মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ:
আল্লাহ্ রাব্বুল আ’লামিনের করুণা সম্ভার অগণন ও অপরিমেয়। তিনি বলেন “যদি আল্লাহ্র নিয়ামত গণনা কর, তবে তা গুণে শেষ করতে পারবে না” (ইব্রাহিম: ৩৪)। আমাদের শরীর ও অঙ্গ-প্রতঙ্গ কতই না দামি—দুর্লভ এবং আমাদের সুস্থতা আল্লাহ্র বিশেষ নিয়ামত। তাই প্রিয়নবী (স.) স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন ‘মানুষ দু’টি নিয়ামতের ব্যাপারে বড়ই উদাসীন তা হলো সুস্থতা ও অবসর’ (বুখারি)।
সুস্থ শরীর ও সুন্দর মন পরস্পর পরিপূরক। ইসলাম একটি সুস্থ-সক্ষম মানবগোষ্ঠীর ধারণা দেয়। শারীরিক সক্ষমতার সঙ্গে নামাযের সামর্থ্য প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ্ বলেন ‘তোমরা আল্লাহেক স্মরণ কর, দাঁড়িয়ে, বসে এবং শুয়ে’ (নিসা: ১০৩)। রমজানের রোজা পালন থেকেও অসুস্থ ও মুসাফিরকে অবকাশ দিয়ে বলা হয়েছে ‘রুগ্ন বা মুসাফির যদি কেহ রয়/পালন করিও রোজা অন্য সময়’ (কাব্যানুবাদ, বাকারা: ১৮৪)। অনুরূপ হজ্বের বিধান সম্পর্কে বলা হয়েছে ‘বায়তুল্লাহ’য় হজ্ব করা ফরজ তারই জন্য, যে সেখানে পৌঁছার (দৈহিক-আর্থিক) সামর্থ্য রাখে’(আল-ইমরান: ৯৭)।
ইসলাম নিথর-নির্জীব জীবনবোধের স্থলে ইবাদতের মাধুর্যে শরীর-স্বাস্থ্যের বিকাশকে উত্সাহ দেয়। স্বাস্থ্য সুরক্ষা, রণ নৈপুণ্যের প্রয়োজনে তীর নিক্ষেপ, বর্শা চালনা, দৌড় প্রতিযোগিতা ইত্যাদিকে ইসলাম সমর্থন করে। প্রিয়নবী (স.) বলেন, ‘ঘোড়া অথবা তীর নিক্ষেপ অথবা উটের প্রতিযোগিতা ব্যতীত (ইসলামে) অন্য প্রতিযোগিতা নেই’ (তিরমিযি)। প্রিয়নবী (স.) আরো বলেন, ‘যে ব্যক্তি তীর চালনা শেখার পর তা ছেড়ে দেয় সে আমার দলভুক্ত নয়... ’ (মুসলিম)। প্রিয়নবী (স.) আরো বলেন, ‘তোমাদের জন্য তীর নিক্ষেপ শিক্ষা করা কর্তব্য। কেননা, এটা তোমাদের জন্য একটি উত্তম খেলা’ (ফিকহুস্ সুন্নাহ্, ২য় খ. পৃ ৬০)। হযরত ইবনু ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত ‘রাসুল (স.) হাফইয়া থেকে সানিয়াতুল বিদা পর্যন্ত সীমানার মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঘোড়াসমূহের দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠান করেছেন। স্থান দু’টির দূরত্ব ছিল ছয় মাইল’ (বুখারি-মুসলিম)। বর্ণিত আছে ‘হযরত আলীর (রা.) দৌড়ের গতি ছিল খুব বেশি’। তাই তো দেহ মনের আনন্দের প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে হযরত আলী (রা.) বলতেন, ‘অন্তরকে কাজের ফাঁকে ফাঁকে অবকাশ ও শান্তি দান কর। কেননা, অন্তরের অস্বস্তি অন্তরকে অন্ধ করে ফেলে’।
ঈদের আনন্দ প্রকাশে রণ কৌশল প্রদর্শন একটি ইসলামি ঐতিহ্য। আরবের ‘হাবশি’দের এমন প্রদর্শনী প্রিয়নবী (স.) পছন্দ করতেন, হযরত আয়েশাকে (রা.) নিয়ে এমন প্রদর্শনী দেখে বললেন ‘হ্যাঁ, এটা খুবই উত্তম আনন্দ... ’(বুখারি)। ঈদের আনন্দ প্রকাশের জন্য রণ কৌশল প্রদর্শনকে ‘তাগ্লীস’ বলা হয়। অর্থাত্ দফ বাজানো, তরবারি চালনা, বল্লম চালনা ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে হযরত কায়েশ বিন সায়াদ (রা.) বলেন ‘রাসুলের (স.) যুগের যেসব বস্তু ছিল, সেগুলোর সবই আমি এখনো দেখছি... শুধু ‘তাগলীস’ ছাড়া’ (ইবনু মাজাহ)।
বর্তমানে প্রচলিত খেলাধুলায় ইসলামি মূল্যবোধের প্রতিফলন প্রায়ই পরিলক্ষিত হয় না। যদিও অনেক সময় দেখা যায় অনেক ক্রীড়াবিদ নিজের কৃতিত্বে সিজদায় লুটিয়ে পড়েন অথবা সমর্থকগণ দলের সাফল্য কামনায় মুনাজাত করেন। অথচ এসবের আড়ালে ইবাদতের আবেগের চেয়েও জাগতিক উল্লাস থাকে বেশি। তাই যেসব খেলার মধ্যে জীবনের ঝুঁকি, নামাযের প্রতি অবহেলা, অন্য ধর্মের অনুসরণ, সময় ও অর্থের অপচয়, জুয়া-বাজিধরা, রঙখেলা, গ্যালারিতে উদ্দাম নৃত্য-গান, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, উল্কী আঁঁকা ইত্যাদির বাহুল্য থাকে, তা একজন ঈমানদারের জন্য অশোভনীয়। কেননা, শরীর-স্বাস্থ্যের বিকাশের যেসব কাজকর্মের মাধ্যমে ফরজ লঙ্ঘন অথবা হারামের অনুষঙ্গ তৈরি হয় ঐসব কিছুই ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম ও কবিরা গুনাহ্।
লেখক : বিভাগীয় প্রধান, ইসলামিক স্টাডিজ, কাপাসিয়া ডিগ্রি কলেজ, গাজীপুর
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়