেকে রাহুল গান্ধীকে সরানোর বিষয়টি জোরালো হয়। সেই সঙ্গে সবার দৃষ্টির কেন্দ্রবিন্দুতে আসেন প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। সম্প্রতি উত্তর প্রদেশের এলাহাবাদ শহরের দেয়ালে একটি পোস্টারে দেখা যায়, যেখানে লেখা ছিল ‘কংগ্রেস কা মুন, প্রিয়াঙ্কা ইজ কামিং সুন।’ অর্থাৎ কংগ্রেস দলে চাঁদের আবির্ভাব হচ্ছে, কারণ প্রিয়াঙ্কা শিগগিরই দলে আসছেন।
তবে এরই মধ্যে রাহুল তৃণমূল স্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক করে দল গোছানোর কাজ শুরু করে দিয়েছেন। দলের সর্বোচ্চ দায়িত্ব নেওয়ার জন্যই তিনি তৈরি হচ্ছেন বলে রাজনৈতিক মহলের অভিমত।
এদিকে গত লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে সারা দেশেই কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা নিম্নগামী। লোকসভা নির্বাচনের পর বিভিন্ন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে যেখানে যেখানে রাহুল গান্ধীর প্রচারাভিযান জোরদার হয়েছে সেখানেই কংগ্রেসের ভোট লক্ষ্যণীয়ভাবে কমেছে। এমনকি সম্প্রতি দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে একটি আসনও জোটেনি কংগ্রেসের কপালে।
রাজনৈতিক মহলের জল্পনা, নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার গুছিয়ে নিতে এবার আটঘাট বেঁধে নামতে চাইছেন তিনি। কংগ্রেসের লাগাতার পতনের জন্য দলের একাংশের মধ্যে যতই ৪৪ বছরের যুবরাজের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জন্ম নিক না কেন, এখনো কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা রাহুলের ওপরই ভরসা রাখতে চাইছেন।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আগামী এপ্রিলে সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির অধিবেশনে রাহুলকে সভাপতি পদে দায়িত্ব দেওয়া হবে। প্রস্তুতি হিসেবে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন তিনি। অল ইন্ডিয়া কংগ্রেস কমিটির সভায় রাহুল গান্ধী তার মা সোনিয়া গান্ধীর কাছ থেকে দলের প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব বুঝে নেবেন বলে জানা গেছে।
----ঢাকা টাইমস
খবর বিভাগঃ
দেশের বাইরে
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়