ইব্রাহিম খলিল:
চসিক নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ঘোষণার পর বিএনপির প্রার্থী কে হচ্ছেন চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে এটিই এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক মহল ও সাধারণ মানুষের ভেতরেও চলছে এ আলোচনা।
বিএনপির প্রভাবশালী নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান ও আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমে মেয়র প্রার্থী হতে আগ্রহী নন বলে জানালে এই আলোচনা আরও জোরালো হয়ে উঠে।
শুধু তাই নয়, চসিক নির্বাচনে দলের প্রার্থী কে হচ্ছেন তাও বলতে পারছেন না প্রভাবশালী এ দুই নেতা। এ সুবাদে বর্তমান মেয়র মনজুর আলম প্রার্থী হওয়ার আগ্রহ নিয়ে দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন নেতাদের কাছে।
বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, মেয়র পদে নির্বাচন করার কোনো চিন্তা-ভাবনাই আমার নেই। কেউ করলে আমি সমর্থন দেবো।
বিএনপির নগর কমিটির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমি সংসদীয় রাজনীতিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করি। স্থানীয় সরকার নির্বাচন করার কোনো আগ্রহ নেই আমার।
দলে যাদের মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে ভাবা হচ্ছে তাদের অনেকেই অসংখ্য মামলার আসামি।দলের মহানগর কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি আবু সুফিয়ান, সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদাত হোসেন ও উত্তর জেলা সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরীসহ প্রত্যেকের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এর মধ্যে প্রথম দুইজন আত্মগোপনে। তৃতীয়জন রয়েছেন কারাগারে।
এরকম জটিল পরিস্থিতিতে আলোচনায় বারবার ঘুরে ফিরে আসছে বর্তমান মেয়র মনজুর আলমের নাম। তাকে দ্বিতীয় মেয়াদে বিএনপির সমর্থন দেওয়া হতে পারে। বিএনপি নেতাদের অনেকেই মনে করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর চেয়ে মনজুর আলম এগিয়ে আছেন।
মনজুর আলমকে প্রার্থী করা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, মনজুরকে প্রার্থী করলেই ভালো হবে। আওয়ামী লীগে অনেক ভাগ। তাদের জোড়া লাগবে না। ঘোষিত মেয়র প্রার্থী নিয়েও অনেক কথা আছে। সেইসব পরে বলবো। তবে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করলে আমার অংকে মনজুর জিতে যাবে।
মেয়র হিসেবে মনজুর যতটা সফল হওয়ার কথা ততটা যে হতে পারেননি এ বিষয়ে নাগরিকদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে-এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নোমান বলেন, বিরোধীদলের মেয়র হিসেবে তার জন্য আমাদের আমলের মতো সরকার কোনো থোক বরাদ্দ দেয়নি। তারপরও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাস্তাঘাটের উন্নয়ন হয়েছে তার আমলে।
সাবেক মেয়র মহিউদ্দিনের আমলে করপোরেশনকে আওয়ামী লীগের কার্যালয় বানানো হয়েছিল। মনজুর আমলে করপোরেশন ছিল নাগরিকদের জন্য উন্মুক্ত। এদিকে আবদুল্লাহ আল নোমানের মতো বর্তমান মেয়র মনজুর আলমের প্রতি আমীর খসরু মাহমুদের সমর্থনের স্পষ্ট কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে না। আমীর খসরু জোর দিচ্ছেন কেন্দ্রের ওপর।
এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, প্রার্থী নিয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এর বাইরে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে কি না এ ব্যাপারেও কোনো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি। নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত আসার পর আলোচনা করে প্রার্থী নিয়ে সিদ্ধান্ত নিলেই কেবল বলা যাবে।
নিজের সিদ্ধান্ত ও মতামত জানতে চাইলে মেয়র মনজুর আলম ঢাকাটাইমসকে বলেন, প্রার্থী হওয়া নিয়ে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সাথে আমার যোগাযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে গতরাতেও আমির মাহমুদ চৌধুরীর সাথে বাসায় দেখা করেছি। তাদের সমর্থনও রয়েছে আমার প্রতি।
তিনি বলেন, নির্বাচনে ভেতরে বাইরের সমর্থন বলে কিছু কথা আছে। এক্ষেত্রে দলের বাইরে ছাড়াও ভেতরে ভেতরে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক মহলের সমর্থনও রয়েছে আমার প্রতি। যা নিয়ে প্রার্থী হলে জয় আমারই হবে এটা নিশ্চিত।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জুন মাসের মেয়র নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন কাট্টলী ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর মনজুর আলম। সেই নির্বাচনেই তিনি তার গুরু মহিউদ্দিনকে প্রায় এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়ে সবাইকে চমকে দেন।
গত নির্বাচনে মনজুরকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেয়ে তিন মেয়াদের মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী বেশ উৎফুল্লই ছিলেন। অনেকটা নির্ভার হয়েই তিনি ঘনিষ্ঠদের বলেছিলেন কয়েক লাখ ভোটের ব্যবধানে জিতবেন। তার জেতা না জেতা নিয়ে কোটি টাকার বাজিও ধরেছিলেন চট্টগ্রামের শিল্পপতি।
-- ঢাকাটাইমস
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়