ঢাকা: রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল পানির ট্যাঙ্কি এলাকা থেকে এক তরুণীর ৭ টুকরা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তারকৃতদের বরাত দিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহতের নাম সুমি। হত্যার আগে সুমিকে লোহার আঙটার সাথে নাইলনের রশি দিয়ে হাত-পা বেধে ফেলে। পরে কাগজ মুড়িয়ে স্কসটেপ পেঁচিয়ে বল বানিয়ে ওই বল সুমির মুখের ভেতর ঢুকিয়ে র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোবারক উল্লাহ মন্টি তাকে জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করায়।
সোমবার বেলা পৌনে ১২ টায় ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ রাজধানীর মতিঝিল থানার ফকিরাপুল এলাকায় সংঘঠিত সুমি হত্যাকা-ের রহস্য উম্মোচনের দাবি করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানায় ডিবি। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মো. সাইদুল ইসলাম (২৭), হানিফ (২৬), রাতুল আহমেদ (২৩), নুরুন্নবী শাওন (১৯), মো. সুজন (২৩), মো. সুমন ওরফে তোতলা সুমন (২৪)।
এসময়ে তাদের কাছ থেকে একটি ছুরি, একটি চাপাতি, একটি কাগজের তৈরি বল, একটি কাঠের গুড়ি (খাইট্রা), একটি কেরাসিন তেলের বোতল ও আসামিদের রক্তমাখা প্যান্ট শার্ট উদ্ধার করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, নিহত সুমি হত্যকা-ের ঘটনায় মতিঝিল থানায় দায়েরকৃত মামলাটি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবির) কাছে হস্তান্তর হওয়ার পরে ঘটনার সাথে জড়িত ৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদের মধ্যে ৪ জন সাইদুল ইসলাম, হানিফ, রাতুল আহমেদ ও নুরুন্নবী শাওন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
আসামিদের জবানবন্দি থেকে জানা যায়, ফকিরাপুল এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ সুজন, রাতুল, শাওন, আলম, তোতলা সুমন, বাংলা সোহেল, হানিফ, কালু ও কাননদের দলনেতা সাইদুলের নেতৃত্বে ইয়াবা ও হেরোইনের ব্যবসা করে আসছে। এরা প্রত্যেকেই রবিবার র্যাবের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত মোবারক উল্লাহ মন্টির বাসার ছাদে বসে নিয়মিত ইয়াবা সেবন করত। নিহত সুমি তাদের পূর্ব পরিচিত। সাইদুল ও মন্টিকে কয়েকবার ইয়াবাসহ সুমি পুলিশে ধরিয়ে দেয়। এই ঘটনার পর থেকে সাইদুল ও মন্টির সাথে সুমির বিরোধের সৃষ্টি হয়। সুমি হত্যকা-ের ৪-৫দিন আগে তার স্বামী নাসিরকে ইয়াবাসহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে। ভ্রাম্যমান আদালত তাকে এক বছরের সাজা দেয়। এর জন্য সাইদুল, মন্টি, সুজন ও হানিফ দায়ি বলে নিহত সুমী বিভিন্ন লোকের কাছে বলে বেড়ায়।
যুগ্ম কমিশনার আরো বলেন, গত ৯ মার্চ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টায় সুজন, রাতুল, শাওন, আলম, তোতলা সুমন, বাংলা সোহেল, হানিফ, সাইদুল মিলে মন্টির বাসার ছাদের উপরে বসে ইয়াবা সেবন করছিল। নিহত সুমি তখন ওই বাড়ির নিচে হাটাহাটি করছিল। সুজন উপর থেকে সুমিকে দেখে ফেলে এবং সাইদুলকে বলে সুমি পুলিশ নিয়ে আমাদের ধরাইতে আসছে। এক পর্যায়ে সুজন, হানিফ, শাওন, সাইদুল নিচে নেমে সুমিকে ধরে ফেলে ছাদের উপরে নিয়ে যায়। সবাই মিলে সুমিকে লোহার আঙটার সাথে নাইলনের রশি দিয়ে বেধে সুজন কাগজ মুড়িয়ে স্কসটেপ দিয়ে পেঁচিয়ে বল তৈরি করে। ওই বল সুমির মুখের ভেতর ঢুকিয়ে জোরপূর্বক ইয়াবা সেবন করায়। রাত আনুমানিক আড়াইটা থেকে ৩ টার সময় সুমিকে সাইদুল ও সুজন ধারালো ছুরি দিয়ে গলা কেটে হত্যা করে। প্রত্যেকেই সুমিকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে সোহেল সুমির হাত ওয়াসার খালি জায়গায় ফেলে দেয়। সুজন সুমির পা হোটেল উপবনের উপর থেকে বাসার চিপায় ফেলে দেয়। মন্টি সুমির মাথা কেরোসিন তেল এনে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে সবাই মিলে চাদর দিয়ে সুমির লাশ পেঁচিয়ে ষষ্ঠ তলার ছাদ থেকে ওয়াসার টিনসেড ঘরের টিনের উপর ফেলে দেয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের উপ-কমিশনার মো. জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের উপ-কমিশনার মো. মাসুদুর রহমান, ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পূর্ব বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার খন্দকার নুরুন্নবী।
খবর বিভাগঃ
সারাদেশ
0 comments:
পাঠকের মতামতের জন্য কানাইঘাট নিউজ কর্তৃপক্ষ দায়ী নয়