ঢাকা: বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া জেলে গেলে বিকল্প নেতৃত্বের অধীনে চলমান অবরোধসহ অসহযোগ আন্দোলনের মতো আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি দেয়ার পরিকল্পনা পাকা করে রেখেছে ২০ দলীয় জোট।
জোটের নেতারা বলেছেন, সরকার যত কঠোরই হোক না কেন কোনো ফলাফল ছাড়া তারা চলমান আন্দোলন থেকে সরে আসবেন না।
খালেদার ঘনিষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, তাদের নেত্রী ইতোমধ্যেই নিজের অনুপস্থিতিতে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ থেকে শুরু করে বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন, জেলা ও তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদেরও আন্দোলনের দিকনির্দেশনা দিয়ে দিয়েছেন।
বিএনপির ওই নেতা বলেন, দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে মিলে খালেদা নিজের অনুপস্থিতিতে আন্দোলন ও দল পরিচালনার একটি পরিকল্পনা তৈরি করেছেন।
পরিকল্পনা মোতাবেক খালেদাকে গ্রেপ্তারে তার কার্যালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা প্রবেশ করা মাত্রই তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেবেন। আর বর্তমান সরকারের পতনের আগ পর্যন্ত তা অব্যাহত থাকবে।
খালেদার অনুপস্থিতিতে তারেক রহমান লন্ডন থেকে ফোনে দলকে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেবেন। আর বিএনপির দলীয় সংবিধানেও বলা আছে চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানই দলের প্রধান হিসেবে ভূমিকা পালন করবেন।
এছাড়া দল ও আন্দোলনের সার্বিক কর্মকাণ্ডের দেখভাল করার জন্য আর এ গনি, তরিকুল ইসলাম, এএসএম হান্নান শাহ, নজরুল ইসলাম খান এবং ড. আব্দুল মঈন খানদের মতো সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে একটি আন্দোলন সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। তরিকুল ইসলামকে ওই কমিটির প্রধান করা হবে। তিনি গ্রেপ্তার হলে আর এ গনি বা নজরুল ইসলাম তার স্থলাভিষিক্ত হবেন। জোটের অন্যান্য দলগুলোর জন্যও খালেদা কিছু দিকনির্দেশনার একটি খসড়া তৈরি করে দিয়েছেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, সরকার আমাদের আন্দোলন বানচালের জন্য যত দমন-পীড়নই চালাক না কেন তা সরকারের জন্যই বুমেরাং হয়ে দাঁড়াবে এবং চলমান সংকটকে আরো ঘনীভূত করবে। সরকার দেশের বড় বড় নাগরিক এবং বিদেশি শুভাকাঙ্ক্ষীদের কথায়ও কোনো কান দিচ্ছে না।
মাহবুব বলেন, বিএনপি অনেক বড় দল। সুতরাং খালেদাকে গ্রেপ্তার করা হলেও আরো অনেক নেতাই আছেন নেতৃত্ব দেয়ার জন্য। সুতরাং খালেদাকে গ্রেপ্তারেও আন্দোলন বন্ধ হবে না।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পরও বিএনপি প্রধান তার অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসেননি। দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি জাতির জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছেন; নিপীড়ন ও জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন। তিনি এবারও গণতন্ত্র ও জাতির জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত রয়েছেন। গ্রেপ্তার হতে তার কোনো ভয় নেই।
মাহবুব বলেন, খালেদার গ্রেপ্তারের পর বিএনপির সিনিয়র নেতাদের দিকনির্দেশনা ও নেতৃত্বে চলমান আন্দোলন আরো চাঙ্গা হবে।
জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা নিয়ে খালেদা একটুও উদ্বিগ্ন নন। কারণ গত প্রায় দুই মাস ধরেই তিনি বন্দী আছেন।
উল্লেখ্য, শিরিন সুলতানাও গত ৩ জানুয়ারি থেকে খালেদার সঙ্গে তার গুলশানের কার্যালয়ে অবরুদ্ধ আছেন।
শিরিন বলেন, আমাদের নেত্রী নিজের গ্রেপ্তারের পর আন্দোলন ও দল পরিচালনার পূর্ণ দিকনির্দেশনা দিয়ে গেছেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৫ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফ্যানেজ এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থ আত্মসাতের মামলায় খালেদা জিয়াসহ মামলার আরো দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। অন্যদিকে, বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা আরেকটি মামলায় গত রবিবার আরেকটি আদালত বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে তল্লাশির আদেশ দিয়েছে।
খবর বিভাগঃ
রাজনীতি
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়